‘ডিএনএ টেস্ট’ কথাটার সঙ্গে আমরা প্রায় সবাই পরিচিত। মুভি, সিরিজ, বই—কোনো না কোনো মাধ্যমে শব্দটা শুনেছেন নিশ্চয়ই। জেনেটিক বা জিনগত ত্রুটি কিংবা আইনি উদ্দেশ্যে সাধারণত এই ডিএনএ টেস্ট ব্যবহার করা হয়। আমাদের জীবনের নীল নকশা বলা যায় এই ডিএনএকে। জীববিজ্ঞানের ভাষায় একে বলা হয় মাস্টার মলিকুল।
শুরুতে জানা যাক, ডিএনএ কী? এর পূর্ণরূপ ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড। এটি একটি বিশাল জৈব অ্যাসিড, জীবনের আণবিক ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। নির্দিষ্ট কোনো জীবের প্রতিটি কোষে সমপরিমাণ ডিএনএ থাকে। ক্রোমোসোমের গাঠনিক উপাদান হিসেবেও কাজ করে ডিএনএ। আসলে জীবের সব ধরনের বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করে এই জৈব অণু। বংশগত বৈশিষ্ট্য ধারণ ও বহন করে এটি। বংশপরম্পরায় এক প্রজন্ম থেকে পরের প্রজন্মে নানা বৈশিষ্ট্য স্থানান্তর করে। প্রজাতি শনাক্তকরণেও এর ভূমিকা অপরিসীম।
ডিএনএর রাসায়নিক গঠনের উপাদানগুলোর মধ্যে রয়েছে ডিঅক্সিরাইবোজ সুগার, নাইট্রোজেনের চার ধরনের ক্ষারক (অ্যাডিনিন, গুয়ানিন, সাইটোসিন ও থাইমিন) এবং ফসফোরিক অ্যাসিড। এর গাঠনিক একক নিউক্লিওটাইড। লাখ লাখ নিউক্লিওটাইডের সমন্বয়ে গঠিত হয় একটি ডিএনএ অণু।
এবার সংক্ষেপে ডিএনএ আবিষ্কারের গল্পটা জেনে নেওয়া যাক। নিউক্লিক অ্যাসিড আবিষ্কারের পর থেকে এর প্রকৃতি, গঠন উপাদান এবং ভৌত গঠন নিয়ে গবেষণা শুরু হয়। অনেক বিজ্ঞানী ডিএনএ সম্পর্কিত নানা পর্যবেক্ষণ, পরীক্ষালব্ধ ফলাফল ও তথ্য প্রকাশ করেন। বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ফলাফল নিয়ে হাজির হন মার্কিন জীববিজ্ঞানী জেমস ওয়াটসন ও ইংরেজ জীববিজ্ঞানী ফ্রান্সিস ক্রিক।
বিজ্ঞানের অভূতপূর্ব এই উন্নতির জন্য তাঁদের দুজনকে ১৯৬২ সালে শারীরতত্ত্ব ও চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়। এই দুই বিজ্ঞানী অবশ্য ডিএনএর গঠন উন্মোচনে রোজালিন্ড ফ্র্যাঙ্কলিনের গবেষণার সাহায্য নিয়েছেন। বর্তমানে এটি সর্বজন স্বীকৃত।
চাইলে ডিএনএকে একটু ‘সম্পাদনা’ করাও সম্ভব। পত্রিকার ভাষায় ‘সম্পাদনা’ কথাটির অর্থ কোনো লেখা ঘষা-মাজা করে আরও ভালো করা। ডিএনএও সেভাবে সম্পাদনা করা যায়। অর্থাৎ কাটা-ছেঁড়া করে, প্রয়োজন অনুযায়ী ঠিক করে নেওয়া যায় বা উন্নত করা যায়। ডিএনএ সম্পাদনা করার জন্য ব্যবহৃত হয় ‘ক্রিসপার’ নামে একধরনের রাসায়নিক কাঁচি। কীভাবে করা হয় এই সম্পাদনা?
রেস্ট্রিকশন এনজাইম নামে একধরনের রাসায়নিকের সাহায্যে কোনো জীবের কোষ থেকে ডিএনএর কোনো নির্দিষ্ট অংশ কেটে নিয়ে অন্য জীবকোষের ডিএনএর সঙ্গে যুক্ত করে দেওয়া হয়। এভাবে তৈরি হয় নতুন ডিএনএ। এই নতুন ডিএনএকে বলা হয় রিকম্বিনেন্ট ডিএনএ। আর দুটি ভিন্ন প্রজাতির ডিএনএর এই একত্রীকরণ প্রক্রিয়ার নাম রিকম্বিনেন্ট ডিএনএ প্রযুক্তি।
সাধারণত জীবকোষে ডিএনএ থাকে। গাছের ক্লোরোপ্লাস্ট বা জীবের মাইটোকন্ড্রিয়ায় কি এরকম ডিএনএ থাকতে পারে? এ বিষয়ক আলোচনা হয়তো দেখে থাকতে পারেন ইন্টারনেটে। আসলে, ক্লোরোপ্লাস্ট ও মাইটোকন্ড্রিয়ায় ছোট বৃত্তাকার ক্রোমোজোম থাকে। এগুলো ‘এক্সট্রা নিউক্লিয়ার ডিএনএ’ নামে পরিচিত।
ক্লোরোপ্লাস্টের ডিএনএতে থাকা জিন সালোকসংশ্লেষণ ও ক্লোরোপ্লাস্টের নানা কাজের সঙ্গে জড়িত। ধারণা করা হয়, ক্লোরোপ্লাস্ট ও মাইটোকন্ড্রিয়া—দুটোই মুক্তজীবী সায়ানোব্যাকটেরিয়া থেকে এসেছে। এ থেকেই বোঝা যায় কেন এগুলোর ডিএনএ আছে, আর কেন তা কোষের বাকি অংশ থেকে ভিন্ন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।