নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহী নগরীর শিরোইল কাঁচা বাজারের অসহায় চা বিক্রেতা রেনু বেগমের ছোট মেয়ে সোনিয়া এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে। সে এ বছর চুয়াডাঙ্গা সরকারি নার্সিং ইনস্টিটিউটে লেখাপড়ার সুযোগ পেয়েছে। কিন্তু আর্থিক সংকটের কারণে নার্সিংয়ে ভর্তির স্বপ্ন প্রায় ভাঙতে চলছিল। এ নিয়ে সোনিয়া খুব দুশ্চিন্তা ও উৎকণ্ঠায় সময় পার করছিলেন। বিষয়টি জানাজানি হলে সোমবার (১৩ মে) বেলা ১২টায় সোনিয়া ও তার চা বিক্রেতা মা রেনু বেগমকে নিজ কার্যালয়ে ডেকে পাঠান জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ।
এসময় জেলা প্রশাসক অসহায় মা-মেয়ের নিদারুণ জীবন সংগ্রামের কথা শোনেন এবং ভর্তির জন্য ১৫ হাজার টাকার একটি চেক তাদের হাতে তুলে দেন। সেই সঙ্গে দরিদ্র ও অসহায় জীবন সংগ্রামী রেনু বেগমকে আগামী এক মাসের খাদ্য সামগ্রী দেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) কল্যাণ চৌধুরী।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আবেগাপ্লুত হয়ে সোনিয়া জানান, নগরীর ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের হাজরা পুকুর হাউজিং এলাকায় একটি ছোট্ট ঘর ভাড়া নিয়ে চা বিক্রেতা মা ও বড়ো বোনের সাথে নিদারুণ কষ্টের সঙ্গে লড়াই করে জীবন যাপন করছি। আট বছর আগে বাবাকে হারিয়েছি। এরপর থেকে চা বিক্রেতা মা শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়েও সংসারের হাল শক্তভাবে ধরেছেন। প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত শিরোইল কাঁচা বাজারে চা বিক্রি করে চলে আমার মায়ের জীবন জীবিকার সংগ্রাম। শত কষ্টের মাঝেও বড়ো বোন ও আমার লেখাপড়ার খরচ চালাচ্ছেন। আমার বড়ো বোন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিভাগের অনার্স শেষ বর্ষের ছাত্রী।
সোনিয়া আরো জানান, সে ২০২২ সালে নওদাপাড়া আম চত্বরে অবস্থিত শহীদ বুদ্ধিজীবী সরকারি কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছি। এ বছর আমি চুয়াডাঙ্গা সরকারি নার্সিং ইনস্টিটিউটে নার্সিং বিভাগে পড়ালেখা করার সুযোগ পেয়েছি। কিন্তু আর্থিক সংকটের কারণে সেখানে ভর্তি হতে পারছিলাম না। এ অবস্থা জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ স্যার আমার বিপদের কান্ডারী হিসেবে শিক্ষা জীবনে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন।
তিনি আমার নিদারুণ কষ্টের কথা শুনেন এবং তৎক্ষণাৎ নার্সিং বিভাগে ভর্তির স্বপ্ন পূরণ করার জন্য ১৫ হাজার টাকার চেক প্রদান করেন। এছাড়াও তিনি আমার চা বিক্রেতা মায়ের জীবন সংগ্রামের কথা শোনার পর এক মাসের খাদ্য সামগ্রী প্রদান করেন। আমি জেলা প্রশাসক মহোদয়ের প্রতি সারা জীবন কৃতজ্ঞ থাকব। আমি তাঁর দীর্ঘায়ু কামনা করছি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, সোনিয়া একজন মেধাবী ছাত্রী, সে ২০২২ সালে শহীদ বুদ্ধিজীবী সরকারি কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। সে নিদারুণ দারিদ্র্যের মধ্যে থেকেই এ বছর চুয়াডাঙ্গা সরকারি নার্সিং ইনস্টিটিউটে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। কিন্তু আর্থিক সংকটের কারণে এখনো ভর্তি হতে পারেনি। বিষয়টি আমার নজরে আসা মাত্র তৎক্ষণাৎ তাকে ডেকে পাঠাই। তাকে নার্সিংয়ে ভর্তির জন্য ১৫ হাজার টাকার চেক এবং এক মাসের খাদ্য সামগ্রী প্রদান করি। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই ধরনের মানবিক উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।