তানভীর আহমেদ রাসেল: স্বাধীনতার ৪৮ বছর পর জরাজীর্ণ বাংলাদেশ থেকে আজকের যে বাংলাদেশে চিত্র প্রত্যক্ষ করছি,তা যে কাউকেই অবাক করে। কিন্তু বাংলাদেশে সক্ষমতা আর সার্বিক অনুকূল পরিবেশের সুযোগকে যথাযথ কাজে লাগানো গেলে এতদিনে উন্নয়নশীল দেশের তালিকা থেকে উন্নত সমৃদ্ধ দেশের তালিকায় নাম লিখাত বাংলাদেশ। কিন্তু এমনটা না পারার নেপথ্যের অন্যতম প্রধান কারণ হল দুর্নীতি।
আমাদের বর্তমান সময়ে দূর্নীতির প্রাদুর্ভাব এতটাই বেশি বিস্তৃত হয়েছে যে,তা বর্তমানে বাংলাদেশের অন্যতম জাতীয় সমস্যায় রুপ নিয়েছে। ক্ষুদ্র থেকে বৃহৎ যে কোন সেবার জন্য জনসাধারণকে গুনতে হচ্ছে দূর্নীতির বিশাল বোঝা। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিশেষ করে রাষ্ট্রয়াত্ত যে কোন প্রতিষ্ঠানে দূর্নীতি যেন দৈনন্দিন কার্মতালিকায় অংশে রুপ নিয়েছে। যেমন আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটা শাখা পুলিশ বাহিনীর ক্ষেত্রে দেখা যায়, পুলিশে যোগদানের আগে নিয়োগ বাণিজ্য। পুলিশ হওয়ার পর রয়েছে গ্রেপ্তার বাণিজ্য, রিমান্ড বাণিজ্য, থানা থেকে ছাড়িয়ে আনা বাণিজ্য—আরও রয়েছে আদালত থেকে জামিন বাণিজ্য, সাজা কমবেশি বাণিজ্য ইত্যাদি কথাও এখন প্রকাশ্যে বলা হয়।
দূর্নীতির মাধ্যমে সেবা গ্রহন বা দুর্নীতির ছায়াকে ঢাল করে এসব প্রতিষ্ঠানে যারা যোগদানকারী ব্যক্তিবর্গকে দূর্নীতির প্রতি আরও অনেক বেশি আকৃষ্ট ও হিংস্রাত্মক করে তুলছে। এতে করে জনসাধারণের জীবনে নিয়ে আসছে ভয়াবহ দূর্ভোগ। সম্প্রতি এমনি এক দূর্নীতির মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া সরকারি উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা প্রকৌশলী মাসুদুল হকের মহাসাগর চুরির ন্যায় দূর্নীতি অবাক করেছে পুরো বাংলাদেশকে।
একটি প্রকল্পের জন্য সরকারি কোষাগারের টাকায় আকাশচুম্বী দামে কিছু আসবাবপত্র কেনার পর তা ভবনের বিভিন্ন ফ্ল্যাটে তুলতে অস্বাভাবিক হারে অর্থ ব্যয়ের এ ঘটনার খলনায়ক ছিলেন এই মাসুদুল আলম। জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী, একটি ভবনের জন্য এক হাজার ৩২০টি বালিশ কেনা হয়েছে। এদের প্রতিটির মূল্য দেখানো হয়েছে ৫ হাজার ৯৫৭ টাকা। আর সেই প্রতিটি বালিশ নিচ থেকে ভবনের ওপরে তুলতে খরচ দেখানো হয়েছে ৭৬০ টাকা!
এমন মাসুদুল আলম সরকারি অফিসগুলোতে দূর্নীতির একটি খন্ডচিত্র মাত্র। রাজনৈতিক বিবেচনায় কিংবা ঘুষ বানিজ্যের মাধ্যমে দায়িত্ব পাওয়া এমন অসৎ,নৈতিকতা বিবর্জিত ব্যক্তিদের কর্মযজ্ঞের কারণে ভেস্তে যেতে বসছে দীর্ঘস্থায়ী টেকসই উন্নয়ন কর্মকান্ড। বিভিন্ন সমীক্ষায় পিছিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ, ক্ষুণ্ণ হচ্ছে দেশের ভাবমূর্তি। টিআইবির এক পরিসংখ্যান মতে,২০১৮ সালে দুর্নীতির সূচকে বাংলাদেশের ফলাফল ১৮০ টি দেশের মধ্যে ১৪৯তম অবস্থানে। অথচ ২০১৭ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৪৩ তম যা রীতিমতো হতাশাজনক।
আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোকে অব্যশই এসব মনুষ্যত্ব বিবর্জিত নেতাকর্মী সম্পর্কে সজাগ থাকা উচিত। একজন দুর্নীতিগ্রস্ত লোক কখনোই কোনো রাজনৈতিক দলের জন্য সম্পদ বলে বিবেচিত হতে পারে না। বরং এরা সব সময়ই আপদ হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রাকে তরান্বিত করতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে সকল মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছেন, তার যাতায়াত বাস্তবায়ন ও প্রকৃত লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে দূর্নীতির বিরুদ্ধে যথাযথ কঠোর তদারকির বিকল্প নেই। সম্প্রতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করে সাড়াশি অভিযানের ঘোষণা দিয়েছেন যার বাস্তবায়ন একান্ত জরুরী।
একটি জাতির সর্বক্ষেত্রে যদি নৈতিকতার অবক্ষয় ঘটে, তবে উন্নয়নের পথে চিতার গতি তো দূরের কথা, কচ্ছপের গতি পাওয়াও কঠিন। সরকারের কঠোর তদারকির পাশাপাশি উন্নত সমৃদ্ধ জাতী হিসেবে বিশ্বের বুকে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে প্রত্যেকের নিজেদের জায়গা থেকে নৈতিকতা ও মনুষ্যত্বকে লালন করতে হবে।তবেই সত্যিকার অর্থে অর্জিত হবে সোনার বাংলার অর্থ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।