ফারুক তাহের, চট্টগ্রাম : ভারী বর্ষণের ফলে টানা চতুর্থ দিনের মতো কোমড় পানির নিচে চট্টগ্রাম নগর। গত শুক্রবার থেকে নগরের বিভিন্ন এলাকার রাস্তাঘাট, অলিগলি ও ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। রাস্তাঘাটে পানি জমে থাকায় নগরের অন্যতম প্রধান সড়ক সিডিএ অ্যাভিনিউসহ অনেক সড়কে কার্যত গাড়ি চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ ছিল।
গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে বৃষ্টিপাত শুরু হলে, শুক্রবার থেকে বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম নগরে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। ওই দিন সন্ধ্যা ও রাতের দিকে পানি নেমে গেলেও পরদিন শনিবার ভারী বর্ষণে আবার তলিয়ে যায়। রবিবার ২৪ ঘন্টায় ২১৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের কারণে আজ চতুর্থ দিনের মতো জলাবদ্ধতায় বন্দী হয়ে পড়েছে নগরের নিম্নাঞ্চলের মানুষ।
এদিকে টানা বৃষ্টিপাত ও জলাবদ্ধতার কারণে নগরের অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে।যে বিদ্যালয়গুলো খোলা রাখা হয়েছে সেগুলোতেও কার্যত পাটদান হচ্ছেনা। শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতির কারণে এমনটাই ঘটছে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে।
শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সাধারণ ব্যবসায়ী ও চাকরীজীবীদের। রাস্তাঘাট ডুবে থাকার ফলে নগরের বেশিরভাগ সড়কে কোনো ধরনের যানবাহন চলাচল করছে না। দুয়েকটি রিক্সা চলাচল করলেও ভাড়া হাঁকা হচ্ছে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ৪/৫ গুণ বেশি। ফলে সাধারণ মানুষকেই বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বলে জানান ভুক্তভোগীরা।
এদিকে আজ সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ৯৪ মিলিমিটার বৃষ্টির রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। গত শনিবার সকাল ৯টা থেকে রোববার ৯টা পর্যন্ত বৃষ্টির পরিমাণ ছিল ২১৮ মিলিমিটার। এই মৌসুমে এটাই সর্বোচ্চ বৃষ্টির রেকর্ড বলে জানান আবহাওয়া দপ্তরের কর্মকর্তারা।
এবারের বৃষ্টিতে নগরের চকবাজার, কাতালগঞ্জ, শুলকবহর, বাদুরতলা, শান্তিনগর, ফুলতলা, বউবাজার, রাহাত্তার পুল, কালা মিয়া বাজার, তুলাতলী, রুবি গেট, মুরাদপুর, সুন্নিয়া মাদ্রাসা রোড, ডিসি রোড, বহদ্দারহাট, খাজা রোড, ফরিদারপাড়া, ঘাসিয়াপাড়া, খতিবেরহাট, বারইপাড়া, মাইজপাড়া, খরমপাড়া, বাকলিয়া, মিয়া খান নগর, কে বি আমান আলী সড়ক, সৈয়দ শাহ সড়ক, চাক্তাই, দুই নম্বর গেট, আল ফালাহ গলি, পুরোনো চান্দগাঁও থানা এলাকা, রিয়াজউদ্দিন বাজার, সাগরিকা ও আকমল আলী সড়ক এলাকার বাসাবাড়ি, মসজিদ, বিপণিবিতান, দোকানপাট ও সড়কগুলো পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এছাড়া নগরীর আগ্রাবাদ, হালিশহর, পতেঙ্গা, বন্দর এলাকার নিমাঞ্চলগুলোও গত চারদিন ধরে কোথাও হাঁটু পানি, কোথাও কোমড় পানিতে ডুবে আছে।
বর্ষার শেষে এসে চট্টগ্রামে এই বৃষ্টিপাতে চকবাজার ও রিয়াজউদ্দিন বাজারে কাঁচাবাজারের দোকানপাট পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়া চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে ভোগ্যপণ্যের দোকান-আড়তেও পানি ঢুকে মালামালের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এই জলাবদ্ধতা আরো দীর্ঘায়িত হলে চট্টগ্রামের ব্যবসা-বাণিজ্যে চরম ধ্বস নামবে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।
নগরের চকবাজার এলাকার বাসিন্দা প্রকৌশলী রাশেদুল ইসলাম চৌধুরী মিঠু জানান, সড়কে কোথাও কোথাও হাঁটু থেকে কোমরপানি জমে থাকায় যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। ইঞ্জিনে পানি ঢুকে যাওয়ায় অনেক অটোরিকশা বিকল হয়ে যাচ্ছে। লোকজনকে কয়েক গুণ বাড়তি ভাড়ায় প্যাডেলচালিত রিকশায় চলাচল করতে হচ্ছে। জলাবদ্ধতা এড়াতে অনেক যানবাহন বহদ্দারহাট মোড় থেকে ফ্লাইওভার দিয়ে লালখানবাজার পর্যন্ত চলাচল করছে। ফ্লাইওভারে ওঠানামার পথে যানজট তৈরি হচ্ছে।
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ উজ্জ্বল কান্তি পাল জানান, নিম্নচাপের কারণে চট্টগ্রাম ও আশপাশের এলাকায় মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। যেসব এলাকায় ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে বা হবে, সেসব এলাকায় পাহাড় ধসের আশঙ্কা আছে।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা আবুল হাশেম জানান, জলাবদ্ধতা নিরসনে আটকে যাওয়া পানি চলাচল নির্বিঘ্ন করতে খাল ও নালাগুলোর যেসব স্থানে ময়লা-আবর্জনা জমে আছে, সেগুলো অপসারণ করা হচ্ছে। বৃষ্টিপাত কমে আসলে জলাবদ্ধতাও দ্রুত কমে আসবে।
আজকের আবহাওয়ায় প্রবল অবস্থায় মৌসুমি বায়ু, অতি ভারী বর্ষণের পূর্বাভাস
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।