মো. রাকিবুল ইসলাম, জাতিসংঘ সদর দপ্তর থেকে : অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মূহাম্মদ ইউনূস জাতিসংঘের ৭৯তম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে অবস্থান করছেন। এর আগেও অনেকবার সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিয়েছেন অতিথি হিসেবে কিংবা বিশেষ বক্তা হিসেবে। তবে এবারের অংশগ্রহণ অনেকটা ব্যাতিক্রম। সরকার-প্রধান হিসেবে এই প্রথম তাঁর অংশগ্রহণ পুরো অধিবেশনকে মহিমান্বিত করেছে। এবারের অধিবেশনে সবার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু ড. মূহাম্মদ ইউনূস।
বলা যায়, ইউনূসময় জাতিসংঘের ৭৯তম অধিবেশন। বিভিন্ন অনুষ্ঠান কিংবা অধিবেশনের ফাঁকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু প্রফেসর ইউনূস। এসময় তাদের মধ্যে ড. ইউনূসের সাথে ছবি তোলা, দেখা করা ও কথা বলার তীব্র আগ্রহ পরিলক্ষিত হয়েছে।
ইতোমধ্যে সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে প্রধান উপদেষ্টা ড. মূহাম্মদ ইউনূস ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেছেন। যা গত তিন দশকের মধ্যে একটি বিরল ঘটনা। বৈঠকে ড. ইউনূস এবং তার নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি মার্কিন সরকারের পূর্ণ সমর্থনের কথা জানান বাইডেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট যেকোনো সাহায্যের জন্য বাংলাদেশ সরকারের পাশে থাকারও অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
এসময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন হৃদ্যতাপূর্ণ আলিঙ্গনে ড. মূহাম্মদ ইউনুসকে বুকে টেনে নিয়েছেন। যা তার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার ইঙ্গিত বহন করে।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোও সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এর সাথে। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত সংক্ষিপ্ত এ বৈঠকে দুই নেতা বাংলাদেশ-কানাডা সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় করার উপায়, জনসাধারণের স্বাধীনতা আরও বিস্তৃত করা, প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার এবং বাংলাদেশের যুবসমাজকে সহায়তা করার বিষয়ে আলোচনা করেন। এ সময় অধ্যাপক ইউনূস কানাডার প্রধানমন্ত্রীর হাতে ‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’ শীর্ষক আর্টবুক উপহার দেন। এতে বাংলাদেশে বিপ্লব চলাকালীন ও পরবর্তী সময়ে শিক্ষার্থী ও তরুণদের আঁকা বর্ণিল গ্রাফিতি স্থান পেয়েছে।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বের প্রশংসা করেন এবং বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের ক্ষেত্রে সহযোগিতার আশ্বাস দেন। এ সময় বাংলাদেশের প্রতি কানাডার বন্ধুত্ব এবং অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি কানাডা সরকারের সমর্থনের জন্য প্রশংসা করেন ড. ইউনূস। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য আরও ভিসা দিতে কানাডার প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করেন তিনি। সাক্ষাতে ড. ইউনূসের সামনে জাস্টিন ট্রুডোর নতজানু এপ্রোচ বিশ্বকে বিমোহিত করেছে।
ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির সঙ্গেও বৈঠক হয়েছে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের। মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে উভয় নেতা অভিবাসন নিয়ে আলোচনা করেছেন। একইসঙ্গে আরও বেশি সংখ্যক বাংলাদেশি যেন বৈধভাবে ইতালিতে যাওয়ার ও কাজের সুযোগ পায় সেই আহ্বান জানিয়েছেন ড. ইউনূস। এসময় বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের ‘নতুন অধ্যায়’ দেখার আগ্রহের কথা জানিয়েছেন ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি। তিনি বলেন, ইতালীয়রা বাংলাদেশিদের বন্ধু। অনেক বাংলাদেশি অবৈধভাবে ইতালিতে যাওয়ার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ পথ অবলম্বন করেন, তাই ড. ইউনূস বৈধ বা আইনি উপায় খোঁজার কথা জানিয়েছেন। যাতে আরও বেশি বাংলাদেশি ইতালিতে গিয়ে কাজ করতে পারেন। প্রধানমন্ত্রী মেলোনিকে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে সহায়তার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে এ সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং শেহবাজ শরীফ বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানের মধ্যেকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ও সহযোগিতা পুনরুজ্জীবিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষ প্লাটফর্ম সার্ক-কে পুনরুজ্জীবিত করার আহ্বান জানান এবং এক্ষেত্রে পাকিস্তানের সহযোগিতা চান প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস।
ক্লিনটন গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ ২০২৪ এর এক বৈঠকে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের সঙ্গে একই মঞ্চে দেখা যায় বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে। এছাড়া জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন ড. ইউনূস।
রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে জাতিসংঘের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গেও বৈঠক হয়েছে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের। জাতিসংঘ সদর দপ্তরে এ বৈঠক করেন তিনি। এতে মিয়ানমার বিষয়ক জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূত জুলি বিশপ, জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্রান্ডি উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশের পক্ষে প্রধান উপদেষ্টার পাশাপাশি পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনসহ সংশ্লিষ্ট শীর্ষ কর্মকর্তারাও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। এ সময় বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের বিষয়ে আলোচনা করেন তারা। রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে আন্তর্জাতিক কনফারেন্স করতে জাতিসংঘের মহাসচিবকে প্রস্তাবও দিয়েছন ড. ইউনুস।
প্রধান উপদেষ্টা মঙ্গলবার জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস আয়োজিত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগদানের মাধ্যমে জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের কর্মসূচি শুরু করেছিলেন। সংবর্ধনায় তিনি বেশ কয়েকজন বিশ্বনেতার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এছাড়া তিনি জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের উদ্বোধনী অধিবেশনে যোগদান করেছেন।
এছাড়া ব্রাজিলের প্রধানমন্ত্রী লুইজ ইনাসিও লুলা ডা সিলভা, বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট অজয় বাঙ্গা, জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার প্রধান ভলকার তুর্ক প্রমুখের সঙ্গে ড. ইউনূসের দেখা হয়েছে।
অন্যদিকে, আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর সকালে ড. ইউনূস সাধারণ অধিবেশনে বক্তব্য দেবেন বলে জাতিসংঘ সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে। আজ ২৫ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় স্বাগতিক দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রদত্ত ডিনার পার্টিতে অন্য সদস্য রাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলের নেতাদের সঙ্গে ড. ইউনূসও অংশ করেছেন। প্রেসিডেন্ট বাইডেন ও ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেন ডিনার পার্টিটিতে সবাইকে স্বাগত জানিয়েছেন। এ সময় অতিথিদের সঙ্গে ফটোসেশনেও অংশগ্রহণ করেছেন ফার্স্টলেডি ও প্রেসিডেন্ট।
তাছাড়া নেদারল্যান্ডস ও নেপালের প্রেসিডেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ড. ইউনূসের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। সেই সঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের সঙ্গেও বৈঠকের সম্ভাবনা রয়েছে ড. ইউনূসের। সময় স্বল্পতার কারনে অনেক বৈঠক ও অনুষ্ঠান বাদ দিতে হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট সূত্র। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনে যোগ দিতে অধ্যাপক ইউনূস সোমবার নিউইয়র্ক পৌঁছান। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের আমন্ত্রণে তিনি সংস্থাটির ৭৯তম অধিবেশনে যোগদান করেন।
বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ক ‘পুনরুজ্জীবন’ অত্যন্ত জরুরি : শাহবাজ শরিফ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।