আন্তর্জাতিক ডেস্ক : রূপকথা যেন সত্যি হলো৷ আকাশ থেকে টাকা পড়লো কলকাতায়৷ একটি বাণিজ্যিক সংস্থার দফতরে হানা দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় শুল্ক দফতরের আধিকারিকেরা৷ সেই ভয়ে ফেলে দেওয়া হয় গোপনে জমানো টাকা৷ খবর ডয়চে ভেলের।
করফাঁকি কোনো নতুন বিষয় নয়৷ অনেক দেশেই রয়েছে এই প্রবণতা৷ ভারতও তার ব্যতিক্রম নয়৷ সেই ফাঁকির প্রবণতাই প্রকাশ পেলো একটি ঘটনায়৷ কলকাতার বেন্টিঙ্ক স্ট্রিটে বুধবার দুপুরে হঠাৎ দেখা যায়, একটি বহুতল থেকে টাকার বৃষ্টি হচ্ছে৷ ৫০০ ও দু হাজার টাকার নোট বাতাসে ভেসে ভেসে পড়তে থাকে নীচে৷ কৌতূহলী মানুষের ভিড় জমে যায় ওই ভবনের নীচে৷ আকাশ থেকে টাকা পড়া সম্ভব নয়, তাহলে এই টাকা আসছে কোথা থেকে?
কিছু সময় পর অবশ্য পুরো বিষয়টি খোলসা হয়৷ কেন্দ্রীয় শুল্ক দফতরের গোয়েন্দারা হানা দিয়েছিলেন ওই বহুতলে অবস্থিত একটি সংস্থার দপ্তরে৷ ডিরেক্টর অফ রেভিনিউ ইনটেলিজেন্স (ডিআরআই)-এর আধিকারিকরা ছয় তলায় বসেছিলেন৷ সেই সময় বেসরকারি সংস্থার কর্তাদের নির্দেশে দফতরের কর্মীরা শৌচালয় থেকে টাকা নীচে ফেলে দেন, যাতে কেন্দ্রীয় আধিকারিকরা দফতরে তল্লাশি চালিয়ে টাকা না পান৷ তাতেও অবশ্য শেষরক্ষা হয়নি৷ টাকা ছড়ানোর দৃশ্য জাতীয় সংবাদমাধ্যমেও সম্প্রচারিত হয়৷ শুল্ক দফতরের কেন্দ্রীয় কর্তারা সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি জানতে পারেন৷ ডিআরআই-এর আরো আধিকারিক ওই সংস্থায় যান৷ সব টাকা তার মধ্যে ফেলা সম্ভব হয়নি৷ তল্লাশিতে উদ্ধার হয় প্রায় আট লক্ষ টাকা৷
কেন্দ্রীয় সংস্থার সূত্র অনুযায়ী, নথিপত্র পরীক্ষা করতে ওই দফতরের হানা দিয়েছিলেন আধিকারিকরা৷ এই সংস্থাটি বিদেশে পণ্য রফতানি করে কর ছাড় নেয়, যদিও অনেক সংস্থা রফতানি না করেই নথিপত্রের কারচুপিতে ছাড়ের সুবিধা নেয়৷ এক্ষেত্রে সত্যিই পণ্য রফতানি হয়েছে কিনা, তা যাচাই করতে গোয়েন্দারা অভিযান চালিয়েছিলেন৷ তল্লাশির আগেই অবশ্য দফতরের কর্মীরা টাকা শৌচালয়ের জানালা দিয়ে নীচে ফেলতে থাকেন৷
আপাতদৃ্ষ্টিতে কৌতুকময় এই ঘটনার নেপথ্যে যে বড় সত্যি লুকিয়ে তা হলো, অন্যান্য দেশের মতো ভারতেও বাণিজ্যিক সংস্থা যেমন কর্পোরেট কর ফাঁকি দেয়, তেমনই ব্যক্তিগত করদাতারাও আয়কর না দিতে আয় গোপন করেন৷ এর ফলে দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, কালো টাকার পরিমাণ বাড়তে থাকে৷ সাম্প্রতিক অতীতে অবশ্য কর ফাঁকির প্রবণতা কমেছে বলে দাবি করলেন কর বিশেষজ্ঞ অর্ঘ্য মিত্র৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘একদিকে যেমন করের হার কমেছে, নজরদারি কঠোর হয়েছে বলে বাধ্য হয়ে কর দিতেও হচ্ছে৷ সফটওয়্যার অনেক উন্নত হয়েছে, তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছে৷ কম্পিউটারের ব্যাপক প্রয়োগের ফলে এটা সম্ভব হয়েছে৷’’
কঠোর ব্যবস্থার পাশাপাশি ফাঁকি রুখতে কর ব্যবস্থার সরলীকরণের কথাও বলেন বিশেষজ্ঞরা৷ ১৯৬১ সালে তৈরি ভারতীয় আয়কর আইনে জটিলতা আছে৷ তা দূর করার লক্ষ্যে ডাইরেক্ট ট্যাক্স কোড কমিটি ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে প্রস্তাব দিয়েছে৷ আগামী ফেব্রুয়ারির বাজেটে বোঝা যাবে, সরকার সেই প্রস্তাবের কতটা গ্রহণ করলো৷ এই কমিটির প্রস্তাব, প্রদেয় করের হার কম করা হোক৷ কর ছাড়ের জন্য যে নানাবিধ শর্ত দেওয়া হয়, তা তুলে দেওয়া হোক৷ এতে কর ব্যবস্থা সরল হবে৷ কর আদায় নিয়ে এত মামলা হবে না৷ অনেকেরই অভিযোগ, সরষের মধ্যেই ভূত আছে৷ আর্থিক সংস্থা পিয়ারলেসের সভাপতি (আইন) পতিতপাবন রায় বলেন, ‘‘আয়কর দপ্তর গ্রেপ্তার করতে পারে না৷ এর ফলে অনেকেই নিশ্চিন্তে থাকে৷ গ্রেপ্তার করতে পারলে বেশি চাপ থাকতো৷ এছাড়া স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে৷ কর ফাঁকি যে দিচ্ছে, তাকে চিহ্নিত করা গেলেও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না৷’’ টাকার বৃষ্টি সম্পর্কে তাঁর মন্তব্য, ‘‘এমন অনেকবারই হয়েছে৷ টাকা বাজেয়াপ্ত করলে সেই সংস্থার মানহানি হচ্ছে, কিন্তু শাস্তি হচ্ছে কি?’’
পশ্চিমবঙ্গে যেহেতু গুজরাট, মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু, কর্নাটকের মতো কর্পোরেট সংস্থার সদর দফতর বেশি নেই, তাই এ ক্ষেত্রে কর আদায়ও কম৷ অর্ঘ্য মিত্র বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে অন্যান্য জায়গার তুলনায় মাথাপিছু রোজগারও কম৷ তবে কর আদায় ভালোই হচ্ছে৷ সারা দেশে যেমন বেড়েছে, এখানেও বেড়েছে৷’’ বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, কর হার কমালে কর ফাঁকির প্রবণতা আরো কমবে, সরকারের ঘরে রাজস্ব আসবে বেশি, তাতে অর্থনীতির মঙ্গল হবে৷
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।