আন্তর্জাতিক ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আগামীকাল। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সকাল ৬টা (বাংলাদেশ সময় বিকাল ৫টা) থেকে শুরু হবে ভোট গ্রহণ। রাজ্য ভেদে ভোট গ্রহণের সময়সীমা হেরফের হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হতে ২৭০টি ইলেকটোরাল ভোট পেতে হবে। দেশটিতে মোট ইলেকটোরাল কলেজ ভোট ৫৩৮টি। ওয়াশিংটন ডিসির ৩ জনসহ ৪৩৮ জন হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভ (নিম্নকক্ষ) এবং ১০০ জন সিনেটর (উচ্চকক্ষ) মিলে ৫৩৮টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট গণনা করা হয়।
মেইন ও নেব্রাস্কা রাজ্য ছাড়া ৪৮টি রাজ্য ও ওয়াশিংটন ডিসিতে যিনি যে রাজ্যে সর্বোচ্চ পপুলার ভোট পাবেন তিনি ওই রাজ্যের সবগুলো ইলেকটোরাল ভোট পাবেন।
নেব্রাস্কা ও মেইন রাজ্যের পপুলার ভোটের বিজয়ীরা পান দুটি করে ইলেকটোরাল কলেজ ভোট। ২০১৬ সালের নির্বাচনে হিলারি ক্লিনটন সারা দেশে ৩০ লাখ পপুলার ভোট বেশি পেয়েছিলেন। কিন্তু ইলেকটোরাল কলেজ ভোটে ট্রাম্পের কাছে হেরে যান।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে। দেশটির সংবিধানের ১২তম সংশোধনীতে এই পদ্ধতিটি যুক্ত করা হয়েছে। এই ইলেকটোরাল কলেজ পদ্ধতিরও দোষ-গুণ দুটোই আছে। যুক্তরাষ্ট্রে এই পদ্ধতিকে ব্যাপক সম্মানের চোখে দেখা হয়, কারণ এর সঙ্গে দেশটির প্রতিষ্ঠার ইতিহাসের সংযোগ আছে।
যুক্তরাষ্ট্রে ১৪টি সুইং বা ব্যাটেলগ্রাউন্ড রাজ্য রয়েছে। এরমধ্যে অন্যতম ফ্লোরিডা, অ্যারিজোনা, মিশিগান, জর্জিয়া ও পেনসিলভানিয়া। ফ্লোরিডা রাজ্যে যিনি বিজয়ী হন তিনিই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তবে এবারের প্রেক্ষাপট কিছুটা ভিন্ন। কারণ পেনসিলভানিয়া ও মিশিগান রাজ্য এবার ফ্যাক্টর হয়ে উঠতে পারে।
এদিকে এবারের নির্বাচনে ডাকযোগেও রেকর্ডসংখ্যক ভোট পড়েছে, যা গত নির্বাচনের প্রায় দ্বিগুণ। ডাকযোগের এসব ভোট কখন ও কীভাবে গণনা করা হবে তার জন্য একেক রাজ্যে রয়েছে একেক ধরনের আইন। সে কারণে এসব রাজ্য থেকে বিভিন্ন সময়ে ফলাফল পাওয়া যাবে এবং কখনও কখনও সময়ের এই ব্যবধান খুব বেশিও হতে পারে।
কিছু কিছু রাজ্যে, যেমন ফ্লোরিডা এবং অ্যারিজোনা, সেখানে ডাকযোগে ভোটের গণনা শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু উইসকনসিন ও পেনসিলভানিয়ায় ৩ নভেম্বরের আগে সেগুলো স্পর্শ করা হবে না। ফলে সেখান থেকে ভোটের ফলাফল দেরিতে আসবে।
নর্থ ক্যারোলাইনায় ভোট গ্রহণ শেষ হবে স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায়। ফলে সেখানে কেন্দ্রে পড়া ভোট গণনা থেকে একটা ধারণা পাওয়া যাবে। ২০১৬ সালের নির্বাচনে এই রাজ্যে অল্প ভোটে জিতেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এবার ফল কোন দিকে যায় সেটা বলা কঠিন। ফলে এই রাজ্যে এবার ডোনাল্ড ট্রাম্প কিংবা জো বাইডেন যিনি বিজয়ী হবেন, তার জন্য সেটা শুভ সূচনা হতে পারে।
অন্যতম প্রধান ব্যাটলগ্রাউন্ড রাজ্য ফ্লোরিডাতে ভোটগ্রহণ শেষ হবে স্থানীয় সময় রাত আটটায়। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এই রাজ্যে দুই দলেরই জয় পরাজয় ঘটেছে এবং এবারও সে রকম হতে পারে। পোস্টাল ভোট ও কেন্দ্রে পড়া ভোট, এই দুটোর গণনা প্রথম আসবে এই ফ্লোরিডা রাজ্য থেকে। একারণে এই রাজ্যের ফলাফল জো বাইডেনের পক্ষে যেতে পারে।
অ্যারিজোনাতে ভোট কেন্দ্র বন্ধ হবে স্থানীয় সময় রাত ৯টায়। সেখানে ডাকযোগে ভোটের গণনা ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। ২০১৬ সালের নির্বাচনে এই রাজ্যে জয়লাভ করেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
কিন্তু এবার সেখানে জনমত জরিপে জো বাইডেন সামান্য ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছেন। ফ্লোরিডার মতো অ্যারিজোনাতেও প্রাথমিক গণনায় বাইডেন এগিয়ে থাকতে পারেন। কারণ তার সমর্থকরা আগেই ডাকযোগে ভোট দেওয়ার পক্ষে ছিলেন।
