জুমবাংলা ডেস্ক : কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে আবাদি উঁচু জমিতে, বাড়ির পাশে, বিভিন্ন গাছে কিংবা বাড়ির উঠোনে পান চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের। এতে এক দিকে চাঙ্গা হচ্ছে গ্রামীণ অর্থনীতি, অন্য দিকে স্বাবলম্বী হচ্ছে এলাকার অনেক দরিদ্র পরিবার।
বাজারে পানের দাম বেশি ও ব্যাপক চাহিদা থাকায় অন্যান্য ফসলের তুলনায় পান চাষের প্রতি ঝুঁকছেন স্থানীয় কৃষকরা। উপজেলার ছয়টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় বিভিন্ন গ্রামে অসংখ্য পানের বরজ রয়েছে।
এখানকার উৎপাদিত পান উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে সরবরাহ হচ্ছে পাশের পাকুন্দিয়া, নান্দাইল, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। বিশেষ করে এ এলাকার লাল ডিঙ্গি পান বিদেশেও রফতানি হচ্ছে। কিশোরগঞ্জ তথা বৃহত্তর ময়মনসিংহের মানুষ ‘পান’ বলতে যা বোঝে ওই ‘লালডিঙি’ পানকেই বোঝে। প্রাকৃতিক সুগন্ধিযুক্ত, পুরু ও রসে ভরপুর থাকায় তাদের কাছে এ পান সমাদৃত। এই পানেরই মিষ্টি-মধুর স্বাদে প্রতিদিন ‘ঠোঁট রাঙাচ্ছেন’ বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের মানুষ। আকারে বড়, সুস্বাদু ও খিলিপানের উপযুক্ত হওয়ায় এই পানের এখন বাজার তৈরি হচ্ছে ঢাকাসহ সারা দেশে। আমেরিকা, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া ও সৌদি আরবেও এখন যাচ্ছে এই ‘লালডিঙি’ পান।
পানপল্লী হিসেবে খ্যাত উপজেলার সুরাটি, সিদলা, গোবিন্দপুর, জাহাঙ্গীরপুর, পিতলগঞ্জ, ভরুয়া, হারেঞ্জাসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ পান চাষ করে বদলে দিয়েছে গোটা উপজেলার অর্থনীতি। পাশাপাশি পানচাষিরাও তাদের শ্রম কাজে লাগিয়ে বদলে দিচ্ছে তাদের ভাগ্য।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর উপজেলায় ১১ হেক্টর জমিতে পানের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও আবাদ হয়েছে অনেক বেশি।
কৃষকরা জানান, প্রতি একর জমিতে পানের উৎপাদন ব্যয় পাঁচ-ছয় লাখ টাকা, আর তা বিক্রি হয় সাত থেকে আট লাখ টাকায়।
উপজেলায় সুরাটি, হারেঞ্জা ও বিভিন্ন এলাকায় শতাধিক পানচাষি রয়েছেন।
উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রামের পানচাষি বাবুল মিয়া, হারেঞ্জা গ্রামের হুমায়ুন, ভরুয়া গ্রামের নজরুল বলেন, আবাদের এক-দেড় মাস যেতেই বরজে বিক্রির মতো পান ফুটে ওঠে। বর্ষা মৌসুমে পানের উৎপাদন একটু বেশি হয়। এ জন্য কোনো কাজের লোক রাখতে হয় না। তারা অবসর সময়টা ব্যয় করেন বরজের পেছনে। এতে প্রতি বরজ থেকে মাসে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা আয় করেন তারা।
উপজেলার সিদলা ইউনিয়নের পিতলগঞ্জ গ্রামের বিল্লাল হোসেন জানান, পান লাভজনক ফসল। উৎপাদন খরচের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ লাভ হওয়ায় পান আবাদ তার অভাবের সংসারে সচ্ছলতা এনে দিয়েছে। পানের এই আয় থেকেই ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া করানোর পাশাপাশি স্বাবলম্বী হচ্ছেন তারা। কিনেছেন ফসলি জমিও।
দোকানে পান খেতে আসা জহিরুল জানান, লালডিঙ্গি পানের স্বাদ আলাদা। তাই এর দাম ও একটু বেশি। বেশির ভাগ মানুষই লাল ডিঙ্গি পান খেতে ভালোবাসে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শাহজাহান কবির জানান, পান চাষ লাভজনক হওয়ায় এ অঞ্চলে পান চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। তা ছাড়া পান চাষ করতে গিয়ে কোনো রকমের সমস্যার সম্মুখীন হলে তারা খুব দ্রত পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করে থাকেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।