গোপাল হালদার, পটুয়াখালী : উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় সৃষ্ট নিম্নচাপ এবং অমাবস্যার প্রভাবে টানা বৃষ্টিপাত ও জোয়ারের পানিতে পটুয়াখালীসহ উপকূলীয় অঞ্চলে তৈরি হয়েছে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা। থেমে থেমে মাঝারি থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির ফলে জেলার নিচু এলাকা এবং পৌর শহরের একাধিক সড়কে জমে আছে পানি। এতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষ ও শিক্ষার্থীরা।
পটুয়াখালী আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, বুধবার (২৮ মে) ভোর থেকে শুরু হওয়া গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি বৃহস্পতিবার (২৯ মে) দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ৮২ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এরই মধ্যে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন, সমুদ্র উত্তাল এবং নদ-নদীর পানির উচ্চতা বেড়ে গেছে। এতে বৃষ্টির পানি সহজে নিষ্কাশন না হওয়ায় জলাবদ্ধতা দীর্ঘস্থায়ী হয়ে উঠছে।
পটুয়াখালী পৌর শহরের জুবিলী স্কুল রোড, মহিলা কলেজ রোড, পুরাতন হাসপাতাল রোড, মুন্সেফপাড়া, বাসস্ট্যান্ড, পৌর নিউ মার্কেট এবং আশপাশের এলাকাগুলোতে রাস্তাজুড়ে হাঁটু পর্যন্ত পানি জমে গেছে। এসব এলাকায় রিকশা চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে, পথচারীদের হাঁটতে হচ্ছে পানি মাড়িয়ে।
সেলিম গাজি নামের এক রিকশাচালক বলেন, ‘বৃষ্টিতে সকাল থেকে রাস্তায় লোক নেই। বৃষ্টির মধ্যেই বের হয়েছি, কিন্তু যাত্রী নাই। ঘরে বসে থাকলে খাওয়া বন্ধ হয়ে যাবে।’
জুবিলী স্কুলের শিক্ষার্থী মারুফ হোসেন বলেন, ‘স্কুলে যেতে হলে সড়কে পানি পেরিয়ে যেতে হয়। রিকশা পাচ্ছি না, তাই পা ডুবিয়ে হেঁটেই যাচ্ছি।’
শুধু শহর নয়, জেলার বিভিন্ন ইউনিয়নেও চাষাবাদে এসেছে বিপর্যয়। ইটবাড়িয়া ইউনিয়নের কৃষক শাহ আলম ফকির বলেন, ‘এক সপ্তাহ আগে দেড় একর জমিতে আউশ ধানের চারা রোপণ করেছি। কয়েকদিনের বৃষ্টিতে সব জমি পানির নিচে। পানি না কমলে চারা নষ্ট হয়ে যাবে।’
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, নিম্নচাপের কারণে উপকূলীয় অঞ্চলে আরও ভারী বৃষ্টিপাত এবং ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এজন্য পায়রাসহ দেশের চারটি সমুদ্রবন্দর, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রাকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি ৬৫ ফুট দৈর্ঘ্যের নিচে সব নৌযান চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
পটুয়াখালী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহবুবা সুখী বলেন, ‘উপকূলীয় এলাকায় বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বাড়ছে। অতি ভারী বৃষ্টিপাত এবং দমকা হাওয়া বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। স্থানীয়দের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।’
এদিকে, আবহাওয়ার অবনতি এবং জোয়ারের পানি বৃদ্ধির কারণে জেলার মৎস্যজীবীদের নৌকা ও ট্রলার উপকূলের কাছাকাছি অবস্থানে নিরাপদে রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
উপকূলীয় মানুষের অভিযোগ, প্রতি বছর বর্ষা মৌসুম এলেই শহরে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। পয়ঃনিষ্কাশনের আধুনিক ও কার্যকর ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই রাস্তায় পানি জমে যায়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্বাস এলেও বাস্তব উদ্যোগের অভাবে দুর্ভোগ কাটে না সাধারণ মানুষের।
প্রধান উপদেষ্টার জাপান সফরে এলো সুখবর, ১ লাখ কর্মী নিয়োগের ঘোষণা
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।