জুমবাংলা ডেস্ক : সোনারগাঁয় ভুল চিকিৎসায় এক প্রসূতির মৃ’ত্যুর অভিযোগে হাসপাতাল ভাঙচুর করা হয়েছে। গতকাল সোমবার সকালে সোনারগাঁ জেনারেল হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনার পর হাসপাতালের কর্তব্যরত লোকজন পালিয়ে যায়।
হতভাগ্য প্রসূতির নাম অমান্তিকা (১৮)। তিনি উপজেলার মোগরাপাড়া ইউনিয়নের বড়সাদিপুর গ্রামের পিন্টু মিয়ার স্ত্রী। অমান্তিকার বাবার নাম সোহেল মিয়া। অ’স্ত্রোপচারের পর ডাক্তার তাড়াহুড়া করে চলে যাওয়ার পর নার্সরা ভেতরে গজ-ব্যান্ডেজ রেখে সেলাই করলে অমান্তিকার মৃ’ত্যু হয়।
পিন্টু মিয়া জানান, গত শুক্রবার তাঁর স্ত্রী অমান্তিকার প্রসবব্যথা শুরু হলে রয়েল হাসপাতালের মাঠকর্মী শাহানাজের পরামর্শে তাঁকে সোনারগাঁ জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে আসেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গাইনি ডাক্তার নুরজাহানকে খবর দিলে তিনি জানান, প্রসূতিকে বাঁচাতে হলে অ’স্ত্রোপচার (সিজারিয়ান সেকশন) করতে হবে। ১৩ হাজার টাকা চুক্তিতে সন্ধ্যা ৬টার দিকে অমান্তিকাকে অ’স্ত্রোপচার করেন। এতে অমান্তিকা একটি কন্যাসন্তানের জন্ম দেন। এরপর ডাক্তার নুরজাহান তাড়াহুড়া করে আরেকটি অপারেশন আছে বলে সঙ্গে থাকা নার্সকে সেলাই করার জন্য নির্দেশ দিয়ে তিনি হাসপাতাল ত্যাগ করেন। তাঁর সহযোগী নার্স পেটের ভেতর গজ ও ব্যান্ডেজ রেখেই সেলাই করে দেন।
অস্ত্রোপচারের পর অমান্তিকার জরায়ু থেকে প্রচুর রক্তপাত হতে থাকে। ব্যথাও তীব্রভাবে বেড়ে যায়। এ বিষয়ে পরের দিন শনিবার ডা. নুরজাহানকে জানালে তিনি নারায়ণগঞ্জের কেয়ার হাসপাতালে রোগীকে নিয়ে যেতে বলেন। সেখানে নেওয়ার পর রোগীর অবস্থা খারাপ দেখে তিনি আল্ট্রাসনোগ্রাফ করতে বলেন। আল্ট্রাসনোগ্রাফে দেখা যায়, রোগীর পেটে গজ-ব্যান্ডেজ রয়ে গেছে। নুরজাহান রোগীর স্বজনদের অনুমতি না নিয়ে নিজেই আবারও অপারেশন করে তা অপসারণ করেন। এ সময় তিনি রোগীর স্বজনদের জানান, রোগীকে বাঁচাতে হলে তাঁর জরায়ুসহ ফেলে দিতে হবে। রোগীকে বাঁচাতে তাঁরা এ শর্ত মেনে নেন। অপারেশন শেষে অমান্তিকার শারীরিক অবস্থার আরো অবনতি হলে রোগীর স্বজনদের জানানো হয়, রোগীর কিডনিতে সমস্যা আছে। তাঁকে দ্রুত ঢাকার আজগর আলী হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। শনিবার রাতেই স্বজনরা রোগীকে আজগর আলী হাসপাতালে নিয়ে গেলে সোমবার সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃ’ত্যু হয়।
অমান্তিকার মৃ’ত্যুর খবর পাওয়ার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে পালিয়ে যায়। গতকাল সকালে অমান্তিকার স্বজনরা সোনারগাঁ জেনারেল হাসপাতালের সামনে অ্যাম্বুল্যান্স রেখে তার বিচার চেয়ে হাসপাতালে ভাঙচুর করে। খবর পেয়ে সোনারগাঁ থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত চিকিৎসক নুরজাহানের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তাঁর মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া গেছে।
হাসপাতালের মালিক মানসুরা বেগমের ভাই সৈয়দ শরিফউদ্দিন কাদেরী বলেন, ‘যদি ভুল চিকিৎসায় রোগী মা;রা যায় তবে সম্পূর্ণ দায় সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের। রোগীর আত্মীয়-স্বজন আমাদের হাসপাতালে ভাঙচুর করায় থানায় আমরা একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।’
সোনারগাঁ থানার ওসি মনিরুজ্জামান জানান, রোগী মৃ’ত্যুর ঘটনায় এখনো কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। তবে ভাঙচুরের ঘটনায় হাসপাতালের মালিক পক্ষ থেকে একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।