জুমবাংলা ডেস্ক : সারা দেশে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) সুপারিশে ডাবল শিফটের স্কুলের নতুন নিয়োগ পাওয়া প্রায় দেড়শ শিক্ষকের বেতন বন্ধ রয়েছে সাত থেকে আট মাস ধরে। সম্প্রতি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের এক সিদ্ধান্তের জেরে এ সমস্যায় পড়েছেন শিক্ষকরা।
২০২১ সালের জনবলকাঠামো ও এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী, ডাবল শিফট এমপিও স্কুলে দ্বিতীয় শিফটের জন্য আলাদা এমপিও কোড চালুর বিধান রয়েছে। বিদ্যমান এমপিও নীতিমালা বাস্তবায়নে ডাবল শিফটের বিদ্যালয়গুলো আলাদা এমপিও কোড নিতে শুরু করেছে। তবে রাজধানীর নামকরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখনো আলাদা এমপিও কোড নেয়নি।
অন্যদিকে আলাদা এমপিও কোড ছাড়া মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের আঞ্চলিক অফিসগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নতুন নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের এমপিও বন্ধ করে দিয়েছে।
এর আগে সোমবার (১০ মার্চ) ৫ম গণবিজ্ঞপ্তিতে ঢাকা অঞ্চলের ডাবল শিফট ও একক শিফটে বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের এমপিওভুক্তি এবং ঢাকার আঞ্চলিক উপপরিচালককে (ডিডি) অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন সাত মাস ধরে বেতন না পাওয়া শিক্ষকরা।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের সামনে তারা বিক্ষোভ করেন। ওই দিন দুপুরে আন্দোলনরত শিক্ষাকরা একই দাবি লিখিতভাবে জানিয়েছেন শিক্ষা উপদেষ্টার কাছে।
আন্দোলনরত শিক্ষকরা লিখিত আবেদনে বলেন, ‘আমরা ঢাকা অঞ্চলের ডাবল শিফট ও একক শিফটের বিভিন্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকরা গত বছরের ১ থেকে ৮ অক্টোবর মাধ্যমিক উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে ইএমআইএস সেলে এমপিওর জন্য আবেদন করি। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় দীর্ঘ ৭ মাস অতিবাহিত হলেও আজ পর্যন্ত আমাদের এমপিওভুক্ত করা হয়নি। বর্তমানে আমাদের ফাইল ঢাকা আঞ্চলিক উপ-পরিচালকের তত্ত্বাবধানে রয়েছে। আমরা ঢাকা আঞ্চলিক উপ-পরিচালকের কার্যালয়ে ফাইলের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আমাদের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন।
সূত্র জানিয়েছে, ডাবল শিফট প্রতিষ্ঠানে আলাদা এমপিও কোড না হওয়ায় দেড়শ শিক্ষকের বেতন ছাড়েনি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের ঢাকার উপপরিচালক কার্যালয়। আট মাস তাদের বেতন বন্ধ রাখা হয়েছে আলাদা কোড না থাকায়। আবার ডাবল শিফট বিদ্যালয়ে নতুন করে নিয়োগ পাওয়া প্রধান শিক্ষক এবং সহকারী প্রধান শিক্ষকদের বেতনও আটকে দিয়েছে ঢাকার আঞ্চলিক অফিস।
কয়েকজন শিক্ষকের অভিযোগ, এমপিওভুক্তির আবেদন গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে মাউশির ঢাকা আঞ্চলিক উপপরিচালক (ডিডি) অফিসে ঝুলে আছে।
তারা বলেন, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অধীন আগের উচ্চবিদ্যালয়ের চাকরি থেকে পদত্যাগ করে নতুন নিয়োগ সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে যোগ দেন। কিন্তু পদত্যাগের কারণে শিক্ষকের এমপিও আদেশ বাতিল হওয়ায় বেতন আটকে যায়। এভাবে অনেকে আট মাস বেতন না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
জানা গেছে, ঢাকা অঞ্চলের প্রায় ৬৬টি উচ্চবিদ্যালয়ের কয়েক শ শিক্ষক এই সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। কারণ মাউশির ঢাকা আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপপরিচালক (ডিডি) তাদের নতুন এমপিও আদেশের আবেদন অনুমোদন করছেন না।
