ট্রানজিট মেথড: বহিঃসৌরগ্রহ শনাক্ত করার আধুনিক পদ্ধতি

ট্রানজিট

মহাজাগতিক কোনো বস্তু (যেমন শুক্র গ্রহ) যদি বিশাল আকারের অন্য একটি বস্তু (যেমন সূর্য) ও পৃথিবীর মধ্যকার শূন্যস্থান দিয়ে সরাসরি অতিক্রম করে, এর ফলে যদি বিশাল বস্তুটির (যেমন সূর্যের) সামান্য অংশ আড়াল হয়ে যায়, তাহলে সেই ঘটনাটিকে বলা হয় ট্রানজিট বা অতিক্রমণ। ট্রানজিটে বিশাল বস্তুটির খুব সামান্য অংশ আড়াল হয়। অন্যদিকে গ্রহণের মাধ্যমে আড়াল করার মাত্রা হয় অনেক বেশি।

ট্রানজিট

 

এমনকি গ্রহণের মাধ্যমে বেশ ছোট আকারের বস্তু পুরোপুরি ঢেকে দিতে পারে বিশাল আকারের কোনো বস্তুকে। যেমনটা আমরা দেখি সূর্যগ্রহণের সময়। পুঁচকে চাঁদ ঢেকে দেয় পরাক্রমশালী সূর্যকে। মূলত সূর্য থেকে চাঁদের (এবং পৃথিবীর) দূরত্ব অনেক বেশি হওয়ায় এমনটা ঘটে। শুক্র গ্রহের ব্যাসার্ধ চাঁদের তুলনায় প্রায় সাড়ে তিন গুণ বেশি। কিন্তু এর অবস্থান সূর্যের অনেক কাছে। তাই এ অতিক্রমণের সময় মাত্র ০ দশমিক ১ শতাংশ আলো বাধা পায়। সে জন্য গ্রহণ না হয়ে সংঘটিত হয় ট্রানজিট বা অতিক্রমণ। উপযুক্ত যন্ত্রপাতি ব্যবহার না করে পৃথিবী থেকে কোনোভাবেই শুক্রের এই অতিক্রমণ শনাক্ত করা সম্ভব নয়।

জার্মান জ্যোতির্বিদ জোহানেস কেপলারের হাত ধরে গ্রহগুলোর উপবৃত্তাকার কক্ষপথের ধারণা নিশ্চিতভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। তার আগপর্যন্ত সবাই বিশ্বাস করত, এগুলো নিখুঁত বৃত্তাকার পথে ঘোরে। কেপলারের আবিষ্কৃত তিনটি সূত্রের মাধ্যমে গ্রহদের গতিপথ ব্যাখ্যা করা সম্ভব হয়। তবে মজার বিষয় হলো, কেপলারও শুক্র গ্রহের ট্রানজিট নিয়ে সঠিক তথ্য দিয়ে যেতে পারেননি। নিজ চোখে দেখে যেতে পারেননি এই বিরল মহাজাগতিক ঘটনা। ট্রানজিট সংঘটিত হওয়ার কয়েক বছর আগেই তিনি পাড়ি জমান পরলোকে।

যাই হোক, ট্রানজিট দেখতে হলে তিনটি মহাজাগতিক বস্তু, যেমন পৃথিবী, সূর্য ও শুক্রকে পরস্পরের সাপেক্ষে বিশেষ অবস্থানে থাকতে হয়। এ জন্য প্রতি ২৪৩ বছরে মাত্র একবার ঘটতে দেখা যায় এ ঘটনা। বৈজ্ঞানিকভাবে সর্বপ্রথম এই ঘটনা পর্যবেক্ষণ করেন বিশ বছর বয়সী ব্রিটিশ জ্যোতির্বিদ জেরেমিয়া হোরকস। সে সময়ে তাঁর সঙ্গে ছিলেন বন্ধু উইলিয়াম ক্যাবট্রি। মজার বিষয় হলো, কয়েক শ বছর আগে হোরক্সের ব্যবহৃত সেই টেলিস্কোপের সংবেদনশীলতা অক্সফোর্ডের জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ছাদে স্থাপন করা যন্ত্রপাতির চেয়ে বেশি ছিল!

সূর্যের বুকে শুক্রের অতিক্রমণ বেশ বিরল ঘটনা হলেও মহাবিশ্বে কিন্তু হরহামেশাই এমনটা ঘটে। অগণিত মহাজাগতিক বস্তু নিয়ত নক্ষত্রের বুক চিরে ছুটে চলেছে। এদের পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে জ্যোতির্বিদরা উদ্ভাবন করেছেন গ্রহের মতো আলোহীন ক্ষুদ্র বস্তুদের অস্তিত্ব শনাক্তের এক অভাবনীয় পদ্ধতি। চলুন, এবার জেনে নেওয়া যাক এক্সোপ্ল্যানেট বা বহিঃসৌরগ্রহ শনাক্ত করার ট্রানজিট মেথড বা অতিক্রমণ পদ্ধতি।