জুমবাংলা ডেস্ক : নতুন বছরের ছয় দিনের লেনদেনে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বাজার মূলধন কমেছে ৬ হাজার ৭৯৯ কোটি টাকা। ছয় দিনের লেনদেনে মাত্র দুই দিন সূচক বেড়েছে, বাকি চার দিনই কমেছে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিটের দর।
বাজার মূলধন হচ্ছে মূলত তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ারের সেই দিনের বাজার মূল্যের গুণফল। ফলে যখন তালিকাভুক্ত বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ার দর বাড়ে তখন বাজার মূলধন বাড়ে, আর বিপরীত অবস্থায় বাজার মূলধন কমে।
নতুন বছরের শুরুতে ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৬ লাখ ৬৩ হাজার ৯০৫ কোটি টাকা। গতকাল বুধবার লেনদেন শেষ বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৫৮ হাজার ৭৭৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাজার মূলধন কমেছে ৫ জানুয়ারি, ৪ হাজার ৯২৫ কোটি টাকা। এদিন ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছিল ৩৪ দশমিক ৪৪ পয়েন্ট।
এ ছাড়া ২ জানুয়ারি বাজার মূলধন কমেছিল ৯৫৩ কোটি টাকা, এদিন ডিএসইএক্স সূচক কমেছিল ১৮ দশমিক ৫৪ পয়েন্ট।
বাজার মূলধন কমে যাওয়া প্রসঙ্গে বাংলাদেশ বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, নতুন বছরের সব সেক্টরেই নতুন প্রত্যাশা থাকে। কিন্তু পুঁজিবাজারের জন্য কিছু নেই। যা আছে তা আগেও ছিল। ফলে বিনিয়োগকারীদের আস্থার জায়গাটি এখনো শূন্য।
তিনি বলেন, ‘অর্থ উপদেষ্টা সম্প্রতি পুঁজিবাজার নিয়ে বেশি কিছু উদ্যোগের কথা বলেছেন, তারপরও পুঁজিবাজারে এর ইতিবাচক কোনো প্রভাব নেই। কারণ বিনিয়োগকারীরা তাদের বিনিয়োগ সুরক্ষা চায়। সংস্কার করার মাধ্যমে পুঁজিবাজারে শৃঙ্খলা আনা যাবে, কিন্তু চলমান অবস্থায় নতুন বিনিয়োগ কীভাবে বাড়বে তার কোনো দিকনির্দেশনা নেই। ফলে সরকারের নানা উদ্যোগে পুঁজিবাজারের জন্য ভালো কিছু হচ্ছে না।
নতুন বছরের প্রথম ছয় দিনের লেনদেনে দেখা গেছে, ১লা জানুয়ারি পুঁজিবাজারে ডিএসইএক্স সূচক বেড়েছিল ১ দশমিক ৭১ পয়েন্ট। দ্বিতীয় দিন সূচক কমেছিল ১৮ দশমিক ৫৪ পয়েন্ট। শুক্র-শনিবার দুদিন সরকারি ছুটির কারণে পুঁজিবাজার বন্ধ থাকার পর ৫ জানুয়ারি সূচক কমেছে ৩৪ দশমিক ৪৪ পয়েন্ট। ৬ জানুয়ারি সূচক বেড়েছিল ৩৩ দশমিক ৬৭ পয়েন্ট। ৭ জানুয়ারি কমেছিল ৮ দশমিক ৬ পয়েন্ট এবং গতকাল বুধবার ৮ জানুয়ারি লেনদেন শেষে সূচক কমেছে ৫ দশমিক ৭৭ পয়েন্ট।
লেনদেন: গতকাল বুধবার ডিএসইতে বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমলেও অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) দাম বাড়ার তালিকায় বেশি প্রতিষ্ঠানের স্থান হয়েছে। এরপরও কমেছে মূল্যসূচক। সেই সঙ্গে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ।
এর আগে সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রবিবার নেটওয়ার্ক সমস্যায় ডিএসইতে লেনদেন বিঘ্ন ঘটে। নির্ধারিত সময়ের দেড় ঘণ্টা পর সকাল ১১টা ৩০ মিনিটে লেনদেন শুরু হয়ে চলে দুপুর ২টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত। পরের ১০ মিনিট অর্থাৎ ২টা ৫০ মিনিট থেকে ৩টা পর্যন্ত পোস্ট ক্লোজিং সেশন চলে। নেটওয়ার্ক সমস্যার সমাধানের পর লেনদেন হলেও সার্বিক শেয়ারবাজার দরপতন হয়। পরের কার্যদিবস সোমবার ডিএসইতে মূল্যসূচকের ঊর্ধ্বমুখিতার দেখা মিলে। তবে মঙ্গলবার আবার দরপতন হয়।
