আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মিশরের ফারাওদের সমাধিতে প্রবেশ করলেই নাকি ‘অভিশপ্ত’ হয়ে ওঠে জীবন। দীর্ঘ দিন এমনটাই মনে করা হত। ১৯২২ সালে আবিষ্কার হয় তুতানখামেনের সমাধি। আবিষ্কর্তা ছিলেন হাওয়ার্ড কার্টার এবং তাঁর দল। ওই সমাধি আবিষ্কারের পরেই নাকি গোখরোর ছোবলে কার্টারের পোষা পাখির মৃত্যু হয়। সূত্র: আনন্দবাজার।
তুতামখামেনের সমাধি থেকে হরেক জিনিসের সঙ্গে মিলেছিল সানাইয়ের মতো দেখতে দু’টি জিনিস। একটি রুপোর তৈরি। অন্যটি তামা বা ব্রোঞ্জের। ইতিহাসবিদেরা মনে করেন, এই বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে যোদ্ধাদের যুদ্ধক্ষেত্রের জন্য প্রস্তুত করতেন সম্রাট। ভিড়ের মধ্যে যাতে সকলে শুনতে পারেন, তাই সেই বাদ্যযন্ত্রের শব্দ ছিল তীক্ষè। কিন্তু তা যে কখনও ‘অভিশাপ’ ডেকে আনতে পারে, ভাবতেও পারেননি ইতিহাসবিদেরা।
উদ্ধারের পর তুতানখামেনের আরও অনেক জিনিসপত্রের সঙ্গে এই সানাই দু’টিও রাখা হয়েছিল কায়রোর জাদুঘরে। ২০ বছরের মাথায় ব্রোঞ্জের তৈরি সানাইটি চুরি হয়ে যায় জাদুঘর থেকে। পরে মিশরের ট্রেনে ব্যাগবন্দি অবস্থায় মেলে সেই সানাই। ১৯৩৯ সালে সংবাদমাধ্যম বিবিসি ঘোষণা করে, তুতামখামেনের সমাধি থেকে উদ্ধার সেই সানাই দু’টি বাজানো হবে একটি অনুষ্ঠানে। তিন হাজার বছর পর বাজানো হবে ফারাওয়ের সানাই।
১৯৩৯ সালের বসন্তে একটি অনুষ্ঠানে বাজানো হয়েছিল সেই সানাই। ওই বছরেরই সেপ্টেম্বরে অ্যাডলফ হিটলারের নির্দেশে পোল্যান্ড আক্রমণ করে জার্মান সেনা। শুরু হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। অতীতে এই সানাই বাজিয়ে যুদ্ধ ঘোষণা করতেন মিশরের সম্রাট। ব্রিটিশরা মনে করতে শুরু করেন যে, ওই সানাই বাজানোর কারণেই শুরু হয়েছে যুদ্ধ। সানাইয়ের শব্দ ‘সঙ্কেত’ হিসাবে কাজ করেছে।
এক দল দাবি করেন, অনুষ্ঠানের মহড়ার সময় একটি সানাই এক বাদকের হাত থেকে পড়ে ভেঙে যায়। তার জেরেই এই দুর্গতি। এ-ও শোনা যায়, রুপোর সানাইটি পড়ে টুকরো টুকরো হয়ে গিয়েছে। সেই রুপোর টুকরো যাঁরা কুড়িয়েছিলেন, তাঁদেরও ধাওয়া করেছে ‘অভিশাপ’। গোটা ঘটনা নাকি ঘটেছিল মিশরের রাজা ফারুকের সামনে। তিনি তখন মহড়া শুনতে এসেছিলেন। যে অনুষ্ঠানে সানাই দু’টি বাজানো হয়েছিল, তার সম্প্রচার করেছিলেন যে ইঞ্জিনিয়ার, তিনিও দুর্ঘটনার মুখে পড়েছিলেন। স্টুডিয়োয় আসার পথে তাঁর গাড়িতে ধাক্কা দিয়েছিল একটি ঘোড়ার গাড়ি। অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচেছিলেন তিনি। এর পর অনুষ্ঠানের সময়ও নাকি ঘটেছিল বিপত্তি। আচমকাই নিভে গিয়েছিল বেশ কয়েকটি আলো। তার পর আধো অন্ধকারে মোমবাতি জ্বালিয়ে হয়েছিল বাকি অনুষ্ঠান। বিশ্ব জুড়ে নাকি শুনেছিলেন ১৫ কোটি মানুষ।
ঠিক কী কারণে সে দিন নিভে গিয়েছিল আলো, তা জানা যায়নি। অনেকেই দাবি করেন, ফারাওয়ের ‘অভিশাপের’ কারণে ও রকম অঘটন হয়েছিল। ১৯৬৭ সালে আবার বাজানো হয়েছিল সেই রুপোর সানাই। তার পরেই ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধ বেধেছিল মিশরের। ইতিহাসে ‘ছ’দিনের যুদ্ধ’ নামে পরিচিত সেই সংঘর্ষ। ১৯৯০ সালে উপসাগরীয় যুদ্ধ এবং ২০১১ সালে মিশরের বিপ্লবের ঠিক আগেও নাকি বাজানো হয়েছিল তিন হাজার বছরের পুরনো সেই সানাই।
তবে অনেক ইতিহাসবিদই মনে করেন, এ সবের কোনও ভিত্তি নেই। তুতানখামেনের সমাধির লিপিতে কোনও অভিশাপবাণীও লেখা ছিল না। সবটাই জনশ্রুতি। যদিও অনেকেই মনে করেন, তুতানখামেনের সমাধি থেকে মেলা সেই সানাই আর না বাজানোই মঙ্গলজনক।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।