বিজ্ঞান ও প্রযক্তি ডেস্ক : নতুন পিক্সেল ৮ এবং ৮ প্রোর ডিজাইনে তেমন বড়সড় পরিবর্তন নেই, পিক্সেল ৭ সিরিজের ডিজাইনের মধ্যে আনা হয়েছে আগের চেয়ে আরো রাউন্ডেড কর্নার এবং ক্যামেরার অবস্থানে আনা হয়েছে সামান্য পরিবর্তন। অ্যাপল এবং স্যামসাংয়ের পথেই হাঁটছে গুগল, নিজেদের ডিভাইসের সিগনেচার লুক পরিবর্তনের বদলে বিবর্তন করেই যে তৈরি করছে নতুন মডেল সেটা পরিষ্কার। পিক্সেল ওয়াচের বাহ্যিক চেহারাও তেমন বদলায়নি, তবে এটির ডিজিটাল ক্রাউন এবং পেছনের সেন্সরে এসেছে বড়সড় পরিবর্তন। দূর থেকে দেখে অবশ্য সেটা বোঝার উপায় নেই।
তবে পিক্সেল ৮ প্রো-এর নতুন ‘বে ব্লু’ রংটি এরই মধ্যে পিক্সেল ভক্তদের মধ্যে সারা ফেলে দিয়েছে।
পিক্সেল ৮ এবং ৮ প্রো
এবার পিক্সেল ৮ ফোনটি পাচ্ছে নতুন টেনসর জি৩ প্রসেসর, ৮ গিগাবাইট র্যাম এবং ৬.২ ইঞ্চি ওলেড ডিসপ্লে। গতবারের পিক্সেল ৭-এর চেয়ে ডিসপ্লেটি কিছুটা ছোট, তবে রিফ্রেশ রেট ১২০ হার্জ, ৯০ হার্জ নয়। রেজল্যুশন থাকছে ৭-এর মতোই ১০৮০পি এইচডি।
তবে এলপিটিও প্রযুক্তি এতে থাকছে না। ক্যামেরা থাকছে বরাবরের মতোই দুটি, প্রো সিরিজের মতো তিনটি নয়। মূল ক্যামেরা ৫০ মেগাপিক্সেল, আর আলট্রা ওয়াইডটি ১২ মেগাপিক্সেল। সেলফি ক্যামেরার রেজল্যুশন ১০.৫ মেগাপিক্সেল।
তবে গুগলের দাবি, নতুন প্রসেসরটি টেনসর জি১-এর তুলনায় ১০ গুণ দ্রুত মেশিন লার্নিং ও এআই ফিচার চালাতে সক্ষম। আর তাই পিক্সেল ৮-এর ক্যামেরা হার্ডওয়্যারে তেমন নতুনত্ব না থাকলেও ছবির মান, বিশেষ করে অন্ধকারে তোলা ছবির ডিটেইল ও নয়েজের পরিমাণ আগের ফোনগুলোর চেয়ে অনেক এগিয়ে থাকবে। ব্যাটারি দেওয়া হয়েছে ৪৫৭৫ এমএএইচের, চার্জিং স্কিড সর্বোচ্চ ২৭ ওয়াট। তারহীন চার্জিংয়ের গতি ১৮ ওয়াট। পাওয়া যাবে ওবসিডিয়ান, হেজেল এবং রোজ রঙে, দাম ৬৯৯ ডলার থেকে শুরু।
এদিকে পিক্সেল ৮ প্রো পাচ্ছে ৬.৭ ইঞ্চি এলপিটিও ওলেড ডিসপ্লে, যার রেজল্যুশন ১৩৪৪ বাই ২৯৯২ এবং রিফ্রেশ রেট ১২০ হার্জ। প্রসেসর থাকছে টেনসর জি৩, র্যাম ১২ গিগাবাইট। ক্যামেরা থাকছে তিনটি, মূল ৫০ মেগাপিক্সেলের পাশাপাশি ৪৮ মেগাপিক্সেল আলট্রা ওয়াইড এবং ৪৮ মেগাপিক্সেল ৫এক্স জুম টেলিফটো। সেলফি ক্যামেরা থাকছে ১০.৫ মেগাপিক্সেলের। পেছনের ক্যামেরার সঙ্গে টেম্পারেচার সেন্সরও দেওয়া হয়েছে, যাতে দূর থেকে লেজার থার্মোমিটার প্রযুক্তি ব্যবহার করে কোনো কিছুর তাপমাত্রা মাপা যায়। ব্যাটারি থাকছে ৫০৫০ এমএএইচের। আর চার্জিং গতি তারসহ ৩০ ওয়াট এবং তারবিহীন ২৩ ওয়াট। অবসিডিয়ান ও পোর্সেলিনের পাশাপাশি বে ব্লু রঙেও পাওয়া যাবে পিক্সেল ৮ প্রো, দাম শুরু ৯৯৯ ডলার থেকে।
