কোপার্নিকাস, টাইকো ও গ্যালিলিও জ্যোতির্বিজ্ঞানের তিন উজ্জ্বল নক্ষত্র। আধুনিক পর্যবেক্ষণমূলক জ্যোতির্বিজ্ঞানের জনক টাইকো ব্রাহে। কোপার্নিকাসের মৃত্যুর তিন বছর পর ১৫৪৬ খ্রিষ্টাব্দে টাইকো ব্রাহের জন্ম। ১৫৭৬ খ্রিষ্টাব্দে ডেনমার্কের রাজপরিবার আকাশ পর্যবেক্ষণের জন্য টাইকোকে বাল্টিক সাগরের ভেন দ্বীপে জায়গা দেন। সেখানেই তিনি উরনিবর্গ মানমন্দির স্থাপন করেন। জ্যোতির্বিজ্ঞানের ইতিহাসে এটি টাইকোর মানমন্দির নামে পরিচিত। খালি চোখে আকাশ পর্যবেক্ষণের এটিই ছিল সর্বশেষ মানমন্দির।
টাইকো ১৫৭২ খ্রিষ্টাব্দে ক্যাসিওপিয়া মণ্ডলে একটি নবতারা আবিষ্কার করে খ্যাতি পান। রাজার সম্পূর্ণ অনুদানে মানমন্দিরটি নির্মিত হয়। প্রতিদানে তিনি রাজকীয় পরিবারের জন্য জ্যোতিষশাস্ত্র এবং পঞ্জিকা প্রণয়নের কাজ করেন। টাইকো পরের ২২ বছর অতিবাহিত করেন এই দ্বীপেই। তিল তিল সাধনা, অধ্যবসায় ও পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে সেখানে তিনি গড়ে তোলেন বিশাল একটি মানমন্দির।
টাইকোর তত্ত্বাবধানে একজন জার্মান স্থপতি মানমন্দিরটি গড়ে তোলেন। স্ক্যান্ডিনেভীয় স্থাপত্যবিদ্যার চূড়ান্ত নিদর্শন রয়েছে এ মানমন্দিরে। সেখানকার গ্রন্থাগারে ছিল পাঁচ ফুট ব্যাসের পিতলের তৈরি একটি নভোগোলক। এর গায়ে দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে তিনি একে একে মহাকাশের স্থির তারকারাজির অবস্থান খোদাই করেন।
ছয় ফুট ব্যাসের কাঁসার তৈরি ম্যুরাল কোয়াড্রেন্ট, সেক্সট্যান্ট, অসংখ্য ঘড়ি, সানডায়াল ও অন্যান্য যন্ত্রপাতিতে সমৃদ্ধ ছিল মানমন্দিরটি। এই মানমন্দিরে বসে তালিকা প্রণয়নসহ ১৫৭৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি একটি ধূমকেতু আবিষ্কার করেন। পরে উরনিবর্গের পাশেই স্টারবার্গ নামের আরেকটি মানমন্দির গড়ে তোলেন তিনি। এর যন্ত্রপাতি সবই মাটির নিচে বসানো ছিল।
এ ছাড়া বেনাটেক দুর্গে নির্মাণ করেন উরনিবর্গের মতোই আরেকটি উন্নত মানের মানমন্দির। এবার তিনি সহকারী হিসেবে পান সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ জ্যোতির্বিজ্ঞানী জোহান কেপলারকে।
টাইকো মৃত্যুবরণ করেন ১৬০১ সালে। মৃত্যুর পর কেপলার গুরু টাইকোর পর্যবেক্ষণলব্ধ তথ্যের সঙ্গে নিজের পর্যবেক্ষণ জ্ঞান প্রয়োগ করে গ্রহের চলাচল বিষয়ে তিনটি সূত্র আবিষ্কার করেন। সূত্রগুলো বর্তমানে কেপলারের বিধি বা সূত্র নামে পরিচিত। টাইকোর মৃত্যু খালি চোখে আকাশ পর্যবেক্ষণ যুগের পরিসমাপ্তি ঘটে। শুভসূচনা হয় দুরবিনের চোখে আকাশ পর্যবেক্ষণ যুগের।
গ্যালিলিও গ্যালিলি এমন একজন মহান জ্যোতির্বিজ্ঞানী, যিনি দুরবিন ব্যবহার করে কোপার্নিকাসের সূর্যকেন্দ্রিক বিশ্বমডেলের পক্ষে প্রথম পর্যবেক্ষণমূলক প্রমাণ উপস্থাপন করেন। ১৬০৯ খ্রিষ্টাব্দে আকাশ পর্যবেক্ষণের জন্য তিনি বেছে নিয়েছিলেন তাঁরই কর্মস্থল ইতালির পাদুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সুউচ্চ ভবন বা টাওয়ারকে। ইতিহাসের পাতায় এই টাওয়ারটিই গ্যালিলিওর মানমন্দির নামে পরিচিত।
একটা কথা খুব প্রচলিত, গ্যালিলিওই প্রথম দুরবিন আবিষ্কার করেন। এটা পুরোপুরি সত্য নয়। প্রথম দুরবিন আবিষ্কারের কৃতিত্ব হান্স লিপারশে নামের একজন ওলন্দাজ চশমা নির্মাতার। তবে আমরা এখানে সে বিতর্কে না গিয়ে এতটুকুই বলব যে গ্যালিলিওই প্রথম টলেমির ভূকেন্দ্রিক বিশ্বমডেলের বিপক্ষে পর্যবেক্ষণমূলক প্রমাণ উপস্থাপন করে জ্যোতির্বিজ্ঞানে বিপ্লব ঘটান।
১৬০৯ খ্রিষ্টাব্দে নিজের তৈরি দুরবিন দিয়ে গ্যালিলিও চাঁদের পাহাড়-পর্বত, উপত্যকা, সমভূমি ও জ্বালামুখ দেখেন। সূর্যের গায়ে দেখেন সৌরকলঙ্ক। কালপুরুষ মণ্ডলে দেখেন নতুন তারা, যেগুলো খালি চোখে দেখা যায় না। ছায়াপথে দেখেন অসংখ্য নক্ষত্র।
সবচেয়ে বড় আবিষ্কার করেন ১৬১০ খ্রিষ্টাব্দে। সেটি ছিল বৃহস্পতির চারটি উপগ্রহ আয়ো, ইউরোপা, গ্যানিমিড ও ক্যালিস্টো আবিষ্কার। উপগ্রহগুলো বর্তমানে ‘গ্যালিলিয়ান মুন’ নামে পরিচিত। পাশাপাশি দুরবিন দিয়ে তিনি দেখতে পান শনির বলয়ও। অবশ্য আকৃতি যে আসলে বলয়ের মতো, তা আবিষ্কার করেন ডাচ জ্যোতির্বিজ্ঞানী ক্রিশ্চিয়ান হাইগেন্স।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।