জুমবাংলা ডেস্ক : স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণ ব্যবস্থার আওতায় জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয়ের ফলে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) দুই হাজার ৫০ কোটি টাকা লাভ করেছে বলে জানিয়েছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। তবে মধ্যপ্রাচ্যে ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের প্রভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বেড়েছে। এতে আগামী অর্থবছরে বিপিসির মুনাফার পরিমাণ কমে ৬১৫ কোটি টাকায় নেমে আসবে বলেও পূর্বাভাস দিয়েছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থাটি।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে আয়োজিত ‘২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত : জ্বালানি রূপান্তরের অগ্রাধিকারের প্রতিফলন’ শীর্ষক সংলাপে এসব তথ্য জানায় সিপিডি।
অনুষ্ঠানে ভোক্তাদের নিয়ে কাজ করা সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা এম শামসুল আলম, সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেমসহ খাতসংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিশেষজ্ঞরা বক্তব্য দেন। সংলাপে ভার্চুয়ালি অংশ নেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির গবেষণা সহযোগী হেলেন মাশিয়াত প্রিয়তি।
সিপিডি জানায়, শুধু বিপিসি নয়, পেট্রোবাংলার অধীন দুটি প্রতিষ্ঠান বাপেক্স ও আরপিজিসিএল ২০২৪-২৫ অর্থবছরে লাভ করেছে।
গবেষণা প্রতিষ্ঠানের হিসাব অনুযায়ী, বাপেক্সের মুনাফা হয়েছে ১৩৭ কোটি টাকা এবং আরপিজিসিএলের মুনাফা ৪১ কোটি টাকা। শিল্প খাতে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির ফলে এই অর্জিত হয়।
সিপিডির পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বাপেক্সের মুনাফা বেড়ে ২৫৮ কোটি এবং আরপিজিসিএলের মুনাফা ৪৯ কোটি টাকায় পৌঁছতে পারে। এলএনজি আমদানিতে ভ্যাট মওকুফ এবং গ্যাসের দাম আরো বাড়ার সম্ভাবনার মুখে এমন প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
অন্যদিকে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) বিপুল লোকসানের মুখে রয়েছে। সিপিডি বলছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বিপিডিবির লোকসান হয়েছে আট হাজার ৮০৩ কোটি টাকা এবং আগামী অর্থবছরে লোকসান বেড়ে ৯ হাজার ৪৩ কোটি টাকায় দাঁড়াতে পারে।
প্রবন্ধ উপস্থাপনায় বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকারের যে রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষা তিনটি শূন্য (শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব ও শূন্য নেট কার্বন নিঃসরণ)। সেদিক বিবেচনায় আমরা ২.৫০ শূন্যে দাঁড়িয়েছি। কারণ আমাদের বাজেট জ্বালানি খাতে কয়লার নির্ভরতার কথা বলছে, এলএনজি আমদানির কথা বলছে।
খুব বেশি নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে প্রাধান্য দেওয়া হয়নি। নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে কোনো ধরনের প্রণোদনা দেওয়া হয়নি। এসব যখন আমরা দেখছি, তখন বলতে হচ্ছে শূন্য নেট কার্বন নিঃসরণের ক্ষেত্রে বর্তমান সরকার উল্টো পথে হাঁটছে। যেখানে এক পা এগিয়ে যাওয়ার কথা ছিল, সেখানে এক পা পিছিয়ে যাচ্ছে। আমরা এগিয়ে যেতে পারতাম যদি বাজেটে প্রো-ফসিল ফুয়েল না হয়ে প্রো-রিনিউয়েবল ফুয়েল হতো।
সংলাপে সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘আমরা সবাই অবগত যে এই বাজেটটি বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ও পরবর্তী নির্বাচিত সরকার বাস্তবায়ন করবে। এর রাজনৈতিক গুরুত্ব অনেক বেশি। বাজেটে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে। বিগত সরকারের সময় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে যে বিপুল পরিমাণে বিনিয়োগ হয়েছে, তার বিপরীতে হয়তো জ্বালানি প্রাপ্যতা বেড়েছিল। কিন্তু একই সঙ্গে আমরা দেখেছি, গুণমানসম্পন্ন বিদ্যুৎ-জ্বালানি পাওয়া বা জ্বালানি রূপান্তরের বিষয়গুলো নিশ্চিত হওয়া, সেই কাজগুলো হয়নি। বরং এই সময়গুলোতে ব্যাপক লুটপাট হতে দেখেছি। অর্থের অপচয় হতে দেখেছি, সুশাসনের অভাবের মতো বড় সমস্যা বিগত সরকারের আমলে দেখেছি।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রত্যাশা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সুশাসন এবং দুর্বলতাগুলো অন্তর্বর্তী সরকার চিহ্নিত করবে। জ্বালানি রূপান্তরের জায়গায় কার্যকর ভূমিকা নেবে, নীতি কাঠামোতে তারা আরো বেশি ভারসাম্য ও দীর্ঘমেয়াদি টেকসই জ্বালানির বিষয়টি গুরুত্ব দেবেন।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।