পারফরম্যান্সে টেনসর জি৩ প্রসেসিং বা গেমিংয়ের চেয়ে নজর বেশি দিয়েছে এআই প্রযুক্তির দিকে, তাই দুনিয়া কাঁপানো সব নতুন ফিচারের বদলে দৈনন্দিন কাজের ক্ষেত্রে ফোনগুলো আরো কার্যকর করার দিকেই নজর দিয়েছে গুগল। আর তাই ফিচারগুলো বলা যায় সবই সফটওয়্যারভিত্তিক।
পিক্সেল ওয়াচ ২
সামনে থেকে দেখে বুঝা কঠিন, কোনটা পিক্সেল ওয়াচ ২ আর কোনটা পিক্সেল ওয়াচ ১। ওয়াচের সামনে থাকছে বৃত্তাকার ১.২ ইঞ্চি অ্যামোলেড ডিসপ্লে, তার ওপর বসানো গরিলা গ্লাস ৫। ওয়াচটির বডি অ্যালুমিনিয়ামের, আর গুগলের নিজস্ব স্ট্র্যাপ সিস্টেম এবারও ব্যবহার করা হয়েছে। সাধারণ ঘড়ির স্ট্র্যাপ এতে ব্যবহার করা যাবে না। এলটিই মডেলটিতে ই-সিম ব্যবহার করা যাবে। আইপি ৬৮ ওয়াটার ও ডাস্ট রেজিস্ট্যান্স থাকছে, পাঁচ মিটার গভীরতায়ও পানি প্রবেশ করবে না। হার্ট রেট, জাইরো, অল্টিমিটার, কম্পাস, ব্লাড অক্সিজেন লেভেল, থার্মোমিটার এবং স্কিন কনডাকট্যান্স সেন্সরের পাশাপাশি ইসিজি সার্টিফিকেশনও আছে। অপারেটিং সিস্টেম থাকছে অ্যানড্রয়েড ওয়্যার ওএস ৪ এবং প্রসেসর কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগন ৫১০০। গুগলের দাবি, প্রথম পিক্সেল ওয়াচ তৈরির সময় ফিটবিটকে কিনে নেওয়ার প্রক্রিয়া শেষ না হওয়ায় ফিটবিটের প্রযুক্তি ও সফটওয়্যার সেটাতে ব্যবহার করা যায়নি। এবার সেটা কার্যকর করা গেছে। ব্যবহারকারীরা ফিটবিটের চমৎকার হেলথ ট্র্যাকিং সফটওয়্যারের সুবিধা তো পাচ্ছেনই, পাশাপাশি পাবেন গুগলের শক্তিশালী অ্যাসিস্ট্যান্ট ফিচার এবং ওয়্যার ওএসের বিশাল অ্যাপ লাইব্রেরি ব্যবহারের সুবিধাও। ডিভাইসটি সিলভার, ব্ল্যাক এবং গোল্ড—তিনটি রঙে পাওয়া যাবে। দাম ৩৯৯ ডলার থেকে শুরু।
গুগলের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
পিক্সেল ফোল্ড এখনো টেনসর জি২ প্রসেসরেই আটকে থাকার বিষয়ে গুগলের মুখপাত্র, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট অব ডিভাইসেস অ্যান্ড সার্ভিস রিক অস্টেরলোহ জানান, তাঁরা ফোল্ডেবল বা ভাঁজযোগ্য ফোন নিয়ে এখনো পরীক্ষামূলক কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। ফোল্ডেবল ফোন ব্যবহারের সফটওয়্যার অভিজ্ঞতা এখনো আঁতুরঘরেই আছে বলে জানালেন তিনি। গুগল ফোল্ডেবল ফোনের সফটওয়্যার নিয়ে আরো কাজ করবে। দ্রুত সেই কাজ শেষ করে তবেই নতুন ফোল্ডেবল ফোন বাজারে আনবে বলে জানালেন রিক অস্টেরলোহ। এদিকে ফ্লিপ-স্টাইল ফোল্ডেবল নিয়ে কতটুকু কাজ চলছে সে বিষয়ে তিনি মুখ খোলেননি।
