বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : নির্মাণ কাজ কাজ শুরু হয়েছে ২১ শতকের অন্যতম প্রভাবশালী বৈজ্ঞানিক গবেষণা প্রকল্পের; ২০২৮ সাল নাগাদ নির্মাণ শেষ হলে বিশ্বের ‘বৃহত্তম’ রেডিও টেলিস্কোপ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে ‘দ্য স্কয়ার কিলোমিটার অ্যারে (এসকেএ)’।
চমকপ্রদ বিষয় হচ্ছে, এসকেএ নির্দিষ্ট একটি দেশের ভৌগলিক সীমার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এর ব্যপ্তি অস্ট্রেলিয়া, আফ্রিকা এবং ইউরোপ– এই তিন মহদেশ জুড়ে। তাই অ্যান্টেনা বা ডিশের আকার বিচারে নয়, ভৌগলিক ব্যাপ্তির বিচারে ‘বিশ্বের বৃহত্তম’ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে এসকেএ।
এসকেএর ডিশ ও অ্যান্টেনাগুলোর একাংশ বসছে দক্ষিণ আফ্রিকায়, আর একাংশ বসছে অস্ট্রেলিয়ায়। আর ডেটা সমন্বয়ের কাজটি করবে যুক্তরাজ্যে অবস্থিত প্রকল্পের প্রধান কার্যালয়।
বিবিসি জানিয়েছে, পদার্থবিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইনে তত্ত্বগুলো যাচাই করা থেকে শুরু করে ভিনগ্রহবাসীর খোঁজে অনুসন্ধান চালানো– এর সবই করতে পারবে এসকেএ।
সোমবারেই উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা শেষে প্রাথমিক নির্মাণ কাজ শুরু হচ্ছে বিশ্বের বৃহত্তম রেডিও টেলিস্কোপের। বিবিসি জানিয়েছে, পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার দুর্গম মার্চিসন শায়ার এবং দক্ষিণ আফ্রিকার কারো অঞ্চলে উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতায় অংশ নিচ্ছেন প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত আট দেশের প্রতিনিধিরা।
অবশেষে নির্মাণ কাজ শুরু করতে পেরে এসকেএ পরিচালক ফিল ডায়মন্ড বিবিসিকে বলেন, “এই সেই মুহূর্তে যখন এটা বাস্তবে রূপ নিচ্ছে। ৩০ বছরের যাত্রা ছিল এটা।”
“প্রথম ১০ বছর লেগেছে এর প্রাথমিক ভাবনাতেই। এর পরের ১০ বছর লেগেছে প্রযুক্তির উন্নয়নে। আর শেষের এক দশক লেগেছে বিস্তারিত নকশা করতে, নির্মাণ স্থান নিশ্চিত করতে এবং বিভিন্ন দেশের সরকারকে চুক্তিভিত্তিক সংস্থা (এসকেএও) গঠনে রাজি করিয়ে তহবিল সংগ্রহ করতে।”
রেডিও টেলিস্কোপটির প্রাথমিক অবকাঠামোতে থাকবে দুইশ প্যারাবোলিক অ্যান্টেনা বা ডিশ এবং এক লাখ ৩১ হাজার ডাইপোল অ্যান্টেনা।
এর মাধ্যমে কয়েক লাখ বর্গমিটার জায়গা জুড়ে ডেটা সংগ্রহ করতে চান বিজ্ঞানীরা। নির্মাণ শেষে স্পর্শকাতরতা আর রেজুলিউশনের বিচারে পৃথিবীর কোনো কিছুই এসকেএর সমকক্ষ হবে না বলে না লিখেছে বিবিসি। ৫০ মেগাহার্টজ তরঙ্গদৈর্ঘ থেকে ২৫ গিগাহার্টজ তরঙ্গদৈর্ঘ পর্যন্ত কাজ করতে পারবে টেলিস্কোপটি।
এর ফলে কয়েকশ আলোকবর্ষ দূরের মহাকাশ থেকে আসা রেডিও সিগনালও চিহ্নিত করতে পারবে এসকেএ। এমনকি বিগ ব্যাংয়ের পর পর প্রথম কয়েক কোটি বছরে মহাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়া রেডিও সিগনালও চিহ্নিত করতে পারবে এটি।
