দিনের অনেকটা সময় আমাদের কাটে কম্পিউটার বা মোবাইল স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে। কাজ কিংবা বিনোদন—উভয়ই ডিজিটাল স্ক্রিনের সাহায্যে করা যায়। তাই অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশিরভাগ মানুষ এখন বেশি সময় কম্পিউটার বা টিভি স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকেন। বিশেষ করে যারা বাসায় বসে কাজ করেন, তাঁদের জন্য স্ক্রিনটাইম আরও বেশি।
বেশি সময় স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকলে অনেকের মাথাব্যথা হয়। অনেকে বিশ্বাস করেন, স্ক্রিনের দিকে বেশি সময় তাকিয়ে থাকলে চোখ নষ্ট হয়ে যাবে। আসলেই কি এমনটা ঘটে? অতিরিক্ত স্ক্রিনের ব্যবহার আমাদের জীবন যে সহজ করেছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। পাশাপাশি স্বাভাবিকভাবেই এর সঙ্গে কিছুটা বিড়ম্বনা তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন গবেষণা ও জরিপে দেখা গেছে, অতিরিক্ত স্ক্রিনটাইম আসলেই চোখের ওপর চাপ ফেলে। ফলে মাথাব্যথা হয়।
২০১১ সালে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক দৃষ্টিবিজ্ঞান বিষয়ক আন্তর্জাতিক জার্নাল অপথ্যালমিক অ্যান্ড ফিজিওলজিক্যাল অপটিক্স (ওপিও)-এ প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রের তথ্যানুসারে, ৬৪-৯০ শতাংশ কম্পিউটার ব্যবহারকারী স্ক্রিনে তাকিয়ে থাকার কারণে চোখে চাপ পড়া, চোখ শুকিয়ে যাওয়া এবং মাথাব্যথা হওয়ার কথা জানিয়েছেন। চোখের চাপ কারণেই অনেক সময় মাইগ্রেনের ব্যথা হয়।
কম্পিউটার ব্যবহারের কারণে সৃষ্ট চোখ ও দৃষ্টি সংক্রান্ত বিভিন্ন শারীরিক সমস্যাকে একসঙ্গে চিহ্নিত করে বলা হয় কম্পিউটার ভিশন সিন্ড্রোম বা সিভিএস—নাম দিয়েছে আমেরিকান অপ্টোমেট্রিক অ্যাসেসিয়েসন। অবশ্য চোখ কটকট করা, ঝাপসা দৃষ্টির মতো চোখের সমস্যার পাশাপাশি ঘাড় ও পিঠের ব্যথা এবং মাথাব্যথাও এর মধ্যে রয়েছে।
স্ক্রিনের দিকে অনেক সময় তাকিয়ে থাকার কারণে আমাদের চোখের ফোকাস বিন্দু অনেকসময় একই জায়গায় থাকে। ফলে চোখের মাংসপেশী ক্লান্ত হয়ে যায়। এছাড়া এসময় চোখের পলক পড়ে কম। এতে চোখের মণির চারপাশে থাকা জলীয় দ্রবণ শুকিয়ে যায়। চোখ কটকট করে। এলইডি স্ক্রিনে সাদা আলো দেখানোর জন্য নীল, লাল ও সবুজ আলো ব্যবহার করা হয়। নীল আলোর শক্তি বেগুনি ছাড়া অন্যান্য দৃশ্যমান আলোর চেয়ে বেশি। ফলে স্ক্রিন থেকে আসা নীল আলো চোখের ওপর অতিরিক্ত চাপ ফেলে। চোখে অস্বস্তি তৈরি হয়।
বেশিরভাগ স্ক্রিনে অ্যান্টি-গ্লেয়ার এবং অ্যান্টি-রিফ্লেকশন প্রযুক্তি না থাকায় এগুলো থেকে খুব উজ্জ্বলভাবে আলো প্রতিফলিত হয়। অতিরিক্ত আলোর মোকাবেলা করতে গিয়ে চোখের ওপর চাপ পড়ে। এছাড়া স্ক্রিন চোখের কাছে থাকায় চোখ অন্যান্য কাজ ঠিকভাবে করতে পারে না। দূরে তাকিয়ে থাকলে সাধারণত এমনটা হয় না। অর্থাৎ, অতিরিক্ত স্ক্রিন দেখলে চোখের ওপর চাপ পড়ে। সেখান থেকে চোখের যেমন সাময়িক কিংবা দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হয়, তেমনি মাথাব্যাথাও হয়।
শারীরিক অবস্থা ভেদে ক্ষতির পরিমাণ কমবেশি হতে পারে। তবে ক্ষতি যে হচ্ছে তা নিশ্চিত। এদিকে স্ক্রিনটাইম কমানোর সুযোগও নেই দৈনন্দিন জীবনে। তাহলে সমাধান কী? সমাধানের জন্য বিশেষজ্ঞরা বেশকিছু নিয়ম মেনে চলার পরামর্শ দেন। এরমধ্যে সবচেয়ে প্রচলিত হলো, ২০-২০-২০ নিয়ম। এ নিয়মে ২০ মিনিট কাজ করার পর ২০ ফুট দূরের কোনো কিছুতে ২০ সেকেন্ড তাকিয়ে থাকতে হবে। এ সময় চাইলে উঠে হাঁটাহাঁটি করা যেতে পারে। তাহলে কমবে চোখের চাপ। কমে যাবে মাথা ব্যথা হওয়ার আশঙ্কাও।
এ ছাড়া স্ক্রিন ব্যবহারের সময় ঘরে পর্যাপ্ত আলো রাখার কথা বলেন অনেকে। তবে এক্ষেত্রে ঘরের আলো স্ক্রিন থেকে প্রতিফলিত হচ্ছে কি না, তা খেয়াল রাখতে হবে। এ আলো চোখের ওপর চাপ ফেলে। এটা থেকে বাঁচতে স্ক্রিনে অ্যান্টি-গ্লেয়ার বা অ্যান্টি-রিফ্লেকশন প্রটেক্টর ব্যবহার করা যেতে পারে।
মোবাইল কিংবা কম্পিউটার স্ক্রিনে অনেকেই বিভিন্ন ধরনের ডকুমেন্ট পড়েন। লেখার ফন্ট সাইজ ছোট হলে চোখের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে। সেক্ষেত্রে ফন্ট বড় করে অথবা প্রিন্ট করে নিয়ে পড়া যেতে পারে। স্ক্রিন থেকে আসা নীল আলোর ক্ষতি কমাতে ব্যবহার করা যেতে পারে ব্লু-লাইট ফিল্টারিং সফটওয়্যার কিংবা চশমা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।