বৈরি আবহাওয়ার কারণে লিচুর ফলন নিয়ে চিন্তিত চাষিরা
জুমবাংলা ডেস্ক : তীব্র তাপদাহের কারণে প্রতিদিনই গাছ থেকে ঝরে পড়ছে অপরিপকস্ফ লিচুর গুটি। এই অঞ্চলের বেশিরভাগ লিচু চাষি সারাবছর অপেক্ষা করে থাকেন লিচুর মৌসুমের জন্য। কেননা, এমন অনেক চাষি আছেন, যারা শুধু লিচু আবাদের ওপরই নির্ভরশীল। ঈশ্বরদীর বিভিন্ন গ্রামে অসংখ্য চাষি সারাবছর লিচু গাছের পরিচর্যা করে আশায় থাকেন ভালো ফলন ফলিয়ে লাভবান হতে। কিন্তু এবার লিচুর বৈরী সময়।
লিচু উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত পাবনার ঈশ্বরদী। এবার ঈশ্বরদীতে লিচুর ফলন বিপর্যয়ের আশংকা দেখা দিয়েছে। গত বছরের তুলনায় অর্ধেক গাছে মুকুল এসেছে এবার। তার ওপর বৈরি আবহাওয়ার কারণে গাছের গুটি ঝরে পড়তে শুরু করেছে। বিশেষ করে দেশি লিচু হিসেবে পরিচিত মোজাফ্ফরপুরী জাতের লিচুর গুটি বেশি ঝরে যাচ্ছে।
সাধারণত লক্ষ্যে করা যায়, চৈত্রের শুরু থেকে লিচুর সবুজ গুটি দেখা যায়। এ সময় লিচু গাছের দিকে তাকালেই চোখে পড়ে লিচুর ছোট ছোট দৃষ্টিনন্দন সবুজ গুটি। কিন্তু চলতি মৌসুমে সেই চিরচেনা রূপ দেখা যায় নি। বৈরী আবহাওয়ার কারণে গাছে লিচুর মুকুল এসেছে অর্ধেকেরও কম। তার ওপর লিচুর গুটি ঝরে পড়ায় হতাশ হয়ে পড়েছেন উপজেলার লিচু চাষিরা।
ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর ঈশ্বরদীত উপজেলায় ৩ হাজার ১শ’ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হয়েছে। আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাবে লিচুর মুকুল তুলনামূলক কম এসেছে। তাছাড়াও সঠিকভাবে লিচু বাগান পরিচর্যা না করায় গুটি ঝরে পড়ছে।
সরেজমিনে ঈশ্বরদীর লিচুগ্রাম হিসেবে পরিচিত মিরকামারি, মানিকনগর, সাহাপুর, জয়নগর, আওতাপাড়া ও বাঁশেরবাদা গ্রামে ঢুকেই চোখে পড়ে সারি সারি লিচুর বাগান। লিচুর পাতার মাঝে সবুজ গুটি ঝুলতে দেখা যাচ্ছে। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার লিচুর গুটি খুবই কম।
উপজেলার মানিকনগর গ্রামের লিচু চাষি পলাশ মাহমুদ বলেন, এ অঞ্চলের প্রধান অর্থকরি ফসল লিচু। এখানকার লিচু চাষিরা এ আয় দিয়েই জীবন নির্বাহ করেন। কিন্তু এবার লিচু গাছে মুকুল খুবই কম এসেছিল। যা গত বছরের তুলনায় অর্ধেক। মুকুল থেকে ছোট ছোট সবুজ গুটিতে রূপ নেওয়ার পর অধিকাংশ দেশি লিচুর মুকুল ঝরে পড়ছে। কেন ঝরছে চাষিরা তা বুঝতেই পারছে না। গুটি ঝরা প্রতিরোধে কৃষি কর্মকর্তা নানা পরামর্শ দিচ্ছেন। সে মোতাবেক ছত্রাকনাশক ব্যবহার করছি। এতে লিচু চাষিরা শংকিত হয়ে পড়েছেন বলে জানান তিনি।
সাহাপুর ইউনিয়নের উপ-কৃষি কর্মকর্তা মো. সেলিম হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হওয়ায় লিচুর গুটিতে এক ধরনের পানিশূন্যতা তৈরি হয়েছিল। এসময় গুটিতে মাকড় পোকা আক্রমণ করে। কয়েকদিন বৃষ্টি হওয়ায় মাকড় পোকার আক্রমণে দুর্বল হয়ে পড়া গুটিগুলো ঝরে পড়ছে। এছাড়াও সঠিকভাবে লিচু বাগান পরিচর্যা না করায় গুটি ঝরে পড়তে পারে। লিচুর গুটি রক্ষা করতে হলে মাকড় নাশক স্প্রে করতে হবে। পাশাপাশি ভিটামিন জাতীয় ফ্লোরা স্প্রে করা যেতে পারে। এছাড়াও গুটি ঝরে যাওয়া রোধে কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার বলেন, এ বছর দীর্ঘদিন ধরে ক্ষরা ছিল। গাছের মুকুল বা গুটির সময় লিচু গাছে পর্যাপ্ত রস থাকা বাঞ্ছনীয়। অনাবৃষ্টির কারণে এটির অভাব ছিল। হঠাৎ বৃষ্টি হওয়ায় কিছু গুটি ঝরে গেছে। এছাড়াও সময়মতো সঠিকভাবে লিচুর বাগান পরিচর্যা না করার জন্যও গুটি ঝরে পড়তে পারে। বৃষ্টিতে লিচু গাছের জন্য উপকার হয়েছে। এখনো সঠিকভাবে বাগান পরিচর্যা করলে ভালো ফলন পাওয়া যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।