মানুষ যে পশু থেকে আলাদা তার কারণ নির্ণয়ে একদা এক ভাঁড় মানুষের দুটি মৌলিক বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করেন। রসবোধ ও ঐতিহাসিক চেতনা। মানুষ তার ব্যর্থতাকে উপহাস করতে পারে এবং একই কাজে দুই বার ব্যর্থ হয় না। আমরা এর সঙ্গে আরও একটি বৈশিষ্ট্য যোগ করতে চাই। নিজেকে ‘কেন’ জিজ্ঞাসা করা এবং তার উত্তর সন্ধান।
আমরা এখন ‘কেন’ এই ছোট্ট শব্দটি ব্যবহার করি। যেমন, অধাতু বড় বাড়ির বিভিন্ন তলা ও আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে না থেকে কেন একটি কোণে এমন আলাদা হয়ে আছে? ধাতু যেমন ধাতু, অধাতুও তেমনি অধাতু। কিন্তু তাদের মধ্যে পার্থক্য কী? শুরু করার পক্ষে শেষ প্রশ্নটিই বেশি উপযোগী।
দুটি মৌলের মধ্যে রাসায়নিক বিক্রিয়া হলে এগুলোর পরমাণুর প্রত্যন্ত ইলেকট্রন খোলক পুনর্বিন্যস্ত হয়। মৌল দুটির একটি ইলেকট্রন ত্যাগ করে এবং অন্যটি তা গ্রহণ করে। এই অতি গুরুত্বপূর্ণ রাসায়নিক নিয়মেই ধাতু ও অধাতু আলাদা করা হয়। অধাতু দুটি পরস্পর বিপরীত কাজে করতে পারে।
নিয়মানুসারে অধাতু ইলেকট্রনগ্রাহী, কিন্তু ইলেকট্রন ত্যাগেও অপারগ নয়। এগুলো নমনীয় স্বভাবের এবং অবস্থানুযায়ী চেহারা পাল্টাতেও পারে। ইলেকট্রন গ্রহণই সুবিধাজনক—এরা ঋণাত্মক আয়নেরই ভেক ধরে। আর উল্টো ক্ষেত্রে ধনাত্মক আয়নের উদ্ভব হয়। ফ্লোরিন আর অক্সিজেনই শুধু ভোল বদলাতে জানে না—এরা ইলেকট্রনগ্রাহী, ইলেকট্রনত্যাগী নয়।
ধাতু তেমন কিছু ‘কূটনীতিক’ নয়। ধাতু বেশি লক্ষ্যনিষ্ঠ। ধাতুর অনমনীয় নীতি: কেবলই ইলেকট্রন দাও আর কিছু না। ধাতু ধনাত্মক আয়ন গঠন করে। বাড়তি ইলেকট্রন জোগাড় করা ধাতুর কাজ নয়। ধাতু মৌলগুলোর ব্যবহারিক নিয়মতন্ত্র খুব কড়া।
এই তো গেল ধাতু ও অধাতুর মধ্যে পার্থক্য। কিন্তু অতি সতর্ক রাসায়নবিদরা এই কঠোর নিয়মেরও ব্যতিক্রম খুঁজে পেয়েছেন। ধাতুগুলোর মধ্যেও চারিত্রিক বৈকল্য পুরোপুরি অনুপস্থিত নয়। এদের দুটি (এ যাবত!) ‘অধাতু’ স্বভাবের। অ্যাস্টেটাইন ও রেনিয়াম (মেন্ডেলিভের সারনির ৮৫ নং এবং ৭৫ নং ঘরের বাসিন্দা) ঋণাত্মক একযোজী আয়ন গঠন করে। ঘটনাটি লক্ষ্যনিষ্ঠ ধাতু পরিবারের কলঙ্ক বৈকি…
এখন দেখা যাক, কোন পরমাণুর পক্ষে ইলেকট্রন দান সহজ আর কোনটিই প্রলুব্ধ ইলেকট্রনগ্রাহী? যে পরমাণুর প্রত্যন্ত খোলকে ইলেকট্রন সংখ্যা খুব কম, তার পক্ষে ওটি ত্যাগ করাই সুবিধাজনক। কিন্তু যেখানে ইলেকট্রন বেশি, সেই পরমাণু আরও ইলেকট্রন সংগ্রহ করে অষ্টকটি পূরণ করতে চায়।
ক্ষার ধাতুর বাড়তি ইলেকট্রন মাত্র একটি। এর পক্ষে ওটি ছেড়ে দেয়া কঠিন নয়, আর তাতে পড়শী নিষ্ক্রিয় গ্যাসের মতোই স্থায়ী ইলেকট্রন খোলক অবারিত হয়ে ওঠে। এ জন্য জানা ধাতুগুলোর মধ্যে ক্ষারধাতুই সেরা কর্মিষ্ঠ। আবার তাদের নিজেদের মধ্যে ফ্রান্সিয়ামই ‘কাজের কাজী’ (৮৭ নম্বর ঘর)। মৌল স্বদলে যত বেশি ভারি তার পরমাণুও তত বড় আর একমাত্র ইলেকট্রনটির ওপর তার দখলও সে পরিমাণেই কম।
ফ্লোরিন অধাতুরাজ্যের অগ্নিশর্মা। তার ‘প্রত্যন্তদেশীয়’ ইলেকট্রন সাতটি। তার কাছে অষ্টম ইলেকট্রনটি তাই আশীর্বাদস্বরূপ। পর্যায়বৃত্তের যেকোন মৌল থেকে ইলেকট্রন ছিনিয়ে নিতে তার অশেষ লোভ। ফ্লোরিনের উন্মত্ত আক্রমণ অপ্রতিরোধ্য।অন্যান্য অধাতুও ইলেকট্রনলোভী। কেউ কম কেউ বেশি। এগুলো কেন ওপর তলায় ডানদিকে দলবদ্ধ হয়ে আছে তার কারণ এখন আমরা বুঝতে পারি। এদের প্রত্যন্ত ইলেকট্রন সংখ্যা অঢেল এবং পর্যায় শেষের পরমাণুতেই শুধু তা সম্ভব।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।