আতাউর রহমান খসরু : আলস্য, উদাসীনতা ও অমনোযোগ সর্বাবস্থায় নিন্দনীয়। আর যখন তা আল্লাহ, তাঁর স্মরণ, ইবাদত ও আনুগত্যের ব্যাপারে হয় নিন্দার পরিমাণ আরো বেড়ে যায় এবং ক্ষেত্রবিশেষে তা পাপে পরিণত হয়। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা গাফিলদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ২০৫)
দ্বিনের ব্যাপারে উদাসীন করে যা : মানুষকে দ্বিনের ব্যাপারে উদাসীন করে তোলে এমন কয়েকটি বিষয় নিম্নে উল্লেখ করা হলো।
১. জাগতিক মোহ : জাগতিক জীবনের মোহ মানুষকে আল্লাহবিমুখ করে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তাদের ছেড়ে দিন! তারা খেতে থাকুক, ভোগ করতে থাকুক এবং আশা তাদের মোহাচ্ছন্ন করে রাখুক। অচিরেই তারা জানতে পারবে।’ (সুরা : হিজর, আয়াত : ৩)
২. দ্বিনবিমুখদের সাহচর্য : সঙ্গদোষে মানুষ বহু মন্দ কাজে অভ্যস্ত হয়। আল্লাহবিমুখদের সাহচর্য মানুষকে আল্লাহর ব্যাপারে উদাসীন করে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তুমি তাদের আনুগত্য কোরো না, যার অন্তরকে আমি আমার স্মরণে অমনোযোগী করে দিয়েছি। যে তার খেয়াল-খুশির অনুসরণ করে ও যার কার্যকলাপ সীমা অতিক্রম করে।’ (সুরা : কাহফ, আয়াত : ২৮)
৩. ভোগ-বিলাসে মত্ত থাকা : ভোগ-বিলাসে মত্ত হলে মানুষের অন্তর আল্লাহর ব্যাপারে উদাসীন হয়ে যায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি শিকারের পেছনে লেগে থাকে সে উদাসীন হয়ে যায়।’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ৪৩০৯)
৪. পাপাচারে ডুবে থাকা : পাপ মানুষের হৃদয়কে আল্লাহ ও দ্বিনের ব্যাপারে উদাসীন করে। আল্লাহ বলেন, ‘কখনো নয়, বরং তাদের কৃতকর্মই তাদের হৃদয়ে জং ধরিয়েছে।’ (সুরা : মুতাফফিফিন, আয়াত : ১৪)
৫. প্রবৃত্তির অনুসরণ : প্রবৃত্তির অনুসরণ মানুষকে অন্ধে পরিণত করে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তুমি কি লক্ষ করেছ যে তার খেয়াল-খুশিকে উপাস্যে পরিণত করেছে? আল্লাহ জেনে-শুনে তাকে বিভ্রান্ত করেছে। তার কান ও হৃদয় মোহর করে দিয়েছেন এবং তার চোখের ওপর রেখেছেন আবরণ।’ (সুরা : জাসিয়া, আয়াত : ২৩)
উদাসীনতা থেকে মুক্তির উপায় : উদাসীনতা পার্থিব জীবনের ব্যাপারে হোক বা অপার্থিব জীবনের ব্যাপারে হোক তা নিন্দনীয়। মানবস্বভাবের এ মন্দ বৈশিষ্ট্য থেকে বাঁচার কিছু উপায়ও হাদিসে বর্ণিত হয়েছে।
ক. আল্লাহর জিকির : আল্লাহর জিকির দ্বিনের ব্যাপারে মানুষের উদাসীনতা দূর করে দেয়। নবী করিম (সা.) বলেন, ‘যখন তোমরা জান্নাতের বাগানগুলোর পাশ দিয়ে যাবে সে সময় সেখান থেকে পাকা ফল তুলে নেবে। লোকেরা প্রশ্ন করল, জান্নাতের বাগানগুলো কী? তিনি বললেন, জিকিরের মজলিস।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৩৫১০)
খ. জামাতে নামাজ আদায় : জামাতের সঙ্গে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করলে দ্বিনের ব্যাপারে উদাসীনতা কমে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ যথাযথভাবে আদায় করে তাকে উদাসীনদের তালিকাভুক্ত করা হবে না।’ (সহিহ ইবনে খুজাইমা)
গ. তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় : রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি তাহাজ্জুদে ১০ আয়াত পাঠ করল তাকে উদাসীনদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে না।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ১৩৯৮)
ঘ. আল্লাহর কাছে দোয়া করা : মহানবী (সা.) দোয়া করতেন—‘হে আল্লাহ আমি আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি অক্ষমতা, আলস্য, চরম বার্ধক্য, কৃপণতা, কাপুরুষতা, হৃদয়ের কঠোরতা ও উদাসীনতা থেকে।’ (সহিহ ইবনে হিব্বান)
ঙ. দুনিয়াবিমুখতা : দুনিয়াবিমুখতা মানুষকে আল্লাহমুখী করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর কসম! আমি তোমাদের জন্য দারিদ্র্যের ভয় করছি না, বরং ভয় করছি যে তোমাদের ওপর দুনিয়া প্রশস্ত করে দেওয়া হবে তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতের ওপর যেমন দুনিয়া প্রশস্ত করে দেওয়া হয়েছিল। আর তোমরা তা পাওয়ার জন্য প্রতিযোগিতা করবে যেমন তারা তা পাওয়ার জন্য প্রতিযোগিতা করেছিল। আর তা তোমাদের আখিরাতবিমুখ করে ফেলবে, যেমন তাদের আখিরাতবিমুখ করেছিল।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৪২৫)
আল্লাহ সবাইকে দ্বিনের ব্যাপারে উদাসীনতা থেকে রক্ষা করুন। আমিন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।