জুমবাংলা ডেস্ক : চাল বিক্রিতে প্রতারণাসহ বিভিন্ন অপরাধ ঠেকাতে আইন প্রণয়ন করতে যাচ্ছে সরকার। এরইমধ্যে আইনটির খসড়া তৈরি হয়েছে। এটি মন্ত্রিসভায় নীতিগত অনুমোদনের পর বর্তমানে আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের জন্য রয়েছে। অর্থাৎ বিদ্যমান অন্য কোনো আইনের সঙ্গে এটি সাংঘর্ষিক কিনা; তা পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।
আইনটি পাস হলে মিনিকেট, নাজিরশাইল ও লতা—এমন সব কৃত্রিম নামে চাল বিক্রি করা যাবে না। কারণ বাস্তবে চালের এমন কোনো জাত নেই।
খাদ্যদ্রব্যের উৎপাদন, মজুত, স্থানাস্তর, পরিবহন, বিতরণ ও বিপণনের সঙ্গে অপরাধের বিবরণ দেয়া হয়েছে নতুন আইনে। এটির বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করে বলা হয়েছে, এর মাধ্যমে বাজারে খাদ্যদ্রব্যের সরবরাহ স্বাভাবিক ও পণ্যমূল্য স্থিতিশীল রাখা সম্ভব হবে। আর অপরাধীদের শনাক্ত করে শাস্তির মুখোমুখি করা যাবে।
‘খাদ্যদ্রব্যের উৎপাদন, মজুত, স্থানাস্তর, পরিবহন, সরবরাহ, বিতরণ ও বিপণন (ক্ষতিকর কার্যক্রম প্রতিরোধ) আইন, ২০২২’ শিরোনামের এই আইন কেউ লঙ্ঘন করলে তাকে অনূর্ধ্ব পাঁচ বছর কারাদণ্ড কিংবা ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড কিংবা উভয় ধরনের সাজা ভোগ করতে হতে পারে।
আইনের অধীন অপরাধের বিচার হবে ‘খাদ্যদ্রব্য বিশেষ আদালতে’। এ জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক আদালতের ব্যবস্থা করা হবে। এতে উৎপাদন বলতে বোঝানো হয়েছে, যান্ত্রিক কিংবা কায়িক উপায়ে গুণগতমান অপরিবর্তিত রেখে উৎপাদিত খাদ্যদ্রব্য।
সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, বেসরকারি ব্যক্তি, সংস্থা ও ব্যবসায়ীরা গুদাম, দোকান, ঘর, লাইটার, কোস্টার, যে কোনো যানে কিংবা স্থানে খাদ্যদ্রব্য জমিয়ে কিংবা স্তূপ করে রাখলে তাকে খাদ্যদ্রব্যের মজুত বলা হবে।
আইনে অপরাধ সম্পর্কে বলা হয়েছে তৃতীয় ধারায়। এতে বলা হয়, খাদ্যদ্রব্যের উৎপাদন, মজুত, স্থানাস্তর, পরিবহন, সরবরাহ, বিতরণ, বিপণন ও এ সংক্রান্ত অন্য কাজে আইন লঙ্ঘন করলে সাজা পেতে হবে।
ক (২) উপধারায় বলা হয়েছে, কোনো স্বীকৃত জাতের খাদ্যশস্য থেকে উৎপাদিত খাদ্যদ্রব্য স্বীকৃত জাতের উপজাত পণ্য হিসেবে উল্লেখ না করে ভিন্ন কিংবা কাল্পনিক নামে বাজারজাত করে ক্রেতাকে প্রতারিত ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করলে তা অপরাধ। এভাবে প্রতারিত কিংবা ক্ষতির চেষ্টা করা হলেও এ আইন অনুসারে সাজা পেতে হবে।উপধারা (খ)-এ বলা আছে, নিজেদের খাওয়ার উদ্দেশ্য ছাড়া পরিবহন যান কিংবা গুদামে বা যে কোনো স্থানে সরকারঘোষিত পরিমাণের চেয়ে বেশি খাদ্যশস্য মজুত রাখা বা মজুত করা খাদ্যশস্যের হিসাব কর্তৃপক্ষকে দেখাতে ব্যর্থ হলে তা অপরাধ হিসেবে দেখা হবে।
উপধারা খ (২)-এ বলা আছে, মজুত করা খাদ্যশস্যের উৎস সম্পর্কে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে না-জানানো ও গোপন রাখাও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
পরের ধারায় বলা হয়েছে, অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আইন, ১৯৫৬ ও প্রচলিত অন্য আইনের আওতায় প্রয়োজনীয় লাইসেন্স না নিয়ে খাদ্যদ্রব্য মজুত ও ক্রয়-বিক্রয় করলে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।
উপধারা (৪)-এ পুরোনো চাল পলিশ করে অসৎ উদ্দেশ্যে সরকারি গুদামে সরবরাহ করা, সরকারি গুদামের খাদ্যশস্য অবৈধভাবে সংগ্রহ করে অথবা দেশীয় চালের পরিবর্তে আমদানি করা চাল সরকারি গুদামে সরবরাহ করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
আইনে আরও বলা রয়েছে, সরকারি গুদামের খাদ্যশস্যভর্তি বস্তা পুনরায় সরকারের কাছে বিক্রি করা, সরকারি গুদামের সিলযুক্ত চাল বিক্রির প্রমাণ পাওয়া গেলে শাস্তি হবে। প্রকল্পে বিতরণকৃত চাল পরিমাণে কম দেয়া, উপকারভোগী ছাড়া অন্য কাউকে দিলে শাস্তি হবে।
এছাড়া খাদ্যশস্য বিক্রি-বিতরণকালে বিএসটিআই অনুমোদিত বাটখারা ব্যবহার না করা, লেনদেনের হিসাব সংরক্ষিত না রাখা, খাদ্যশস্যের মজুতসংক্রান্ত মিথ্যা তথ্য বা বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হলে শাস্তি ভোগ করতে হবে। এসব আইনের ব্যত্যয় হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা ব্যবসায়ীকে ৫ বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ লাখ টাকা জরিমানা বা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।