গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও ৩২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মোট মৃত্যু হয়েছে ১,১৭১ জনের। নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ৩ হাজার ১৪১ জন। সব মিলিয়ে দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৮৭ হাজার ছাড়িয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে মৃত্যুর এক নতুন প্রবণতা উদ্বেগ ছড়াচ্ছে। বাড়িতে মৃত্যুবরণ করছে অনেক বেশি। আজ করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৩২ জন মারা গেছে। এদের মধ্যে ১১ জনই বাড়িতে মারা গেছেন। চিকিৎসক এবং বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে এটা এক উদ্বেগজনক দিক। কারণ এই ধারা যদি বাড়তে থাকে তাহলে করোনায় মৃত্যু ভয়ঙ্কর রূপ নিবে এবং বাংলাদেশে মৃত্যুর হার আচমকা বেড়ে যেতে পারে।
বাড়িতে মৃত্যু কেন বাড়ছে এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, করোনা রোগীদের সংখ্যা যেহেতু বাড়ছে সেহেতু হাসপাতালে রোগীদের জায়গা হচ্ছে না। মানুষ হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে ঘুরেও চিকিৎসা নিতে পারছে না। ফলে তাঁরা এক প্রকার বাধ্য হয়েই বাড়িতে অবস্থান করছে এবং অক্সিজেনের অভাবে বা অন্যান্য চিকিৎসা অভাবে তাঁরা মৃত্যুবরণ করছেন। বাড়িতে মৃত্যু এক ধরণের চিকিৎসাহীনতায় মৃত্যু বলে মনে করছেন অনেক বিশেষজ্ঞরা।
দ্বিতীয়ত, অনেকেই সামাজিকতা, লোকলজ্জার ভয়ে করোনা সংক্রমণের তথ্য গোপন করছেন। করোনা আক্রান্ত হওয়ার পরেও তাঁরা বাসায় থাকছেন এবং তাঁরা মনে করছেন যে, বাসায় বসে চিকিৎসা নিয়েই তাঁরা ঠিক হয়ে যাবেন। কিন্তু হঠাৎ করে তাঁদের পরিস্থিতি খারাপ হয়ে যাচ্ছে এবং মৃত্যুবরণ করছেন। দেখা যাচ্ছে যে, একটি বাড়িতে কারো করোনা শনাক্ত হলে সেই বাড়িটিকে একঘরে করা হচ্ছে। সামাজিকভাবে তাঁকে হেয়প্রতিপন্ন করা হচ্ছে, বাড়িটিকে লকডাউন করে ফেলা হচ্ছে, অনেক করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি চাকরি হারাচ্ছেন। ঢাকা শহরেই এমন খবর পাওয়া যাচ্ছে যে, একটি বাড়িতে করোনা শনাক্তের খবর পাওয়ার পরে ঐ বাড়িতে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এমনকি ঐ বাসাতে খবর পৌঁছে দিতেও অস্বীকৃতি জানাচ্ছে।
এই সমস্ত বাস্তবতার কারণে করোনায় আক্রান্ত হয়ে অনেকেই তথ্য গোপন করছেন। নিজেরাই চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে উঠবে এমন মনোভাব দেখাচ্ছে। কিন্তু হঠাৎ করেই তাঁরা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন এবং মৃত্যুবরণ করছেন। যে তথ্যগুলো আমরা পাচ্ছি তাতে যে হারে মৃত্যুবরণ করছে তাঁর থেকে অনেক বেশি আক্রান্ত রোগী বাড়িতে আছেন। তাঁরা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। আর এই কারণে সামনের দিনগুলো আরো ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলে মনে করছেন চিকিৎসক এবং বিশেষজ্ঞরা। কারণ যদি হাসপাতালগুলো রোগীদের চাপ উপচে পড়ে এবং যদি হাসপাতালগুলোতে আর চিকিৎসা নেওয়া না যায় তাহলে যারা জটিল-কঠিন রোগী, যাদের আইসিইউ প্রয়োজন, যাদের অক্সিজেন প্রয়োজন তাঁদের মধ্যে মৃত্যুহার বাড়বে।
দ্বিতীয়ত, যারা বাড়িতে বসে চিকিৎসা নিচ্ছেন তাঁরা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে বাড়িতেই মারা যাবেন। সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে যে, একটি বাড়িতে যখন কেউ মারা যাবেন তখন ঐ বাড়ির অন্যান্যরাও ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। শুধু ঐ বাসা নয়, বাসার আশেপাশে বা উপরে-নিচের ফ্লাটবাসাগুলোতেও সংক্রমণ ছড়িয়ে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়বে। সামাজিক সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, যদি কেউ করোনা আক্রান্ত হয় তাহলে তাঁকে আইসোলেশনে নেওয়া, পৃথকীকরণ করাই হলো একমাত্র সমাধান। তিনি যাদের যাদের সংস্পর্শে এসেছেন তাঁদেরকে পরীক্ষা করাতে হবে। পরীক্ষা করে করোনা শনাক্ত হলে তাদেরকেও পৃথক করতে হবে। এইভাবেই যারা আক্রান্ত এবং আক্রান্তদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের আলাদা করাই হলো করোনা মোকাবেলায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন।
কিন্তু এখন করোনা সংক্রমিত হওয়ার পরে বাড়িতে থাকার যে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে তা বাংলাদেশের বাস্তবতায় একটি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত বলে মনে করছেন অনেক বিশেষজ্ঞ। কারণ বাংলাদেশের অনেক বাড়িতেই গাদাগাদি করে থাকতে হয়। আইসোলেশনে থাকার মতো আলাদা রুম অধিকাংশ বাড়িতে নেই। এখন যেহেতু হাসপাতালেও চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হচ্ছেনা কাজেই আক্রান্ত হয়ে বাসায় থাকার কোন বিকল্প নেই। ফলে তিনি যেমন অসুস্থ হয়ে পড়ছেন, তেমনি তাঁর পরিবারের অন্যরাও আক্রান্ত হচ্ছেন এবং সামাজিক সংক্রমণ দ্রুত ছড়াচ্ছে। আর আক্রান্ত ব্যক্তিদের যেহেতু কোন সাহায্য করা হচ্ছেনা, তাঁদের মধ্যে থেকেই অপেক্ষাকৃত কম আক্রান্ত ব্যক্তিরাই তথ্য গোপন করে বাজারহাটে যাচ্ছেন এবং করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে দিচ্ছেন।
কাজেই এই বাস্তবতায় বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের নতুন আতঙ্ক তৈরি হচ্ছে বাড়িতে মৃত্যু এবং এইজন্যেই চিকিৎসকরা বলছেন করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিদের দ্রুত শনাক্ত করা, তাঁকে আলাদা করে আইসোলেশনে নেওয়া এবং তাঁর সংস্পর্শে আসা সকলদের পরীক্ষা করা ছাড়া বাংলাদেশে করোনার মহামারি ঠেকানোর কোন বিকল্প পথ খোলা নেই।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।