জুমবাংলা ডেস্ক: বান্দরবানে জামছুড়িতে পাহাড়ি আবহাওয়ায় লাল, হলুদ, সাদাসহ সাত জাতের ড্রাগন ফলের পাশাপাশি আম, কমলা, পেয়ারা চাষ করে কোটিপতি হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন মং মং সিং মার্মা। ইতোমধ্যে নিজের স্বপ্নের পথে এগিয়ে চলার পাশাপাশি তিনি অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছেন স্থানীয়দের কাছে।
মাস্টার্স পাস করার পরে মং মং সিং একটি এনজিও প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। চাকরির পাশাপাশি শখেরবশে ২০২০ সালে বেশ কিছু ড্রাগন গাছ লাগান। পরে বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখেন তিনি। এভাবে তিন বছরে পাঁচ একর পাহাড়ি ঢালু জমিতে ৬ হাজার ড্রাগনের গাছ লাগান।
ড্রাগনচাষি মং মং সিং মার্মার বাগানে গিয়ে দেখা যায়, আট জন শ্রমিক ড্রাগন ফল ছিঁড়তে ব্যস্ত রযেছেন। কেউ কাঁধে ড্রাগন ফলভর্তি থুরুং নিয়ে যাচ্ছেন, আবার কেউ ফলগুলো প্রক্রিয়াজাত করছেন। তাঁর বাগানে পাঁচ জন নারী ও তিন জন পুরুষ নিয়মিত কাজ করেন। এলাকায় ড্রাগন ফলের বাগান হওয়ায় অনেক নারী-পুরুষের কাজের সুযোগ হয়েছে বলে জানান বাগানের শ্রমিকরা।
এ সময় কথা হয় ড্রাগনচাষি মং মং সিং মার্মার সঙ্গে। তিনি বলেন, বছরের মে থেকে অক্টোবর পর্যন্ত প্রতি মাসে দুই বার ফল তুলতে পারেন। প্রতি চালানে দুই থেকে তিন টন ড্রাগন ফল তোলেন। এ বছর ফলন ভালো হওয়ায় ১৫ টন ড্রাগন তুলতে পারবেন বলে আশা করেন তিনি।
২০২০ সালে ভিয়েতনামের লাল ড্রাগন ফলের চারা সংগ্রহ করে চাষ শুরু করেন মং মং চিং। পরে সাদা, হলুদসহ সাত প্রকারের ড্রাগন চারা সংগ্রহ করে ৫ একর পাহাড়ি জমিতে গাছ রোপণ করেন। পরে তার বাগানে আস্তে আস্তে পিলারের সংখ্যা বাড়তে থাকে। বর্তমানে ১ হাজার ৩৫০ পিলারে ৬ হাজার ড্রাগন গাছ রয়েছে। রোপণের বছর দেড়েক পরে ফল আসতে শুরু করে। শুরুর দিকে না হলেও এ বছর ভালো ফলন হওয়ায় ১৫ টন ড্রাগন বিক্রয় করতে পারবেন বলে আশা করছেন। গত বছর ৯ টন ১৩ লাখ টাকার ফল বিক্রয় করেন। এ বছর ২০ লাখ টাকা বিক্রয় করতে পারবেন বলে আশা করছেন। তার বাগান থেকে আগ্রহী চাষিদের ড্রাগনের কাটিং বিক্রয় করে বাড়তি উপার্জনের পথও রয়েছে।
মং মং চিং জানান, কৃষি উপকরণ, সার ও কীটনাশকের দাম বেড়ে যাওয়ায় চাষিদের লাভ কম হচ্ছে। তবে ড্রাগন বাগানে ভালো পরিচর্যা ও সময় দিলে কোটি টাকাও আয় করা সম্ভব।
ড্রাগন ফল পাইকারি ক্রেতা উত্তম দাশ বলেন, বান্দরবানে তিন-চার বছর ধরে প্রচুর পরিমাণে ড্রাগন ফল উৎপাদন হচ্ছে। রুমা, থানছি, রোয়াংছড়িসহ বান্দরবান সদরের আশপাশে বিভিন্ন স্থানে বড় বড় ড্রাগন ফলের বাগান রয়েছে। তিনি ওইসব বাগান থেকে ফল সংগ্রহ করে দেশে বিভিন্ন শহরে সরবরাহ করেন। তবে ওইসব ফল সংগ্রহ করতে জেলা পরিষদকে দুই বার টোল দিতে হয়। এছাড়া রাস্তায় বিভিন্ন গ্রুপকে চাঁদা দিতে হয়।
বান্দরবানের কৃষি উপপরিচালক এম এম শাহ্ নেয়াজ বলেন, পার্বত্য অঞ্চলে কলা, আম, কাঁঠাল, আনারস, কাজুবাদাম, কফির সঙ্গে ড্রাগন ফলের চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০২১-২২ সালে বান্দরবান জেলায় ৩৫ হেক্টর জমিতে ড্রাগন ফলের চাষ হয়। এ বছর ৫০ হেক্টরে ড্রাগন ফলের বাগান হয়েছে। প্রতি হেক্টরে ৫-৬ টন ফলন হয়ে থাকে। এই ফলের চাহিদা সারা দেশে রয়েছে। সঠিকভাবে বাজারজাতকরণ করতে পারলে চাষিরা বেশি লাভবান হবে বলেও মনে করেন তিনি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।