আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইউরোপীয় ইউনিয়নের আরো সংস্কারের পাশাপাশি রাজনৈতিক মূল্যবোধের ভিত্তিতে এক নতুন ইউরোপীয় রাজনৈতিক জোট গড়ার প্রস্তাব রেখেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট মাক্রোঁ৷ ফলে বিতর্ক দেখা দিচ্ছে৷ খবর ডয়চে ভেলে’র।
প্রথমবার ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট হবার পরেই ইউরোপীয় ইউনিয়নকে আরও কার্যকর ও মজবুত করে তোলার উচ্চাকাঙ্ক্ষা দেখিয়েছিলেন এমানুয়েল মাক্রোঁ৷ তবে বিশেষ করে জার্মানির কাছ থেকে তেমন সাড়া না পেয়ে সেই উদ্যোগ সীমিতই থেকে গেছে৷ দ্বিতীয় কার্যকালের শুরুতে ইউরোপকে ঘিরে নতুন স্বপ্ন দেখছেন তিনি৷ বিশেষ করে ইউক্রেন সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে মাক্রোঁ ইউরোপীয় মূল্যবোধের ভিত্তিতে এমন এক রাজনৈতিক রাষ্ট্রজোট গড়ে তুলতে চান তিনি, যার মধ্যে ইইউ সদস্য না হয়েও ব্রিটেন ও ইউক্রেনের মতো দেশ স্থান পাবে৷
সোমবার ফ্রান্সের স্ট্রাসবুর্গে ইউরোপ দিবস উপলক্ষ্যে এক ভাষণে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট তার প্রস্তাবিত জোটের রূপরেখা তুলে ধরেন৷ মাক্রোঁর মতে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের পূর্ণ সদস্য হয়ে উঠতে ইউক্রেনের কয়েক বছর বা দশক সময় লাগতে পারে৷ উল্লেখ্য, ইউক্রেনের আবেদনের ভিত্তিতে আগামী জুন মাসে প্রাথমিক জবাব দেবে ইইউ কমিশন৷ আপাতত ইইউ-র সঙ্গে ‘অ্যাসোসিয়েশন চুক্তি’-র ভিত্তিতে সে দেশ কিছু সুবিধা ভোগ করছে৷ এবার প্রার্থী হিসেবে স্বীকৃতি পেলেও যোগদানের প্রক্রিয়া দীর্ঘ হতে পারে৷ কড়া শর্ত মেনে প্রয়োজনীয় সংস্কার চালাতে হবে ইউক্রেনকে৷ ইইউ-র যে কোনো সদস্য দেশ সেই প্রক্রিয়া বানচাল করতে ভেটো শক্তি প্রয়োগ করতে পারে৷ রাশিয়ার হামলার মুখে ইইউ ঐক্যবদ্ধভাবে ইউক্রেনের সহায়তা করলেও সে দেশের ইইউ-তে যোগদানের বিষয়ে মতবিরোধ লক্ষ্য করা যাচ্ছে৷ মাক্রোঁ নিজেও ইইউ-তে যোগদানের শর্ত শিথিল করার বিপক্ষে৷
এমন অচলাবস্থা এড়াতে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ‘ইউরোপীয় রাজনৈতিক কমিউনিটি’ গড়ে তোলার প্রস্তাব রেখেছেন৷ গণতান্ত্রিক ইউরোপীয় দেশগুলি মৌলিক মূল্যবোধের ভিত্তিতে সেই জোটে ঐক্যবদ্ধ হতে পারবে বলে মাক্রোঁ আশা করেন৷ ইউক্রেনের মতো যে সব দেশ এখনো ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগদান করে নি, সেগুলিও এই বৃহত্তর ইউরোপীয় পরিবারের অংশ হতে পারে৷ ইইউ ত্যাগ করা দেশ ব্রিটেনও সেটি জোটের অংশ হতে পারে৷
মাক্রোঁর প্রস্তাব অনুযায়ী এই ইউরোপীয় রাজনৈতিক জোটের সদস্যরা রাজনীতি, নিরাপত্তা, জ্বালানি, পরিবহন, বিনিয়োগ, অবকাঠামো, মানুষ চলাচলের মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা করতে পারে৷ তবে এই জোটের সদস্য হলেই ভবিষ্যতে ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগদানের কোনো গ্যারেন্টি থাকবে না৷
নতুন রাজনৈতিক জোট গঠনের পাশাপাশি সংস্কারের মাধ্যমে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভিত্তিও আরও মজবুত করতে চান মাক্রোঁ৷ ইইউ চুক্তিগুলি সংশোধনের মাধ্যমে সদস্য দেশগুলির মধ্যে আরও গভীর সহযোগিতা চান তিনি৷ ইউরোপীয় পার্লামেন্টের এক প্রস্তাব অনুযায়ী সেই লক্ষ্যে এক কনভেন্ট আহ্বান করার পক্ষে সমর্থন জানান মাক্রোঁ৷ বিগত এক বছর ধরে ইইউ নাগরিকদের সঙ্গে সংলাপের এক প্রক্রিয়ার শেষে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভবিষ্যৎ নিয়ে বক্তব্য রাখেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট৷
নিজেকে ইউরোপের সংস্কারক হিসেবে তুলে ধরে মাক্রোঁ যে সব প্রস্তাব রেখেছেন, তার ফলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে৷ অনেক দেশ মনে করছে, বিষয়গুলি নিয়ে গভীর চিন্তাভাবনা ছাড়াই মাক্রোঁ তড়িঘড়ি করে প্রস্তাব হিসেবে তুলে ধরেছেন৷ বিশেষ করে ইউরোপের উত্তর ও পূর্বাংশের ১৩টি সদস্য দেশ মনে করে, যে সাম্প্রতিক সংকটগুলিতে ইইউ প্রচলিত চুক্তির ভিত্তিতেই কার্যকর ভূমিকা রাখতে পেরেছে৷ জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস মাক্রোঁর প্রস্তাব শুনে আপাতত ‘ইন্টারেস্টিং’ হিসেবে মন্তব্য করেছেন৷
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।