কেউ কেউ এতোটাই নির্লজ্জ বেশরম যে অবাক হয়ে ভাবতে থাকি! কতোটা প্রতারক মিথ্যুক হলে নিজের জবানবন্দিকেই বেমালুম অস্বীকার করে যায়! মিথ্যার উপর দাঁড়িয়ে চিৎকার করে সত্যকে কবর দেবার চেষ্টা চালায়। যা বলেছে অবলীলায়, যা দেখেছি চোখের সামনে নির্মোহ ভাবে, তাই অস্বীকার করে বসে! তাজ্জব হই করোনাকালেও এমন অসত্য ভাষণে। আজন্ম সস্তা মর্যাদাহীন কাঙ্গালের দাসত্বের জীবন ভোগ করেছে করুণায় লোভে মেরুদন্ডহীনের মতোন। যে পথে গেছে কেবল চিরকাল কুৎসিত নরকের অসম্মান জুটেছে কপালে।
তবু সবখানে সস্তা ব্যক্তিত্বহীনের জীবন ভোগ করেও গ্লানি নয়, গৌরববোধ করেছে! কতো দরোজায় দরোজায় ঘুরেছে করুণ চেহারায় ভিখেরির মতোন! আহারে নষ্টদের সাথে সকাল রাত্রি, মূল্যবোধহীন রুচিহীন জীবনভোগ করেছে। রাস্তার পরিত্যক্ত নাম পরিচয়হীন চরিত্রহীনদের কাছে বারবার করুণা ভিক্ষে চেয়েও কখনো অনুতপ্ত হয়নি। সেও মিথ্যার আড়ালে কদর্য চেহারা লুকাতে চায়! বড় কথা বলে!
না পারিবারিক শিক্ষা, না সামাজিক মূল্যবোধ, না ছিলো রক্ষণশীলতার পাঠ। কেবল আবেগহীন হিসেবি চতুর শেয়ালের মতোন স্বার্থে অন্ধই থেকেছে। মানসিক দারিদ্র বিবেকহীন চোখে নেই রক্ত। সকালে যাকে গালি দেয় বিকেলেই স্বার্থে পা ধরে, বাপ ডাকে। সমাজে এসব নষ্টরা যখন বড় গলায় কথা বলে, ইচ্ছে করে কুৎসিত চেহারাটা উন্মোচিত করি।বিশ্বাসঘাতক অকৃতজ্ঞ লোভী নষ্টরা আসলে মানুষের হাটুর নীচেই শোভা পায়। করুণায় তখন আমি সেখানেই রেখে দেই। আর ঘেন্না করতেও যখন লজ্জা লাগে তখন অবজ্ঞায় কবিতায় আশ্রয় নেই। কবিতাতো নির্মল আশ্রয়। শক্তি।
‘মানুষ বড় কাঁদছে, তুমি মানুষ হয়ে পাশে দাঁড়াও,
মানুষই ফাঁদ পাতছে, তুমি পাখির মতো পাশে দাঁড়াও,
মানুষ বড় একলা, তুমি তাহার পাশে এসে দাঁড়াও।
তোমাকে সেই সকাল থেকে তোমার মতো মনে পড়ছে,
সন্ধে হলে মনে পড়ছে, রাতের বেলা মনে পড়ছে।
মানুষ বড় একলা, তুমি তাহার পাশে এসে দাঁড়াও,
এসে দাঁড়াও, ভেসে দাঁড়াও এবং ভালোবেসে দাঁড়াও,
মানুষ বড় কাঁদছে, তুমি মানুষ হয়ে পাশে দাঁড়াও’।
বিশ্ববিদ্যালয়েই শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতার প্রেমে পড়ি। কতো পাঠ করেছি তখন। একজনকে একবার শক্তির ‘যেতে পারি কিন্তু কেনো যাবো? কবিতার তরতাজা বইটি দিয়েছিলাম।পরে দেখেছি সে কবিতায় নয়, অন্য কিছুতে ডুবতেই পছন্দ করেছে। এক দুখানা কবিতা উপন্যাস পাঠ ছিলো ফ্যাশন। মনের ক্ষিধে তার সাহিত্যের রসবোধে ছিলোনা। সমাজে বাস করার মুখোশমাত্র। জীবনদর্শনেরও গভীরতা কখনো ছিলোনা। নীতিহীন লাভ আর লোভ বড় ছিলো।
‘ভাবছি, ঘুরে দাঁড়ানোই ভালো।
এতো কালো মেখেছি দু হাতে
এতোকাল ধরে!
