স্পোর্টস ডেস্ক : ইংল্যান্ড দল ইনিংসের শেষ ৪৮ বলে জড়ো করল ১০৩ রান। তাতে থ্রি লায়ন্সরা দুই শত রানের চ্যালেঞ্জ জানায় স্বাগতিক পাকিস্তানকে। তবে শেষ কয়েক টি-২০ ম্যাচে বাবর আজম ও মোহাম্মদ রিজওয়ানের কিছুটা ধীরগতির ব্যাটিং স্টাইল খুব ঢালাও ভাবেই নিন্দিত হচ্ছিল। তাই ১০ আস্কিং রেটের সঙ্গে ম্যাচ জিততে স্বাগতিকদের অন্তরায় ছিল মাঠের বাইরের প্রতিপক্ষও। করাচিতে বাবর ও রিজওয়ান রান তাড়া করতে নামেই ব্যাট চালালেন তলোয়ারের ন্যায়।
ইংলিশ বোলারদের দর্শক বানিয়ে যখন বলকে আঁচড়ে ফেলছিলেন সীমানার বাহিরে, সেগুলো পরক্ষভাবে যেন লাগছিল সমালোচকদের গায়েই। দুই সমালোচিত ওপেনার রেকর্ড পার্টনারশিপ গড়েন পরশুরাতে। ফলে কোন উইকেট না হারিয়ে এবং ৩ বল হাতে রেখে, দলকে যখন জয়ের বন্দরে পৌঁছে দিলেন তারা, তখন দর্শকদের চিৎকারে বধির হবার অবস্থা। হবেই না বা কেন? সাত ম্যাচের সিরিজে যে ১-১ ব্যবধানে সমতায় আসল স্বাগতিকরা।
করাচিতে সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৫ উইকেটে ১৯৯ রান তোলে ইংল্যান্ড। দলটির হয়ে সর্বোচ্চ ৫৫ রান করেন অধিনায়ক মইন আলী। ২৩ বলে খেলা হার না মানা এই ইনিংসে ছিল ৪টি চার ও সমান সংখ্যক ছক্কার মার। এছাড়া বেন ডাকেট ২২ বলে ৪৩, হ্যারি ব্রুক ১৯ বলে ৩১ রানের কার্যকরী ইনিংস খেলেন। পাকিস্তানের বোলারদের মধ্যে দুটি করে উইকেট নেন শাহনেওয়াজ দাহানি এবং হারিস রউফ।
লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরু থেকেই অপ্রতিরোধ্য ভঙ্গিমায় ব্যাট চালাতে থাকেন বাবর ও রিজওয়ান। ম্যাচটি যেন সমালোচকদের জবাব দেয়ার জন্যই খেললেন। বাবর খেললেন ৬৬ বলে ১১০ রানের হার না মানা এক অসামান্য ইনিংস। তাতে ছিল ১১টি চার ও ৫টি ছক্কার মার। সঙ্গী কিপার-ব্যাটার রিজওয়ান সেঞ্চুরি না পেলেও ৫টি চার ও ৪টি ছক্কায় করেন ৫১ বলে অপরাজিত ৮৮ রান। এই দুই পাক ব্যাটসম্যান টি-টোয়েন্টির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় (রান তাড়ার হিসেবে) ১০ উইকেটের জয়টি সম্পন্ন করেছে। ইংল্যান্ডের অধিনায়ক মঈন আলীতো পরে বলেই ফেললেন, ‘আমি ভেবেছিলাম এটা খুব ভালো স্কোর।‘ বাবর-রিজওয়ান রান তাড়া করতে নেমে আন্তর্জাতিক ও ঘরোয়া সংস্করণ মিলিয়ে প্রথমবারের মত ২০০ রানের জুটি গড়েলেন (২০৩*)। এই যাত্রায় ভেঙ্গেছেন নিজেদেরই পূর্বের রেকর্ড (১৯৭)। গত বছর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সেই রেকর্ড গড়েছিলেন এই দুই পাক ব্যাটার।
শেষ কইয়েক বছর পাকিস্তানের জন্য, টি-টোয়েন্টি হল তাড়ার মঞ্চ। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে রিজওয়ান ওপেন করা শুরু করলে, পাকিস্তান রান তাড়া করতে নেমে ১৫টি ম্যাচ জিতেছে এবং মাত্র ৩টি হেরেছে। রিজওয়ান ব্যাক্তিগত ইনিংসের ২৩ ও ৩২ রানের সময় দুটি জীবন পেলেও পরে একদম নিখুঁত ছিলেন। বাবর ঢিমেতালে শুরু করে রিজওয়ানের চেয়ে নয়টি বল বেশি (৩৯) অর্ধশতপাওয়ার পরই হাত খুলেন।
এদিকে চোটের পর পুনঃর্বাসনে ইংল্যান্ডে থাকা শাহিন শাহ আফ্রিদি দুই সতীর্থের সমালোচকদের ইঙ্গিত করে বলেন আমার মনে হয়, সময় হয়েছে অধিনায়ক বাবর আজম ও মোহাম্মদ রিজওয়ানকে সরিয়ে দেওয়ার। এত স্বার্থপর ক্রিকেটার দুজন! ঠিকভাবে খেললে তো ম্যাচ ১৫ ওভারেই শেষ হয়ে যেত। অথচ দুজন শেষ ওভার পর্যন্ত খেলা টেনে নিয়ে গেছে। এটা নিয়ে আন্দোলন করা উচিত, তাই না?
সমালোচকদের খোঁচা দিয়ে শেষ লাইনে তিনি লিখেন, ‹এই পাকিস্তান দলকে নিয়ে আমি দারুণভাবে গর্বিত।› সহকারী অধিনায়ক শাদাব খান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেন, ‘মনে রাখবেন, রাজা সব সময় রাজাই থাকে, বাবর আমাদের রাজা।‘
ইংল্যান্ডের ধারাভাষ্যকার ও সাবেক অধিনায়ক নাসের হুসাইন আরও একধাপ এগিয়ে বলেন, ‘আপনি যদি মনে করে বাবর–রিজওয়ানের ব্যাটিংয়ে সমস্যা, তাহলে তাদের কয়েক বছরের খেলা আপনি দেখেননি।’
এই দুই ব্যাটসম্যান প্রথম জুটি হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে দুই হাজার রানের মাইলফলকের দিকে আরও খানিকটা এগিয়ে গেছেন। এই ম্যাচের পর তাদের জুটির রান ১,৯২৯। ৩৬ ইনিংস একসঙ্গে ব্যাট করে তাদের গড় ৫৬.৭৩। পেছনে ফেলেছেন রোহিত শর্মা ও শিখর ধাওয়ান জুটির ৫২ ইনিংসে ১,৭৪৩ রান।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।