মারাত্মক বন্যায় যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে মৃত্যুর সংখ্যা সোমবার ১০০-এর বেশি হয়েছে। ক্ষীণ আশা নিয়ে এখনো উদ্ধারকর্মীরা তীব্র স্রোতে ভেসে যাওয়া মানুষের দেহ খুঁজে বের করার জন্য অভিযান চালিয়ে যাচ্ছেন।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
মৃতদের মধ্যে অন্তত ২৭ জন মেয়ে ও তত্ত্বাবধায়ক রয়েছেন, যারা চতুর্থ জুলাই ছুটির সপ্তাহান্তে একটি নদীর ধারে গ্রীষ্মকালীন শিবিরে ছিল, তখন হঠাৎ বন্যা আঘাত হানে।
আবহাওয়া পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, মাটিতে জমে থাকা পানির ওপর আরও বৃষ্টি হতে পারে, যা উদ্ধার তৎপরতাকে জটিল করে তুলছে। হেলিকপ্টার, নৌকা ও কুকুর ব্যবহার করে উদ্ধার তৎপরতা চললেও মৃতের সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবার টেক্সাস সফরে যাবেন। এ সময় হোয়াইট হাউস সমালোচকদের কঠোর ভাষায় আক্রমণ করেছে, যারা বলছে, ট্রাম্পের আবহাওয়া সংক্রান্ত দফতরের বাজেট কমানোয় সতর্কবার্তা ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে গেছে।
হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র ক্যারোলিন লেভিট সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই বন্যার জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে দায়ী করা একটি বিকৃত মিথ্যা, যা জাতীয় শোকের সময়ে কোনো কাজে আসে না।’
তিনি জানান, জাতীয় আবহাওয়া দফতর ‘সময়মতো এবং সঠিক পূর্বাভাস ও সতর্কবার্তা’ প্রদান করেছে, যদিও নিউ ইয়র্ক টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, বন্যার আগে সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ অনেক পদ ফাঁকা ছিল।
ট্রাম্প এই বন্যাকে ‘এক শতাব্দীর বিপর্যয়’ বলে উল্লেখ করেছেন, যা ‘কেউ আশা করেনি।’
যদিও ট্রাম্প আগে বলেছেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা রাজ্য পর্যায়ে করা উচিত, তবুও তিনি বড় ধরনের দুর্যোগ ঘোষণা করেছেন, যাতে নতুন করে কেন্দ্রীয় তহবিল ও সম্পদ ব্যবহার করা যায়।
বিপর্যয়ের কেন্দ্রবিন্দু কের কাউন্টি
টেক্সাসের মধ্য অঞ্চলের কের কাউন্টি সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্থানীয় শেরিফ দফতরের তথ্য অনুযায়ী, এখানে ৫৬ জন প্রাপ্তবয়স্ক এবং ২৮ জন শিশু প্রাণ হারিয়েছেন।
মৃতদের মধ্যে ২৭ জন ছিলেন ‘ক্যাম্প মিস্টিক’ নামের মেয়েদের খ্রিস্টান গ্রীষ্মকালীন শিবিরে, যেখানে প্রায় ৭৫০ জন অবস্থান করছিলেন। তখন হঠাৎ করে প্রবল বন্যার স্রোত শিবিরে আছড়ে পড়ে।
যুক্তরাষ্ট্রের গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে শিশু-কিশোরদের শিবিরে যাওয়া একটি প্রিয় ঐতিহ্য, যেখানে তারা বন, পার্ক এবং গ্রামের পরিবেশে সময় কাটায়।
টেক্সাসের সিনেটর টেড ক্রুজ বলেছেন, ‘শিবিরে আজীবনের বন্ধু তৈরি হয়, কিন্তু হঠাৎ করেই তা ট্র্যাজেডিতে রূপ নেয়।’
গুয়াদালুপ নদীর পানি এত বেড়ে যায় যে, গাছের ডালপালা এবং কেবিনের ছাদ পর্যন্ত পানি পৌঁছে যায়, তখন শিবিরের মেয়েরা ঘুমাচ্ছিল।
কাদা মাখা কম্বল, খেলনা, বই এবং অন্যান্য সামগ্রী চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে। কেবিনের জানালার কাচ ভেঙে যায়, সম্ভবত পানির প্রচণ্ড চাপে।
নদীর তীরে জমে থাকা ধ্বংসাবশেষে নিখোঁজদের খুঁজতে স্বেচ্ছাসেবকরা সহায়তা করছেন। অনেকেই ব্যক্তিগত সম্পর্কের কারণে উদ্বুদ্ধ হয়ে উদ্ধার তৎপরতায় নেমেছেন।
৬২ বছর বয়সি লুইস ডেপ বলেন, ‘আমরা দুইজন নিখোঁজ শিশুর বাবা-মায়ের জন্য সাহায্য করছি। শেষবার তারা যে বার্তা পেয়েছিল, তাতে লেখা ছিল ‘আমরা ভেসে যাচ্ছি’, এরপর ফোন বন্ধ হয়ে যায়।’
বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত কয়েক ঘণ্টায় এক মাসের সমপরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে এবং এরপরও থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে।
মাত্র ৪৫ মিনিটে গুয়াদালুপ নদীর পানি প্রায় ২৬ ফুট (প্রায় আট মিটার) বৃদ্ধি পেয়েছে, যা দুইতলা বাড়ির সমান উচ্চতা।
দক্ষিণ এবং মধ্য টেক্সাসের এই অঞ্চলটি ‘হঠাৎ বন্যার করিডোর’ নামে পরিচিত, যেখানে অতিবর্ষণে আকস্মিক বন্যা নতুন নয়। তবে মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বন্যা, খরা এবং তাপপ্রবাহের মতো চরম আবহাওয়া আরও ঘন ঘন এবং তীব্র আকারে দেখা দিচ্ছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।