কখনো তোমার ক’রে, তোমাকে ভাবিনি।
এখন খাদের পাশে রাত্তিরে দাঁড়ালে
চাঁদ ডাকে : আয় আয় আয়
এখন গঙ্গার তীরে ঘুমন্ত দাঁড়ালে
চিতাকাঠ ডাকে : আয় আয়
যেতে পারি
যে-কোন দিকেই আমি চলে যেতে পারি
কিন্তু, কেন যাবো?
সন্তানের মুখ ধরে একটি চুমো খাবো
যাবো
কিন্তু, এখনি যাবো না
তোমাদেরও সঙ্গে নিয়ে যাবো
একাকী যাবো না, অসময়ে।’
পশ্চিমবঙ্গের জয়নগরে তাঁর জন্ম। দারিদ্রতার কারণে প্রেসিডেন্সিতে স্নাতক শেষ করতে পারেননি। শুরু করেন সাহিত্য চর্চা। প্রথমে স্ফুলিঙ্গ সমাদ্দার নামে গল্প লিখতেন। প্রথম উপন্যাস লেখেন ‘কুয়োতলা’। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই কবিতা তাঁকে টানে। সেই সময় কৃত্তিবাস পত্রিকায় লিখে খ্যাতি পান। হাংরি আন্দোলনের পুরোধা ছিলেন তিনি। প্রবল দারিদ্রতার মধ্যে দিন কাটাতে হত তাঁকে। এমনও শোনা যায় যে, দুপুরে কবির বাড়ি উপস্থিত হলে দুটো ভাত বেড়ে দেওয়ার নিশ্চয়তা না থাকলেও; অনায়াসে দুটো কবিতা বেড়ে দিতে পারতেন।
শক্তি তাঁর কবিতাকে কবিতা বলতেন না। বলতেন পদ্য। আর লিখতে পারতেন খুব দ্রুত। লেখায় কাটা ছেঁড়া করতেন না। তাঁর কবিতায় উঠে আসে সমাজ জীবন, নারী, প্রেম, বিরহ, ভালোবাসা, প্রতিবাদ সব। সাবলীল ভাষায় অসাধারণ লিখে যেতেন তিনি। আপাদমস্তক ছিলেন কবি। বোহেমিয়ান।
‘অবনী বাড়ি আছো?
দুয়ার এঁটে ঘুমিয়ে আছে পাড়া
কেবল শুনি রাতের কড়ানাড়া
‘অবনী বাড়ি আছো?’
বৃষ্টি পড়ে এখানে বারোমাস
এখানে মেঘ গাভীর মতো চরে
পরাঙ্মুখ সবুজ নালিঘাস
দুয়ার চেপে ধরে–
‘অবনী বাড়ি আছো?’
আধেকলীন হৃদয়ে দূরগামী
ব্যথার মাঝে ঘুমিয় পড়ি আমি
সহসা শুনি রাতের কড়ানাড়া
‘অবনী বাড়ি আছ?’
‘ভালোবাসা পেলে সব লন্ডভন্ড করে চলে যাবো
যেদিকে দুচোখ যায়- যেতে তার খুশি লাগে খুব ।
ভালোবাসা পেলে আমি কেন পায়সান্ন খাবো
যা খায় গরিবে, তাই খাবো বহুদিন যত্ন করে ।
ভালোবাসা পেলে আমি গায়ের সমস্ত মুগ্ধকারী
আবরণ খুলে ফেলে দৌড় ঝাঁপ করবো কড়া রোদে…
ভালোবাসা পেলে জানি সব হবে । না পেলে তোমায়
আমি কি বোবার মতো বসে থাকবো-
ভালোবাসা না পেলে কি আমার এমনি দিন যাবে
চোরের মতন, কিংবা হাহাকারে সোচ্চার , বিমনা–
আমি কি ভীষণ ভাবে তাকে চাই ভালোবাসা জানে’।
লেখক: নির্বাহী সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন
(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।