ধর্ম ডেস্ক : রোজা ফরজ হওয়ার পর নবীজি (স.) ৯টি রমজান পেয়েছেন। ওই সব রমজানই তিনি গ্রীষ্মকালে পেয়েছেন। নবী (স.) ও সাহাবায়ে কেরাম গরমের মৌসুমেই স্বাচ্ছন্দ্যে রোজা, তারাবিহসহ সব ইবাদত চালিয়ে গেছেন। তারা গরমকালের কষ্টদায়ক রোজায় বেশি খুশি থাকতেন। কারণ, এ সময় দিন বড় থাকে। ফলে বিভিন্ন আমল বেশি করা যায়। গরমে কষ্ট বেশি হতো আর আল্লাহর জন্য কষ্ট করতে পেরে তারা গর্ববোধ করতেন।
উপরন্তু কেউ যদি প্রচণ্ড রোদ-গরম, পরিশ্রমের কাজ অথবা লম্বা দিন হওয়ার পরও কষ্ট করে রোজা রাখে, তাহলে কষ্ট অনুযায়ী মহান আল্লাহ তাকে বেশি সওয়াব দান করবেন।
কেননা, হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল (সা.) ওমরা আদায়ের ক্ষেত্রে আয়েশা (রা.)-কে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘তোমার কষ্ট ও খরচ অনুযায়ী তোমাকে সওয়াব দেওয়া হবে।’ (বুখারি: ১৭৮৭)
তাপমাত্রা অতিমাত্রায় বৃদ্ধি পেলে নবীজি (সা.) কখনো কখনো শারীরিক শীতলতার জন্য মাথায় বা শরীরে পানি দিতেন। ভেজা কাপড় দিয়ে শরীর মুছতেন।
তাবেয়ি হজরত আবু বকর ইবনে আবদুর রহমান (রহ.) একজন সাহাবি থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, মক্কা বিজয়ের বছর এক সফরে আমি রাসুলুল্লাহ (স.)-কে লোকদের প্রতি রোজা ভঙ্গের নির্দেশ দিতে দেখেছি। তিনি বলেছেন, দুশমনের মোকাবিলায় তোমরা শক্তি সঞ্চয় করো। অবশ্য রাসুল (সা.) নিজে রোজা রেখেছেন।
আবু বকর (রহ.) বলেন, হাদিস বর্ণনাকারী সাহাবি বলেছেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে ‘আল-আর্জ’ নামক স্থানে পিপাসার কারণে বা গরমের তীব্রতায় রোজা অবস্থায় তার মাথায় পানি ঢালতে দেখেছি। (আবু দাউদ: ২৩৬৫)
এ হাদিসের ব্যাখ্যায় ‘আউনুল মাবুদ’ গ্রন্থে বলা হয়েছে, এতে দলিল পাওয়া যায় যে, রোজাদারের জন্য গায়ের কিছু অংশে অথবা সারা শরীরে পানি ঢেলে গরম দূর করা জায়েজ আছে। অধিকাংশ আলেম এ মতই পোষণ করেন। দৈহিক প্রশান্তি ও স্বস্তি লাভের জন্য এমনটা করা দোষের কিছু নয়। এর ফলে রোজাদারের ইবাদতের স্পৃহা বাড়বে। পূর্ণ গোসল, কাপড় ভেজানো, পানিতে ডুব দেওয়া সবই মাথায় পানি ঢালার হুকুমভুক্ত।
সাহাবায়ে কেরামদের থেকেও গরমে এভাবে শারীরিক শীতলতা অবলম্বনের বর্ণনা পাওয়া যায়। ইমাম বুখারি (রহ.) বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) রোজা থাকাবস্থায় কাপড় ভিজিয়ে সেটা গায়ে দিয়েছেন। ইমাম শাবী রোজা রেখে হাম্মামখানা বা গোসলখানায় প্রবেশ করেছেন। ইমাম হাসান বলেন, ঠান্ডার জন্য গোসল করা রোজাদারের জন্য জায়েজ।
আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী (রহ.) বলেন, ইমাম বুখারি বিশেষ কোনো গোসলের কথা উল্লেখ না করে সাধারণভাবে গোসলের কথা বলেছেন, যাতে এর মধ্যে রোজাদারদের জন্য সুন্নত গোসল, ফরজ গোসল ও জায়েজ গোসল অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়।
(ফাতহুল বারি)
গ্রীষ্মের রোজার আরেকটি উপকার হচ্ছে, তীব্র গরম জাহান্নামের তীব্রতার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। কাজেই অতি গরমে জাহান্নামের কথা স্মরণ করে মহান আল্লাহর কাছে জাহান্নাম থেকে মুক্তি চাওয়া উচিত।
হাদিস অনুযায়ী, আল্লাহর কাছে এই দোয়া করা উচিত যে, ‘আসতাগফিরুল্লাহাল আজিমাল্লাজি লা-ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়ুল কাইয়ুম ওয়া আতুবু ইলাইহি।’
অর্থ: ‘মহান আল্লাহর কাছে আমি ক্ষমা চাই, যিনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, যিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী এবং আমি তার কাছে তওবা করি।’
জায়েদ (রা.) রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছেন, যে ব্যক্তি এই দোয়া পড়ে, তাকে ক্ষমা করে দেয়া হয়, যদিও সে রণক্ষেত্র থেকে পলায়ন করে থাকে। (তিরমিজি: ৩৫৭৭)
আর রমজানের শেষ দশটি রাতে একটি দোয়া অধিক পরিমাণে পাঠ করা উচিত। দোয়াটি হল— ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা ‘আফুউ-উন কারীম, তুহিব্বুল ‘আফওয়া ফা’ফু ‘আন্নী’।
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! তুমি ক্ষমাশীল, মহানুভব! তুমি ক্ষমা করতে পছন্দ কর। অতএব, আমাকে ক্ষমা করে দাও।’
আয়েশা (রা.) বলেন, আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আমি যদি বুঝতে পারি, কোন রাতটি লাইলাতুল কদর, তাহলে ওই রাতে কী বলব?’ নবীজি তখন এই দোয়াটি পড়তে বলেন।’
(তিরমিজি: ৩৫১৩)
অতএব পরকালে সাফল্য প্রত্যাশী ও মুক্তিকামী প্রতিটি ঈমানদারের ওপর অবশ্য কর্তব্য হল- গরমের অজুহাতে রোজা পরিত্যাগ না করা। আর এমনটি করা কখনোই কোনো প্রকৃত মুমিনের কাজ নয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।