জুমবাংলা ডেস্ক : বিশ্ব থাইরয়েড দিবস আজ। বিশ্বব্যাপী ২০০৯ সাল থেকে দিবসটি পালিত হচ্ছে। বাংলাদেশেও কয়েক বছর ধরে বেসরকারিভাবে সভা-সেমিনারসহ সচেতনতামূলক নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে বিশ্ব থাইরয়েড দিবস পালিত হয়। এ বছর দিবসটি উপলক্ষে বহুমাত্রিক আলোচনা সভার আয়োজন করেছে বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটি (বিইএস)।
আজ রবিবার সকাল সাড়ে ৮টায় হোটেল প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ের ঝর্ণা হলে এ সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এবছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘আপনার থাইরয়েড গ্রন্থিকে জানুন, দ্রুত শনাক্ত করে সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করুন’।
কিন্তু কেন হয় থাইরয়েড? এর প্রতিকারই বা কী? আসুন জেনে নিই এই প্রতিবেদন থেকে। আপনার শরীরে থাইরয়েডের সমস্যা দেখা দিয়েছে কিনা, তা জানতে আটটি লক্ষণের দিকে নজর রাখুন। শারীরিক বা মানসিক এই লক্ষণগুলো দেখা দিলে তাড়াতাড়ি সতর্ক হোন।
ওজন বেড়ে যাওয়া
অতিরিক্ত ওজন বেড়ে যাওয়া থাইরয়েডের লক্ষণ হতে পারে। শরীরের বিপাকের মাত্রা যদি কমে যায় বা বেড়ে যায়, তার সঙ্গে আপনার শরীরের ক্যালরি বা ফ্যাটের মাত্রার হেরফের হওয়া খুবই স্বাভাবিক, যার ছাপ আপনার ওজনে পড়তে বাধ্য।
ক্লান্তি
থাইরয়েডের সব থেকে সাধারণ লক্ষণ হচ্ছে ক্লান্তি।
থাইরয়েড হরমোন মূলত শরীরে শক্তি জোগান দেয়। আপনি যদি অতিরিক্ত ক্লান্তি অনুভব করেন, তাহলে তা থাইরয়েড হওয়ার লক্ষণ হতেই পারে।
অতিরিক্ত ঠাণ্ডা লাগা
বেশি শীত না পড়লেও যদি আপনার খুব সহজেই ঠান্ডা লাগে, তার মানে আপনার শরীর যথেষ্ট পরিমাণে ক্যালরি ঝরাচ্ছে না, বরং ক্যালরি সঞ্চয় করে রাখছে, যা থাইরয়েড হওয়ার লক্ষণ হিসেবে ধরা যেতে পারে।
পেশি এবং জয়েন্টে দুর্বলতা ও যন্ত্রণা
বিপাকের সমস্যার কারণে আপনার পেশির এবং জয়েন্টের শক্তির ক্ষয় হতে পারে। যার ফলে আপনার পেশি বা জয়েন্ট দুর্বল হয়ে যেতেই পারে।
চুল পড়া
থাইরয়েডের সমস্যা হলে আপনার চুল পড়া বেড়ে যেতে পারে। চুলের গোড়া দুর্বল হয়ে যাওয়ার জন্য অনেক ক্ষেত্রেই থাইরয়েডজনিত সমস্যা দায়ী।
অবসন্নতা
বিভিন্ন সমীক্ষা অনুযায়ী, বেশির ভাগ মানুষ যারা থাইরয়েডের সমস্যায় ভুগছেন, তারা অবসাদের কবলে পড়ে যেতে পারেন।
মনোযোগ দিতে না পারা এবং ভুলে যাওয়া
থাইরয়েডের সমস্যায় ভুগছেন এমন অনেকেই মানসিক ক্লান্তির কথা বলেন। মনোযোগ দিতে না পারা, বা সহজেই কোনো কথা ভুলে যাওয়া, এগুলো থাইরয়েডের ক্ষেত্রে অত্যন্ত পরিচিত লক্ষণ।
ঋতুস্রাবের সমস্যা
শরীরের অন্যান্য হরমোনের সঙ্গে থাইরয়েড হরমোনের সম্পর্ক থাকায়, সেই হরমোনের বেড়ে যাওয়া বা কমে যাওয়া অন্যান্য হরমোনের কার্যকারিতাকেও প্রভাবিত করতে পারে। ঋতুস্রাব জড়িত হরমোনের ক্ষেত্রেও এই সমস্যা দেখা দিতে পারে। যার ফলে ঋতুস্রাবের সময় এবং তীব্রতায় সমস্যা হতে পারে।
থাইরয়েড থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায়
ঘরোয়া উপায় অনুসরণ করলেই রেহাই পাবেন থাইরয়েড সমস্যা থেকে। আয়োডিন ও খনিজসমৃদ্ধ খাবার এই সমস্যার জন্য অনেক বেশি উপকারী। তাই যে খাবারে এই উপাদানগুলো বেশি থাকে যেমন- দুধ, পনির, দই, সেগুলো বেশি করে খেতে হবে। আয়োডিন সাপ্লিমেন্টও এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
আপনার থাইরয়েডের সমস্যা থাকলে কোনো ভাবেই চিনি খাবেন না। অতিরিক্ত চিনি খাওয়ার ফলে টি-৩ ও টি-৪ এই দুটি হরমোন উৎপন্ন হয়ে। যা স্বাস্থ্য়ের পক্ষে খারাপ।
যখন আমাদের দেহে পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়োডিন থাকে না, তখন থাইরয়েড হরমোন তৈরি করতে পারে না। যা হাইপোথাইরয়েডিজমের দিকে পরিচালিত হয়ে। তাই আয়োডিন যুক্ত খাবার খান। মানসিক চাপ কমাতে নিয়মিত শরীরচর্চা করুন। এতে থাইরয়েডের সমস্যা কম থাকে।
হরমোন উৎপাদনের ভারসাম্যতা বজায় রাখতে অ্যাপেল সিডার ভিনেগার অনেক উপকারী। এতে বিপাক ক্রিয়ার উন্নতি হয়। এছাড়া এটি শরীরের ফ্যাট নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এবং শরীর থেকে বিভিন্ন বিষাক্ত পদার্থ বের করে পুষ্টি শোষণে সহায়তা করে।
আদাতে বিভিন্ন রকম খনিজ যেমন- পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম থাকে। তাই এটি থাইরয়েডের সমস্যার জন্য অনেক কার্যকর। থাইরয়েডের সমস্যা নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত আদা চা পান করা অনেক উপকারী।
থাইরয়েডের সমস্যা নিয়ন্ত্রণে ভিটামিন বি খুবই সহায়ক ভূমিকা পালন করে। বিশেষ করে ভিটামিন বি১২ হাইপোথাইরয়েডিজমে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য অত্যন্ত উপকারী। তাই যে খাবারে এই ভিটামিন বেশি থাকে যেমন, ডিম, মাছ, মাংস, দুধ, বাদাম- এগুলো প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় অন্তভুক্ত করতে হবে, যাতে শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন বি সরবরাহ করতে পারে।
ভিটামিন ডি এর অভাবেও অনেক সময় থাইরয়েডের সমস্যা হয়ে থাকে। একমাত্র সূর্যের আলোতেই শরীর ভিটামিন ডি প্রস্তুত করতে পারে। তাই দিনে অন্তত ১৫ মিনিট সূর্যের আলোয় থাকতে হবে। ভিটামিন ডি বেশি পরিমাণে থাকে এমন খাবারও খেতে হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।