এসএকেএ মূল লক্ষ্যগুলোর একটি হচ্ছে মহাবিশ্বে যে উপাদানটির উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি, সেই হাইড্রোজেনের ইতিহাস নিয়ে অনুসন্ধান। মহাবিশ্বের ইতিহাসে প্রথম নক্ষত্রগুলো যে হাইড্রোজেন মেঘ ভেঙ্গে সৃষ্টি হয়েছিল, এসকেএ তার অস্তিত্বও চিহ্নিত করতে পারবে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
‘দ্য স্কয়ার কিলোমিটার অ্যারে অবজার্ভেটরি (এসকেএও)’-এর বিজ্ঞানবিষয়ক প্রধান ড. শারি ব্রিনের মতে “অ্যাস্ট্রোনমির অনেকগুলো খাতে অবদান রাখতে যাচ্ছে এসকেএ।”
“একটি হবে সেই ফাস্ট রেডিও বার্সটগুলো যা আমরা আগেই চিহ্নিত করেছি। এক সেকেন্ডের ভগ্নাংশে এই জিনিসগুলোর থেকে আসা শক্তি সূর্যের এক বছরের শক্তি নির্গমনের সমান। আর রেডিও বার্সটগুলো কী সে বিষয়ে কোনো ধারণাই নেই আমাদের। এটা কীভাবে সম্ভব? আশা করছি এসকেএ উত্তর দিতে পারবে।”
বিবিসি লিখেছে, যে অঞ্চলগুলোতে এসকেএ’র নির্মাণ কাজ চলছে, ওই এলাকাগুলো রেডিও অ্যাস্ট্রোনমির কাজে ছোট পরিসরে ব্যবহৃত হচ্ছে আগে থেকেই।
তবে বিদ্যমান স্থাপনার পরিসর বাড়াতে স্থানীয়দের সঙ্গে নতুন করে ভূমি চুক্তি করতে হয়েছে প্রকল্পের উদ্যোক্তাদের। এ ছাড়াও বেশ কিছু নতুন অধিগ্রহণ চুক্তির ঘোষণা আসবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে।
বিবিসি জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত এ প্রকল্পের পেছনে খরচ হয়েছে ৫০ কোটি ইউরো। পুরো প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে দুইশ কোটি ইউরো।
প্রকল্পের প্রথম বড় মাইলফলকের প্রত্যাশা করা হচ্ছে ২০২৪ সালে। ওই বছরে অস্ট্রেলিয়ার চারটি প্যারাবোলিক অ্যান্টেনা এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় ছয়টি অ্যান্টেনা স্টেশন সমন্বয় করে একটি টেলিস্কোপ হিসেবে কাজ করা শুরু করবে বলে প্রত্যাশা করছে এসকেএও কর্তৃপক্ষ। এখানে সাফল্য পেলেই প্রকল্পের বাকি অংশের কাজ শুরু হবে পুরো দমে।
২০২৮ সাল নাগাদ পাঁচ লাখ বর্গমিটার এলাকা জুড়ে ডেটা সংগ্রহ করবে এসকেএ। আর এর নির্মাতারা রেডিও টেলিস্কোপটির নকশা করেছেন ভবিষ্যতে এর পরিধি আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা মাথায় রেখে।
বিবিসি লিখেছে, বিজ্ঞানীদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সত্যি হতে পারে বিভিন্ন দেশের অংশগ্রহণ ও অর্থায়ন বাড়লে। বর্তমানে এ প্রকল্পে অংশ নিতে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, চীন, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, পর্তুগাল এবং সুইজারল্যান্ড।
জোটের সদস্য হওয়ার পথে আছে ফ্রান্স, স্পেন এবং জার্মানি। ভবিষ্যতে জোটের সদস্য হওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছে কানাডা, ভারত, সুইডেন, দক্ষিণ কোরিয়া এবং জাপান।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।