তাকী জোবায়ের : বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর পদে নিয়োগ দেওয়ার জন্য দুই জন যোগ্য ব্যক্তিকে খুঁজছে সার্চ কমিটি, যাদেরকে এ সপ্তার মধ্যেই নিয়োগ দেওয়া হবে। বর্তমানে নির্বাহী পরিচালক পদে দায়িত্বরতরাও আছেন সার্চ কমিটির নজরে। তবে বাদ যাচ্ছেন বেশ কয়েকজন বিতর্কিত কর্মকর্তা, যারা শেখ হাসিনা সরকারের আমলে ব্যাংক লুটপাটের সহযোগী হয়েছেন।
দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে এ তথ্য।
তথ্যানুযায়ী, বাদের তালিকায় প্রথমেই রয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক। বাংলাদেশ ব্যাংকের সবচেয়ে বড় ‘দুর্নীতিবাজ’ কর্মকর্তা এবং ব্যাংক ‘ডাকাতদের’ সবচেয়ে বড় দোসর হিসেবে অভিযুক্ত হয়েছেন তিনি। বিতর্কিত এস আলম গ্রুপের মুখপাত্র হিসেবেও উপস্থাপন করা হয়েছে তাকে। সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের সাথে তার সখ্যতা এবং পলকের নির্দেশে অনৈতিক উপায়ে মোবাইল আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান নগদের লাইসেন্স দেওয়ার বিষয়ে মেজবাউল হক অভিযুক্ত। পেমেন্ট সিস্টেম ডিপার্টমেন্টের (পিএসডি) দায়িত্বে থাকাকালে অনৈতিক সুবিধার বিনিময়ে তিনি নগদকে লাইসেন্স দিয়েছেন- এমন অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগও আছে এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
নির্বাহী পরিচালক কাজী রফিকুল হাসান বেক্সিমকো গ্রুপ ও এস আলম গ্রুপের ‘একনিষ্ঠ শুভাকাঙ্খী’ হিসেবে অভিযুক্ত। বাংলাদেশ ব্যাংকের চট্টগ্রাম অফিসে দায়িত্ব পালনকালে এস আলম গ্রুপকে বিশেষ সুবিধা দিয়ে ‘আস্থাভাজন’ হয়েছেন। তার অবৈধ সম্পত্তি অর্জনের বিষয়টিও সামনে এসেছে।
আরেক নির্বাহী পরিচালক মো. নুরুল আমিনও বাদের তালিকায় পড়ছেন। এস আলম গ্রুপের ‘আস্থাভাজন’ ও ‘এজেন্ডা বাস্তবায়নকারী’ কর্মকর্তা হিসেবে উঠে এসেছে তার নাম।
তালিকায় আছেন নির্বাহী পরিচালক সাইফুল ইসলাম, যিনি ব্যাংক খাতের সর্ববৃহৎ লুটেরা হিসেবে চিহ্নিত এস আলম গ্রুপের ‘শুভাকাঙ্ক্ষী’ হিসেবে পরিচিত। সহকারী পরিচালক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকে যোগ দিয়ে চারটি ক্যাডার অর্থাৎ ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার পদ পর্যন্ত ব্যাংকিং রেগুলেটরি এন্ড পলিসি ডিপার্টমেন্টে (বিআরপিডি) চাকরি করেন তিনি। বিশেষ ব্যাবসায়ী গ্রুপের আনুকূল্যে তিনি এই অতিগুরুত্বপূর্ণ বিভাগে দীর্ঘদিন চাকরি করেন এবং এই সময়ে ব্যবসায়ী গ্রুপগুলোকে বিশেষ সুবিধা দেওয়ার লক্ষ্যে অনেক প্রজ্ঞাপন জারিতে উদ্যোগী ভূমিকা রাখেন। নির্বাহী পরিচালক হওয়ার পরও এই বিভাগটি তার অধীনে রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের চট্টগ্রাম শাখার নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্বে থাকা আরেফ হোসাইন খান রয়েছেন বাদ পড়াদের তালিকায়। তার বিষয়ে অভিযোগ, তিনি এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদের ‘কাছের’ লোক। বিশেষ তদবিরের মাধ্যমে সাইফুল আলম মাসুদ তাকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চট্টগ্রাম শাখায় নিয়ে গেছেন।
দায়িত্বশীল সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, বিতর্কিত কর্মকর্তার তালিকায় আরো একাধিক ব্যক্তির নাম রয়েছে।
চলতি সপ্তাহেই ডেপুটি গভর্নরদের নিয়োগ :
সবকিছু ঠিক থাকলে চলতি সপ্তাহেই সম্পন্ন হবে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নরদের নিয়োগ। বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান ও সাবেক কয়েকজন নির্বাহী পরিচালকদের কাছ থেকে বায়োডাটা সংগ্রহ করেছে সার্চ কমিটি। দুই থেকে তিন দিনের মধ্যেই কাজ শেষ করার কথা জানিয়েছেন সার্চ কমিটির আহবায়ক মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী। এখন দুইজন ডেপুটি গভর্নর নিয়োগ দেওয়া হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান ও সাবেক নির্বাহী পরিচালকদের পাশাপাশি বাহির থেকেও যোগ্য লোক খুঁজে বের করার চেষ্টা চালাচ্ছে কমিটি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।