জুমবাংলা ডেস্ক: বাংলার আপেল নামে খ্যাত স্বরূপকাঠি জাতের পেয়ারার মৌসুম শুরু হয় আষাঢ় মাসে। আষাঢ় মাস শেষ হতে চললেও এখনো বাজারে সুস্বাদু মিষ্টি এ পেয়ারার তেমন আমদানি নেই। মূলত বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ মাসে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় স্বরূপকাঠিসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন গ্রামের উৎপাদিত রসালো এ পেয়ারা বাজারে আসতে আরও সপ্তাহখানেক সময় লাগবে বলে জানান চাষিরা।
প্রবীণদের সূত্র জানায়, ২০০ বছর পূর্ব হতে এখানে পেয়ারার চাষাবাদ শুরু হলেও বিগত ৬৫/৭০ বছর থেকে চলছে পেয়ারার বাণিজ্যিক আবাদ। স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন হওয়ায় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে স্বল্প সময়ে পেয়ারা সরবরাহ ও পর্যটক আগমনের উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখছেন পেয়ারা চাষিরা। উল্লেখ্য, এই পেয়ারা বাগান দেখতে অনেক মানুষের আগমন হয় এই এলাকায়। উপজেলার আটঘর, কুড়িয়ানা, আদমকাঠি, ধলহার, কঠুরাকাঠি, আন্দাকুল, জিন্দাকাঠি, ব্রাহ্মণকাঠি, আতা, জামুয়া, মাদ্রা ঝালকাঠি, শশীদ, পূর্ব জলাবাড়ী, আদাবাড়ী ও জৌসারসহ ২৫ গ্রামের ৬০৭ হেক্টর জমিতে পেয়ারার চাষাবাদ হয়।
উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ২০১০টি পেয়ারা বাগান রয়েছে এবং ১ হাজার ২৪০ জন চাষি এ পেয়ারা চাষাবাদ করে আসছে। আর পেয়ারার চাষাবাদ ও বিপণন ব্যবস্থার সঙ্গে ঐ সমস্ত এলাকার প্রায় ৬/৭ হাজার শ্রমজীবী মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত থেকে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। আষাঢ়, শ্রাবণ ও ভাদ্র এ তিন মাস পেয়ারার মৌসুম। তবে শ্রাবণ মাস জুড়ে পেয়ারার ভরা মৌসুম। এ সময় পেয়ারার কারণে পালটে যায় এ অঞ্চলের চিত্র। পেয়ারার বিক্রির জন্য এসব এলাকায় খালে বসে ভাসমান পেয়ারার হাট। প্রতিদিন শত শত চাষিরা নৌকায় করে বিক্রির উদ্দেশে পেয়ারা নিয়ে যায় ঐসব ভাসমান হাটে। স্থানীয় ও দূরাগত পাইকার ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ট্রাক, বড় বড় ট্রলার ও নৌকা নিয়ে পেয়ারা কিনতে আসেন।
পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় ফেরিঘাটের বিড়ম্বনা না থাকায় পাইকার ও পর্যটকদের আগমন প্রতি বছরের চেয়ে এবার বেশি হবে বলে স্থানীয়রা ধারণা করছেন। ফলে এ অঞ্চলের শুধু পেয়ারই নয় অন্যান্য কৃষিজাত পণ্য ঢাকাসহ সারা দেশে অল্প সময়ে সরবরাহ করা সম্ভব হবে। সেই সঙ্গে পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাবেন বলে আশা করছেন চাষিরা। গ্রামীণ জনপদে বিনোদনপ্রেমীদের জন্য মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পেয়ারা বাগান দিন দিন পরিণত হচ্ছে পর্যটন কেন্দ্রে। প্রাকৃতিক অপূর্ব দৃশ্য উপভোগ করতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন ভ্রমণপিপাসুরা। শুধু দেশের ভ্রমণপিপাসু নয় বিদেশি অতিথিরাও আসেন সরু সরু খালের দুই পাড়ে দৃষ্টিনন্দন সারি সারি পেয়ারা বাগানের অপূর্ব দৃশ্য উপভোগ করতে।
ব্রাহ্মণকাঠি এলাকার পেয়ারা চাষি বিশ্বজিত চৌধুরী জানান, এ বছর কোনো কোনো খেতের পেয়ারার ফলন ভালো ও কোনো কোনো খেতে তুলনামূলক ফলন কম হয়েছে। ফল যা আসছে তাও পরিপক্ব হতে দেরি হচ্ছে। তিনি আরও বলেন এ বছর বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ মাসে বৃষ্টিপাত কম হয়েছে। তাও আবার উত্তর-পশ্চিম দিকের ঠান্ডা বৃষ্টি। ফলে পেয়ারা গাছে ফুল ধরেছে বিলম্বে। পেয়ারা ও আমড়াচাষি সমিতির সম্পাদক জহর মণ্ডল জানান মৌসুমের শুরুতে পেয়ারার দাম ভালো পাওয়া যায়। কিন্তু ফলন বিলম্ব হওয়ায় চাষিরা আর্থিক সুবিধা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
তিনি আরও জানান, স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় ফেরির বিড়ম্বনা না থাকায় এবং স্বরূপকাঠি-বরিশাল সড়ক যোগাযোগ উন্নত হওয়ায় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে স্বল্প সময়ে পেয়ারা সরবরাহ ও পর্যটক আগমনের উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। শ্রাবণ মাসের প্রথম সপ্তাহে পেয়ারা তোলার আশা করছেন চাষিরা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা চপল কৃষ্ণ নাথ বলেন, বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় ফুল দেরিতে এসেছে। ফলে পেয়ারার ফলন বিলম্ব হচ্ছে। বিগত দিনে এ সময় পেয়ারা বিক্রি করতেন চাষিরা। কিন্তু এ বছর এখন পর্যন্ত পুরোপুরি পেয়ারা পরিপক্ব হয়নি। পরিপক্ব পেয়ারা বাজারে আসতে আরো সপ্তাহখানেক সময় লাগতে পারে বলে তিনি জানান।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।