ওহাইও রাজ্যে ভোট শেষ হবে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায়। কর্মকর্তারা ওই রাতে প্রাথমিক কিছু ফল ঘোষণা করবেন। কিন্তু চূড়ান্ত ফল ঘোষণার আগে আর কোনো ফল প্রকাশ করা হবে না। চূড়ান্ত ফল হয়তো ২৮ নভেম্বর ঘোষণা করা হতে পারে বলে বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
পেনসিলভানিয়া রাজ্যে ভোট কেন্দ্র বন্ধ হবে রাত ৮টায়। কে হোয়াইট হাউজে যাচ্ছেন তার রাস্তা তৈরিতে সাহায্য করবে এই রাজ্যের ফল। এখানে জো বাইডেনের জন্ম। আবার একই সঙ্গে ২০১৬ সালের নির্বাচনে এই রাজ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্প জয়ী হয়েছিলেন।
উইসকনসিন এবং মিশিগানে ভোটগ্রহণ চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। আগের নির্বাচনে হিলারি ক্লিনটন উইসকনসিন রাজ্যে অল্প ভোটে পরাজিত হন। তবে এবারের কিছু জনমত জরিপে দেখা যাচ্ছে জো বাইডেন এগিয়ে আছেন। কিন্তু লড়াইটা হাড্ডাহাড্ডি হবে বলেই মনে হচ্ছে। প্রতিবেশী মিশিগানও আরেকটি সুইং স্টেট। সেখানে কী হয় সেটাও দেখার বিষয়। এই রাজ্যে জয় পাওয়া বাইডেন এবং ট্রাম্প -দুটো শিবিরের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ।
যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি অন্য অনেক দেশের চাইতে বেশ আলাদা। এখানে রাজনৈতিক ব্যবস্থায় সবচেয়ে প্রভাবশালী দল ডেমোক্রেটিক ও রিপাবলিকান পার্টি। প্রেসিডেন্ট প্রায় সব সময়ই এই দুটি দলের কোন একটি থেকে নির্বাচিত হন। অবশ্য ছোট ছোট কিছু রাজনৈতিক দল যেমন লিবার্টারিয়ান, গ্রিন, ইন্ডিপেনডেন্ট পার্টি প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী দিয়েছে।
রিপাবলিকান পার্টি ‘গ্র্যান্ড ওল্ড পার্টি’ নামেও পরিচিত। সাম্প্রতিককালে রিপাবলিকান পার্টির নীতি ছিল করের হার কমানো, বন্দুক রাখার অধিকার এবং অভিবাসনের ওপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপের পক্ষে। যুক্তরাষ্ট্রের অপেক্ষাকৃত গ্রামীণ এলাকাগুলোতে রিপাবলিকান পার্টির সমর্থন বেশি জোরালো। রিপাবলিকান পার্টির সাবেক প্রেসিডেন্টদের মধ্যে আছেন জর্জ ডব্লিউ বুশ, রোনাল্ড রেগান এবং রিচার্ড নিক্সন।
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে ডেমোক্রেটিক পাটির্ হচ্ছে উদারনৈতিক রাজৗনৈতিক দল। এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তাদের প্রার্থী জো বাইডেন। তিনি একজন অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ এবং বারাক ওবামা যখন আট বছর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ছিলেন, তখন বাইডেনই ছিলেন তার ভাইস প্রেসিডেন্ট। তার পার্টি পরিচিত নাগরিক অধিকার, অভিবাসন, এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বিষয়ে তার উদারনৈতিক অবস্থানের জন্য।
তারা মনে করে, স্বাস্থ্যবীমার সুযোগ দেবার মতো জনগণের জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের আরো বড় ভূমিকা পালন করা উচিত। যুক্তরাষ্ট্রের শহর অঞ্চলগুলোতে ডেমোক্রেটিক পার্টির সমর্থন জোরালো বলে দেখা যায়। সাবেক ডেমোক্রেটিক প্রেসিডেন্টদের মধ্যে আছেন জন এফ কেনেডি, বিল ক্লিনটন এবং বারাক ওবামা।
এবারের নির্বাচনে দুই প্রার্থীরই বয়স ৭০-এর বেশি। যদি ট্রাম্প পুনরায় নির্বাচিত হন, তাহলে দ্বিতীয় মেয়াদের শুরুতে তার বয়স হবে ৭৪। আর বাইডেন বিজয়ী হলে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে তিনিই হবেন প্রথম মেয়াদে নির্বাচিতদের মধ্যে সবচেয়ে বয়স্ক প্রেসিডেন্ট।
যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে বিপুল বাংলাদেশি আমেরিকান ভোটার রয়েছেন। মোটা দাগে যাদের বসবাস ডেমোক্রেট রাজ্য নিউইয়র্কে। ফলে তাদের ভোট এই জাতীয় নির্বাচনে কোনো প্রভাব ফেলবে না। বেশিরভাগ বাংলাদেশি আমেরিকান ডেমোক্রেট সমর্থক। তবে এবার ট্রাম্পের সমর্থক তৈরি হয়েছে উল্লেখযোগ্য হারে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।