জুমবাংলা ডেস্ক : কারাগারে মাদকাসক্ত বন্দি দিন দিন বাড়ছে। নানামুখী উদ্যোগ নিলেও মাদকের লাগাম টানা যাচ্ছে না। বন্দিরা যখন কারাগারে ঢুকছে তখন বিভিন্ন কৌশলে মাদক নিয়ে কারাগারে মধ্যে যাচ্ছে। খাবারের মধ্যে, পায়ুপথে এমনকি পানির বোতলের মধ্যে কোনো কোনো মাদকাসক্ত বন্দি ইয়াবা ট্যাবলেট নিয়ে প্রবেশ করছে। তাদের এ মাদক নিয়ে যাওয়ার পেছনে কারাগারের এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারী জড়িত। তারাও কেউ কেউ মাদক সেবনের সঙ্গে জড়িত। দেশে ১৩ টি কেন্দ্রীয় কারাগারসহ ৬৮টি কারাগারে গত ২১শে জানুয়ারি পর্যন্ত বন্দি রয়েছে ৮২ হাজার ৬৫৪ জন। এ সংখ্যা কখনও কখনও ৯০ হাজারের ওপরও ছাড়িয়ে যায়।
মোট বন্দির প্রায় ২৫ হাজার মাদক মামলার আসামি। ইতিমধ্যে মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে বেশ কয়েক জন কারারক্ষীকে বরখাস্ত ও তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কারাগারকে মাদকমুক্ত করার জন্য কারারক্ষীদের ডোপ টেস্ট করার উদ্যোগ নিয়েছে কারা অধিদপ্তর। প্রায় ১২ হাজার স্টাফ ও কারারক্ষীর ডোপ টেস্ট করা হবে। যেসব কর্মকর্তা ও কর্মচারীর মাদক সেবনের অভিযোগ পাওয়া যাবে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে কারা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক কর্নেল মো. আবরার হোসেন জানান, ‘কারাগারের স্টাফ ও কারারক্ষীদের ডোপ টেস্টের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে।’
কারা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, কারাগারে দিন দিন মাদকাসক্ত বন্দিদের সংখ্যা বাড়ছে। মাদকাসক্ত বন্দি ও অনেক হাজতি ও কয়েদি মাদক সেবন না করতে পারায় কারা অধিদপ্তরের প্রণীত শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেন। আচরণ স্বাভাবিক থাকে না। কেউ কেউ কলহ ও হাতাহাতির মধ্যে জড়িয়ে পড়ে। এতে বেকায়দায় পড়েন কারা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
মাদকাসক্ত বন্দিরা কারা অভ্যন্তরে দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তারক্ষীদের আদেশ ও নিষেধ অমান্য করে তাদের সঙ্গেও তর্কে জড়ায়। মাদকাসক্ত অনেক বন্দি কারাগারের মধ্যে বিভিন্ন কৌশলে মাদক ব্যবসা চালায়। এর পেছনে কিছু অস্বাধু কারারক্ষীদের যোগসাজশ রয়েছে। এমনকি মাদকাসক্ত বন্দিদের নজরদারি করতে গিয়ে অনেক কারারক্ষীও মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে যান বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সূত্র জানায়, দেশের কারাগারগুলোতে প্রতিদিন নতুন করে যুক্ত হচ্ছে মাদক মামলার আসামি। তারা কারাগারে আসার পরও মাদক সেবনের চাহিদা থাকে। ওইসব বন্দিরা যে কোনোভাবেই মাদক সেবন করতেই হবে এমন চাহিদা থাকে। যেসব বন্দিকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয় সেসব বন্দিকে কারাগারে ঢোকানোর আগে দেহ তল্লাশি করা হয়। কিন্তু, পেট বা পায়ুপথে বহন করা মাদক শনাক্তের কোনো স্ক্যানিং মেশিন কারাগারগুলোতে নেই। এ সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছে এক শ্রেণির বন্দি। তারা পেটে ও পায়ুপথে করে মাদক নিয়ে কারাগারে প্রবেশ করছে।
সূত্র জানায়, কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রায় ৮ হাজার বন্দির মধ্যে ৩ হাজার বন্দিই মাদকাসক্ত। কেউ মাদক নিয়ে পুলিশের কাছে ধরা পড়ে কারাগারে এসেছে। কেউ মাদক সেবন করার জন্য কারাগারে এসেছে। এসব বন্দিকে নেশার জগৎ থেকে ফিরিয়ে আনতে প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি মনিটরিং টিম রয়েছে। আবার কারাগারের কিছু অসাধু স্টাফ, কারারক্ষী ও মাদক মনিটরিং টিমের সদস্যদের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসা চালানোর অভিযোগ রয়েছে।
সূত্র জানায়, ইতিমধ্যে কারাগারের স্টাফ ও কারারক্ষীদের ডোপ টেস্টের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। সে কারণে যেসব ব্যক্তি সন্দেহভাজন রয়েছে, তাদের গতিবিধি ও চলাফেরা নজরদারি করা হচ্ছে।
কারা কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে কারাগারের মধ্যে মাদক বন্ধে নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে। যেসব সন্দেহভাজন বন্দি কারাগারে রয়েছে তাদের সর্বক্ষণ নজরদারি করা হচ্ছে। সীমানা প্রাচীর দিয়ে যাতে কোনোভাবে মাদক ঢুকতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখছে তারা। এছাড়াও একজনের মাদক যাতে অন্য জনের হাতে না যায় সেদিকেও তারা ২৪ ঘণ্টা মনিটরিং করছে। এছাড়াও মাদকাসক্ত বন্দিদের মাদক ছাড়াতে নানামুখী মোটিভেশন প্রোগ্রাম হাতে নেয়া হয়েছে। সম্প্রতি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আহছানিয়া মিশন মাদক বিষয়ে বন্দিদের সচেতন করার জন্য একটি সেমিনারের আয়োজন করেছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।