‘মহাকাশের বিশালতা ও রহস্যময়তা সম্পর্কে আমরা যতটা জানি, আমাদের নিজস্ব গ্রহের সমুদ্র সম্পর্কে জানি তার চেয়ে কম।’—এ প্রবাদবাক্যটা বিজ্ঞানীরা প্রায়শই বলেন। আসলেই তাই। সম্প্রতি সমুদ্রের গভীরে বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রবাল আবিষ্কার করেছেন বিজ্ঞানীরা। এটি পাওয়া গেছে প্রশান্ত মহাসাগরের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সলোমন দ্বীপপুঞ্জের কাছে।
অনেকটা দুর্ঘটনাবশত এ প্রবালের সন্ধান পাওয়া গেছে। কারণ, এতদিন মানুষ ভাবত, ওটা একটা জাহাজের ধ্বংসাবশেষ। সমুদ্রের তলদেশে অনেক দিন থাকায় কারণে এমন হয়ে গেছে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, ওটা আসলে একটা প্রবাল।অক্টোবরের মাঝামাঝি সময় ওই অঞ্চলের সমুদ্রের গভীরে ন্যাশনাল জিওগ্রাফির বিজ্ঞানী ও চলচ্চিত্র নির্মাতাদের একটি দল অভিযান চালায়। তখনই জাহাজের ধ্বংসাবশেষের মতো দেখতে ওই বিশাল কাঠামোটি দেখেন তাঁরা।
ওটা আরও ভালোভাবে দেখতে সাগরের ১২ মিটার নিচে ডুব দেন সিনেমাটোগ্রাফার মনু সান ফেলেক্স। কাছ থেকে প্রবালের বিশাল আকারে দেখে তিনি অবাক হয়ে যান। এলাকাটি আরও ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করেন তাঁরা। তারপরই ন্যাশনাল জিওগ্রাফি বিশ্বের বৃহত্তম প্রবাল পাওয়ার বিষয়টি জানায়।
প্রবালটি ৩৪ মিটার চওড়া ও ৩২ মিটার লম্বা। এটি নীল তিমির চেয়েও বড়। এত বিশাল যে মহাকাশ থেকেও দেখা যায়। তারপরেও কীভাবে এতদিন মানুষের চোখ এড়িয়ে গেল প্রবালটা, তা বিস্ময়ের ব্যাপার। অভিযানের প্রধান বিজ্ঞানী মলি টিমারস বলেন, ‘এই আবিষ্কার সত্যিই আমাদের জন্য অবিশ্বাস্য। আমরা যখন অন্য জায়গায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম, তখনই এটা আমাদের চোখে পড়ে।’
গবেষকরা সাধারণত প্রবালের উচ্চতা থেকে এর বয়স অনুমান করেন। এই ১৬ ফুট উঁচু প্রবালটি প্রায় ৩০০ থেকে ৫০০ বছর কিংবা তারচেয়েও পুরানো হতে পারে। মলি টিমারস বলেন, ‘এই প্রবালগুলো সাধারণত গম্বুজ আকৃতির হয়, অনেকটা আইসক্রিমের স্কুপের মতো। কিন্তু এটা একটু চ্যাপ্টা আকৃতির।’
গবেষকদের মতে, বালি দিয়ে ঘেরা এই বিশাল প্রবালে প্রায় একশ কোটি পলিপ বাস করে। হাজার হাজার ক্ষুদ্র পলিপ মিলে গঠিত হয় প্রবাল। এই প্রবালগুলো মিলে তৈরি হয় বিশাল প্রবাল প্রাচীর। প্রবাল পাথরের মতো দেখতে হলেও এটি জেলিফিশ ও সামুদ্রিক অ্যানিমোনের মতোই একধরনের প্রাণী। ‘সাইফোনোফোরা’ নামে বিশেষ শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত এই প্রবাল পলিপ নামে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জীবের সমন্বয়ে গঠিত। এরা একধরনের সামুদ্রিক অমেরুদণ্ডী প্রাণী।
বয়সভেদে এই প্রবাল পলিপের আয়তন বিভিন্ন রকমের হয়। ১ মিলিমিটার থেকে ১০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হতে পারে এগুলোর ব্যাস। পলিপের কেন্দ্রের অঙ্গ স্বচ্ছ ও নমনীয়। এই অঙ্গ থেকে বেরিয়ে আসে অনেকগুলো তন্ত্র, যা অক্টোপাসের বাহুর মতো নড়াচড়া করে। প্রবালের পলিপ ঘিরে ক্যালসিয়াম কার্বোনেটের আবরণ থাকে বলে দেখতে পাথুরে লাগে। তবে প্রবাল মূলত প্রাণী।
আজারবাইজানের বাকুতে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে (কপ-২৯) এই প্রবাল আবিষ্কারের কথা ঘোষণা করা হয়। সলোমন দ্বীপপুঞ্জের মৎস্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা রনি পোসালা বলেন এ ব্যাপারে বলেন, ‘এই বিশাল প্রবাল আবিষ্কার সলোমন দ্বীপপুঞ্জের জনগণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ স্মৃতিচিহ্ন। এটি আমাদের সমুদ্রের গুরুত্ব আরও ভালোভাবে বুঝিয়ে দেয়। আমাদের সম্প্রদায়, ঐতিহ্য ও ভবিষ্যতের জন্য এ আবিষ্কার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।