জুমবাংলা ডেস্ক : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্যবহৃত একটি যুদ্ধ বিমানের মূল ইঞ্জিনসহ বিমানের বিভিন্ন ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার করা হয়েছে মাটির নিচ থেকে। তা দেখতে দিনব্যাপী উৎসুক জনতার ভিড় দেখা গেছে লালমনিরহাট সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর ও হারাটি ইউনিয়নের পরিত্যক্ত বিমানবন্দরে। শনিবার (১৭ অক্টোবর) লালমনিরহাট জেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে স্থানীয় পুলিশ ও বিমান বাহিনীর সদস্যরা উদ্ধার কার্যক্রম এবং ওই এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে।
শনিবার সকাল ৮টা থেকে উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা শুরু হয়ে দিনব্যাপী তা চলেছে। লালমনিরহাট বিমানবন্দর রানওয়ে থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে একটি চাষের জমির মাটির নিচ থেকে একটি যুদ্ধ বিমানের মুল ইঞ্জিন (প্রপেলার) একটি, দুটি ল্যান্ডিং গিয়ার, ওয়েল বার্নি এক্সজস্ট (সাইল্যান্সার), অ্যামিউনেশন্স, পাঁচটি গান ও বিমানের টুকরো টুকরো কিছু যন্ত্রাংশ উদ্ধার করা হয়েছে। কিছু যন্ত্রাংশের নাম নিশ্চিত হতে এবং কোনও দেশে তৈরি বা কোন দেশের যুদ্ধবিমান ছিল তা তাতক্ষণিক বলতে পারেনি উপস্থিত বিমান বাহিনীর কর্মকর্তারা।
জমির মালিক রেজাউল করিম জানান, তার আবাদি উঁচু জমির ওপরের মাটি কেটে নিচু করার জন্য কিছু শ্রমিক কাজ করছিল। শুক্রবার (১৬ অক্টোবর) দুপুরের পর সোহেল মিয়া নামে একজন শ্রমিক ৮-১০ কেজি ওজনের কিছু গুলির মতো বস্তু প্রথমে দেখতে পান। এরপর বিষয়টি অবহিত করলে থানায় খবর দেই। পরে পুলিশ এসে সেগুলো নিয়ে যায়। এরপর শনিবার সকালে বিমান বাহিনীর লোকজন, পুলিশ ও ডিসি অফিসের কর্মকর্তারা নিজেরা উপস্থিত থেকে স্থানীয় শ্রমিকদের মাধ্যমে মাটি খুড়ে পাঁচ ফুট নিচ থেকে যুদ্ধ বিমানের বেশ কিছু জিনিস উদ্ধার করেছে।
উল্লেখ্য, লালমনিরহাট সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর ও হারাটি ইউনিয়নে বিরাট এলাকাজুড়ে ১৯৩৯-৪০ সালে লালমনিরহাট বিমানবন্দর স্থাপিত হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে লালমনিরহাট বিমানবন্দরটি ব্যবহৃত হয়। পরবর্তীতে সেটি পরিত্যক্ত থাকলেও দেশ স্বাধীনের পর বঙ্গবন্ধুর সরকার বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রধান দফতর স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়। এটি সফল না হওয়ায় বর্তমানে এখানে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারো স্পেস বিশ্ববিদ্যালয়’ স্থাপন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এছাড়াও চলতি বছরে লালমনিরহাট বিমানবন্দরের পাশেই ‘আর্মি এভিয়েশন স্কুল’ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। পুলিশ, বিমানবাহিনী, জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় লোকজন ধারণা করছেন, উদ্ধার হওয়া যুদ্ধ বিমানের ধ্বংসাবশেষ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার।
লালমনিরহাট সদর থানার ওসি শাহা আলম বলেন, ‘সদর উপজেলার গোকুণ্ডা ইউনিয়নের ২নম্বর ওয়ার্ডের গুড়িয়াদহ এলাকার কৃষক রেজাউল হকের জমির মাটি কেটে নিচু করার কাজ করছিলেন। এসময় সোহেল মিয়া নামে এক শ্রমিক প্রথম কিছু গুলি দেখতে পান। এরপর ওই শ্রমিক জমির মালিককে বিষয়টি অবহিত করলে তিনি থানায় বিষয়টি শুক্রবার বিকালে অবহিত করেন। থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) হাফিজুর রহমানকে ঘটনাস্থলে সরজমিনে পাঠালে তিনি ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন। এরপর আমরা রাতেই লালমনিরহাট বিমানবাহিনীকে বিষয়টি অবহিত করি। শনিবার সকাল থেকে লালমনিরহাট বিমান বাহিনীর রক্ষণাবেক্ষণ ও তত্ত্বাবধান ইউনিটের একটি দল, পুলিশ, স্থানীয় লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) টি.এম রাহসিন কবির স্যারের উপস্থিতিতে বিমানের ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার কাজ শুরু হয়।’
জানতে চাইলে লালমনিরহাট বিমান বাহিনীর রক্ষণাবেক্ষণ ও তত্ত্বাবধান ইউনিটের ভারপ্রাপ্ত ইনচার্জ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মাহমুদুল হাসান মাসুদ বলেন, ‘উদ্ধার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আমরা বিমানের বেশকিছু অংশের জিনিসপত্র পেয়েছি। এসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করে আমার পক্ষে কিছু বলা সম্ভব নয়।’
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর বলেন, ‘পুলিশ ও বিমান বাহিনীর মাধ্যমে বিষয়টি অবগত হয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিমানের ধ্বংসাবশেষগুলো উদ্ধারের পর যদি জেলা প্রশাসনের নিকট হস্তান্তর করা হয়, তাহলে সেগুলো জেলা ট্রেজারিতে সংরক্ষণ করা হবে। আর যদি বিমান বাহিনী নিয়ে যায়, তারাও সেগুলো নিয়ে যেতে পারে।’ সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।