ভুক্তভোগী শিক্ষকরা অভিযোগ করে জানান, ডাবল শিফট এমপিও স্কুলের জন্য সরকারের এমপিও নীতি, ২০২১-এর বিধান দেখিয়ে তিনি তাদের এমপিও আদেশ ঝুলিয়ে রেখেছিলেন। গত ফেব্রুয়ারিতে তাদের আবেদনপত্র অনুমোদন করা হলেও কোনো কারণ না দেখিয়ে পরে অনুমোদন বাতিল করা হয়। এই পরিস্থিতিতে ডাবল শিফট স্কুলের এমপিও-প্রত্যাশী শিক্ষকরা ঢাকা শহরে পরিবার নিয়ে দুর্বিষহ দিন কাটাচ্ছেন।
মনিরুল ইসলাম নামে এক শিক্ষক অভিযোগ করে জানান, তিনি নিজের সমস্যা নিয়ে ঢাকা আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপপরিচালকের (ডিডি) সঙ্গে দেখা করতে যান। কিন্তু তিনি কথা শোনেননি। তার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন এবং অন্য কয়েকজন শিক্ষকসহ তাকে অফিস কক্ষ থেকে বের করে দেন। একপর্যায়ে তিনি অফিসের কলাপসিবল গেট তালাবদ্ধ করে দেন।
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির (বিটিএ) সভাপতি কাওসার আহমেদ বলেন, ‘আমরা জানি বহু শিক্ষক এ ধরনের সমস্যায় ভুগছেন। তবে কেউ যদি ডিডি কার্যালয়ে গিয়ে হেনস্তার শিকার হন, তারা এ বিষয়ে আমাদের কিছু জানায়নি। কারও যদি সেখানে যেতে হয়, আগে যেন আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তবে অনাকাঙ্ক্ষিত বিষয়ে অভিযোগ পেলে আমরা ডিডি অফিসে বিষয়টি জানতে চাইব।’
এমপিওভুক্তি নিয়ে বিটিএ সভাপতি বলেন, ‘একটি স্কুলে শূন্য পদের ভিত্তিতে এমপিও দেওয়া হয়। তারপর স্কুলের চাহিদা অনুযায়ী ওই পদে যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগ পাওয়ার পর তার আবেদন গ্রহণ করা হয়। কাগজপত্র যাচাইয়ের পরে তাকে এমপিও দেওয়া হয়। এখন যেসব শিক্ষকের এমপিও ঝুলে রাখা হয়েছে, এটা কেন করা হলো, তা ডিডি অফিসকে বলতে হবে। কারণ একটি আবেদন প্রথমে উপজেলা ও জেলা হয়েই ডিডি অফিসে যায়। কোনো সমস্যা থাকলে তো আগেই বলা হতো। সেখানে যাওয়ার পর কেন আটকে থাকবে?’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চাই দ্রুত এ সমস্যার সমাধান করে শিক্ষকদের স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে দেওয়া হোক।’
জানতে চাইলে ঢাকা আঞ্চলিক উপপরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বুধবার দুপুরে বলেন, ‘তাদের এসব অভিযোগ সত্য নয়। আমি তাদের বলেছি আমরা আপনাদের বিষয়ে কাজ করছি। আপনারা এখানে ভিড় করবেন না। বাইরে গিয়ে বসেন। আমি তাদের বলেছি যে আপনাদের জন্যই তো কাজ করছি। শিক্ষকদের বের করে দেওয়ার অভিযোগ সত্য নয়।’
তিনি বলেন, ‘সরকারের এমপিও নীতিমালা, ২০২১-এর বিধান অনুসারে ডাবল শিফট এমপিও স্কুলগুলোতে প্রতিটি শিফটের জন্য শিক্ষকদের নাম উল্লেখ করে পৃথক এমপিও কোড থাকতে হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনক্রমে স্কুল কর্তৃপক্ষ আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে এমপিও কোড নিশ্চিত করবে। স্কুল কর্তৃপক্ষ এমপিও আবেদনের সময় পদ্ধতি অনুসরণ না করায় কিছু সমস্যা হয়েছে। ফলে সেই আবেদনগুলো মঞ্জুর করা হয়নি। তবে এসব ফাইল ওপরে পাঠানো হয়েছে। বেশ কয়েকজনের কাজ শেষ হয়েছে। আর অল্প কিছু বাকি আছে। আশা করি দ্রুত বাকি কাজ শেষ হবে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আজাদ খান বলেন, ‘এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে আমি শুনানি নেব, ভুক্তভোগীরা যেন যোগাযোগ করেন। আজ একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে বেসরকারি শিক্ষকদের বেতন আটকে থাকার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা দ্রুত উদ্যোগ নেব।’
সূত্র : দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।