অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আমন্ত্রণে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং তোবগে ২২ থেকে ২৪ নভেম্বর বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় সফরে রয়েছেন। দুই দেশের দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব ও সহযোগিতা আরও গভীর করার প্রতিফলন হিসেবে এই সফরকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
সফরের দ্বিতীয় দিনে (রোববার, ২৩ নভেম্বর) ঢাকা ও থিম্পুর পক্ষ থেকে যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। বিবৃতিতে জানানো হয়, শনিবার প্রধানমন্ত্রী তোবগে ঢাকায় পৌঁছালে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান প্রধান উপদেষ্টা। গার্ড অব অনার ও তোপধ্বনি প্রদানের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেখানো হয়। পরে তিনি সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং একটি গাছের চারা রোপণ করেন।
সফরকালে প্রধানমন্ত্রী তোবগে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এছাড়া পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন এবং বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন আলাদাভাবে তার সঙ্গে বৈঠক করেন। সফরের মূল লক্ষ্য দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক, বাণিজ্য, সংযোগ ও জনগণের মধ্যে সম্পর্ক আরও জোরদার করা।
শনিবার উষ্ণ পরিবেশে প্রধান উপদেষ্টা ও ভুটানের প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিক বৈঠকে বসেন। সেখানে বাণিজ্য, সংযোগ, অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং মানুষে–মানুষে সম্পর্ক—এই চারটি ক্ষেত্রকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সার্বিক অগ্রগতি আলোচনা করা হয়। প্রধান উপদেষ্টা স্মরণ করিয়ে দেন, ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর ভুটান প্রথম দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছিল এবং মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশটির আন্তরিক সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা জানান। ২০২৪ সালের মার্চে ভুটানের রাজার স্মরণীয় সফরও দুই দেশের সহযোগিতাকে আরও শক্তিশালী করেছে বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।
বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা বাড়ানোর লক্ষ্যে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশি ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করেন। বাংলাদেশ ভুটানের রাজার গেলেফু মাইন্ডফুলনেস সিটি উদ্যোগকে সমর্থন জানায় এবং কুড়িগ্রামে ভুটানের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার অগ্রগতি তুলে ধরে। সরকার-টু-সরকার ভিত্তিতে ভুটানে ওষুধ সরবরাহের প্রস্তাব রাখে বাংলাদেশ, যাতে ভুটানের নাগরিকরা সাশ্রয়ী ও মানসম্মত চিকিৎসা সুবিধা পান।
পরিবহন খাতে সহযোগিতার অগ্রগতিতেও দুই দেশ সন্তোষ প্রকাশ করে। ট্রাফিক-ইন-ট্রানজিট চুক্তির অগ্রগতি এবং চট্টগ্রাম বন্দর থেকে বুড়িমারী স্থলবন্দর পর্যন্ত পরীক্ষামূলক পণ্য পরিবহণ সম্পন্ন হওয়ার বিষয়ও যৌথ বিবৃতিতে উঠে আসে।
শিক্ষা খাতে সহযোগিতা বাড়ানোর অংশ হিসেবে বাংলাদেশ সরকার মেদিকেল কলেজগুলোতে ভুটানি শিক্ষার্থীদের এমবিবিএস/বিডিএস আসন ৩০–এ উন্নীত করায় কৃতজ্ঞতা জানান প্রধানমন্ত্রী তোবগে। পাশাপাশি বাংলাদেশ বুয়েটে প্রতিবছর ১০টি আসন, বিকেএসপিতে ক্রীড়া বিজ্ঞানে একটি ডিপ্লোমা আসন, ভুটানি ক্রীড়া দলের জন্য হোম-গ্রাউন্ড সুবিধা এবং বিভিন্ন খাতে পেশাদার প্রশিক্ষণের প্রস্তাব দেয় ঢাকা।
দুই দেশের নেতা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের পাশাপাশি সার্ক ও বিমসটেকসহ আঞ্চলিক প্ল্যাটফর্মে সহযোগিতা জোরদার করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।
উষ্ণ আতিথেয়তার জন্য বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী তোবগে প্রধান উপদেষ্টাকে ভুটান সফরের আমন্ত্রণ জানান। তার সঙ্গে সফররত ছিলেন ভুটানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিয়নপো ডি এন ধুঙ্গিয়েল, শিল্প–বাণিজ্যমন্ত্রী লিয়নপো নামগিয়াল দরজি এবং সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।


