২০২৪ সালেপড়েছে। তিস্তা বাঁধের সমস্যা, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এবং অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের ফলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বন্যার পরিস্থিতি চরমে পৌঁছেছে। এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেশের অর্থনীতি, কৃষি, এবং মানুষের জীবনযাত্রাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। প্রতি বছর খরা এবং বন্যা বাংলাদেশের উন্নয়ন পরিকল্পনাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে, যার ফলে দেশটি তার উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জন করতে পারছে না। ভারতকে তিস্তা সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসতে হবে এবং বাংলাদেশ সরকারকে অবিলম্বে তিস্তা নদী ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
তিস্তা বাঁধ: বাংলাদেশের জন্য একটি বিপর্যয়
তিস্তা বাঁধ প্রকল্পের কারণে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে পানি সরবরাহে গুরুতর বৈষম্য দেখা দিয়েছে। ভারতের এই বাঁধের মাধ্যমে তিস্তার পানির বড় একটি অংশ আটকানো হচ্ছে, যার ফলে শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশের তিস্তা নদীতে পানি প্রবাহ কমে যাচ্ছে। তবে বর্ষাকালে যখন বাঁধ খুলে দেওয়া হয়, তখন অতিরিক্ত পানি হঠাৎ বাংলাদেশে প্রবাহিত হয়ে ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি করে।
এই বাঁধের প্রভাব সারা বছরব্যাপী দেখা যায়। শুকনো মৌসুমে পানি সংকটের কারণে কৃষি জমি শুকিয়ে যায় এবং ফসল উৎপাদনে বড় ধরনের বাধার সৃষ্টি হয়। অপরদিকে, বর্ষাকালে হঠাৎ পানির প্রবাহে নদীর তীরবর্তী এলাকাগুলিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়, যার ফলে বহু মানুষ ঘরবাড়ি হারায় এবং তাদের জীবিকা নির্বাহের জন্য অন্যত্র যেতে বাধ্য হয়।
জলবায়ু পরিবর্তন: বাংলাদেশের বন্যার ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বর্ষাকালে অতিবৃষ্টি এবং শুকনো মৌসুমে দীর্ঘ খরা দেখা দিচ্ছে। ২০২৪ সালে বাংলাদেশে অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের কারণে দেশের নদীগুলি দ্রুত উপচে পড়ছে, যার ফলে ভয়াবহ বন্যা সৃষ্টি হচ্ছে। বন্যার কারণে কৃষি জমি এবং ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে, যা দেশের খাদ্য নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলছে। এছাড়াও, বন্যার কারণে সড়ক, ব্রিজ এবং অন্যান্য অবকাঠামোগুলির ব্যাপক ক্ষতি সাধন হচ্ছে, যা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।
সিলেটের বন্যা: বিশেষ পরিস্থিতি
সিলেট অঞ্চলে প্রতি বছর বন্যা দেখা দেয়, এবং ২০২৪ সালেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। পার্বত্য অঞ্চলে অতিবৃষ্টি এবং পানি নিসৃত হওয়ার ফলে সিলেটের নদীগুলিতে হঠাৎ পানির প্রবাহ বৃদ্ধি পায়। এর ফলে সিলেটের নিম্নাঞ্চলে ব্যাপক জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়, যার ফলে এলাকার রাস্তাঘাট, বাড়িঘর এবং কৃষি জমির ব্যাপক ক্ষতি হয়।
উপকূলীয় অঞ্চলে সমস্যা
অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাত এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকাগুলিও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। উপকূলীয় মাটি দ্রুত সাগরে মিশে যাচ্ছে, যার ফলে এই এলাকাগুলি দ্রুত নিমজ্জিত হচ্ছে। এর ফলে স্থানীয় বাসিন্দারা ঘরবাড়ি হারাচ্ছে এবং তাদের জীবিকা নির্বাহের জন্য নতুন স্থানে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ছে।
সার্বিকভাবে বাংলাদেশের পরিস্থিতি
২০২৪ সালে বাংলাদেশের বন্যা পরিস্থিতি চরম আকার ধারণ করেছে। তিস্তা বাঁধের সমস্যা, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এবং অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের কারণে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিচ্ছে। এই বন্যার ফলে দেশের অর্থনীতি, কৃষি, এবং মানুষের জীবনযাত্রা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
প্রতি বছর খরা এবং বন্যা যদি বাংলাদেশের উন্নয়ন পরিকল্পনাকে ধ্বংস করে, তবে দেশটি কখনোই তার উন্নয়নের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে না। ভারতের উচিত তিস্তা সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসা এবং বাংলাদেশ সরকারের উচিত তিস্তা নদী ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা অবিলম্বে গ্রহণ করা। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কমাতে এবং তিস্তা বাঁধ সমস্যার সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে, যাতে বাংলাদেশের উন্নয়ন পরিকল্পনা সফলভাবে বাস্তবায়িত হতে পারে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।