এ পরিস্থিতিতে বুধবার ডিএসইতে লেনদেন শুরু হয় বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে লেনদেনের শুরুতে সূচকের ঊর্ধ্বমুখিতার দেখা মিলে। লেনদেনের প্রথম এক ঘণ্টা সূচকের ঊর্ধ্বমুখী ধারা অব্যাহত থাকে।
কিন্তু সকাল ১১টার পর বাজারের চিত্র বদলে যেতে থাকে। দাম বাড়ার তালিকা থেকে একের পর এক প্রতিষ্ঠান দাম কমার তালিকায় চলে। তবে এর মধ্যেও বড় মূলধনের কিছু প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ে। ফলে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমার পরও সূচকের বড় পতন হয়নি।
দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে ১১৮টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। বিপরীতে দাম কমেছে ২১৪টির এবং ৬৪টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমে আসায় দিন শেষে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৫ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ১৮৫ পয়েন্টে নেমে গেছে।
এদিন সূচক পতনের পেছনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার দর কমে আসায়। গতকাল বুধবার লেনদেন শেষে ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার দর কমেছে ২ শতাংশ। আর এতে প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ২ দশমিক ৬৩ পয়েন্ট। এ ছাড়া রবি আজিয়াটার শেয়ার দর কমেছে দশমিক ৬৮ শতাংশ। আর এতে ডিএসইএক্স সূচক কমেছে ১ দশমিক ৭১ পয়েন্ট। এ ছাড়া বিএটিবিসির শেয়ার দর দশমিক ৩৯ শতাংশ কমে আসায় সূচক কমায় ভূমিকা ছিল ১ দশমিক ২৪ পয়েন্ট। পাওয়ার গ্রিডের শেয়ার দর ১ দশমিক ৭৩ শতাংশ কমায় ডিএসইএক্স সূচক কমায় ভূমিকা রেখেছে ১ দশমিক ৫ পয়েন্ট।
অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৯২১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক আগের দিনের তুলনায় দশমিক ৫৪ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ১৫৮ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
মূল্যসূচক কমার পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণও কমেছে। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৩০৭ কোটি ১ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৪২৭ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। সে হিসেবে আগের কার্যদিবসের তুলনায় লেনদেন কমেছে ১২০ কোটি ৫৭ লাখ টাকা।
খাতভিত্তিক লেনদেনে দেখা গেছে, গতকাল বুধবার ডিএসইতে ওষুধ ও রসায়ন খাতের মোট লেনদেন হয়েছে ৪৮ কোটি ১৮ লাখ টাকা। ব্যাংক খাতের মোট লেনদেন হয়েছে ৪৩ কোটি ৪১ লাখ টাকা। প্রকৌশল খাতের মোট লেনদেন হয়েছে ৩৫ কোটি ৪১ লাখ টাকা। বস্ত্র খাতের ২৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকা, খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের ২৩ কোটি ৩৭ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে।
অপর পুঁজিবাজার সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ২২ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ১৮৩টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৭৯টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৭৭টির এবং ২৭টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৪ কোটি ১১ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৬ কোটি ৭৩ লাখ টাকা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।