পিক্সেল ৬ সিরিজের মাধ্যমে গুগল তাদের ব্র্যান্ডকে ‘বুটিক’ ব্র্যান্ড থেকে মূলধারার ব্র্যান্ডে পরিণত করার চেষ্টা করছে। সামনে গুগলের প্রধান চ্যালেঞ্জ আইফোন বা স্যামসাংকে পারফরম্যান্স আর ফিচারে টেক্কা দেওয়া নয়, বরং আরো দেশে বাজারজাত শুরু করা। এর মধ্য দিয়ে নিজেদের অবস্থান আরো শক্ত করতে চায় প্রতিষ্ঠানটি। এর মধ্যেই পিক্সেলের বিক্রি ৬ সিরিজের পর বাড়তে শুরু করেছে, ভবিষ্যতে পিক্সেল ৮ ও ৯ সিরিজ আরো মানুষের পছন্দের তালিকার মধ্যে পড়বে বলেই আশা করছে গুগল। পাশাপাশি পিক্সেল অ্যাকসেসরিজ এবং গুগল হোম ডিভাইস ব্যবহারের পরিমাণও বাড়বে, শক্ত হবে গুগলের ইকোসিস্টেম।
অ্যানড্রয়েড ১৪
পিক্সেল ৮ সিরিজের অনেক ফিচার মূলত অ্যানড্রয়েড ১৪-এর অংশ, যদিও পিক্সেলের বাইরে সেগুলোর দেখা পাওয়া যাবে না। এর মধ্যে আছে নতুন ক্যামেরা ফিচার, বেস্ট শট। একটি ছবির একাধিক শট তুলে, সেখান থেকে একেক শটের একেকটা ভালো অংশ নিয়ে পারফেক্ট ছবি তৈরির ফিচার এই বেস্ট শট। ধরা যাক, দুই বন্ধু মিলে একটি ছবি তুলছে। একটা শটে এক বন্ধুর চেহারা ভালোমতো দেখা গেল, তো অন্য শটে আরেক বন্ধুর। গুগলের এআই দুটি শট থেকে দুজনের চেহারার সেরা শট নিয়ে একত্রিত করে নতুন একটি ছবি তৈরি করবে। জুম এনহ্যান্স ডিজিটাল জুম করা ছবিকে এআই আপস্কেলিং করে ডিটেইল ফিরিয়ে আনবে, আর ক্লাউড প্রসেসিং ব্যবহার করে নাইট সাইট ফিচার ভিডিওতেও পাওয়া যাবে।
ম্যাজিক ইরেজের মাধ্যমে অনাকাঙ্ক্ষিত জিনিসপত্র ছবি থেকে মুছে ফেলা, এআই জেনারেশনের মাধ্যমে ছবিতে ভার্চুয়াল অংশ যোগ করা, বিউটিফাইয়ের মাধ্যমে চেহারা পরিবর্তন করা, এমনকি আকাশ বদলে ফেলার ফিচারগুলো আগে থেকেই অবশ্য পিক্সেলে ছিল। এবার যোগ করা হয়েছে চেহারার অভিব্যক্তি পরিবর্তনের ফিচারও। পিক্সেলে তোলা ছবিগুলো আসলে কতটা বাস্তবসম্মত আর কতটা এআই জেনারেশন দিয়ে তৈরি—সেটা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। গুগলের দাবি, ফটো এডিটিং নতুন কিছু নয় বরং এআইয়ের মাধ্যমে শুধু এক্সপার্টদের দক্ষতাগুলো সাধারণ ব্যবহারকারীদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। এতে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই।
গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট নিয়ে এক বছর ধরে ব্যবহারকারীরা বেশ হতাশ, সেটা নিয়েও কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি। গুগল বার্ড এআই প্রজেক্টের বেশ কিছু অংশ গুগল অ্যাসিস্ট্যান্টে যোগ করা হচ্ছে। এতে করে অ্যাসিস্ট্যান্ট আরো সহজে ভাষা বুঝার পাশাপাশি আরো জটিল বাক্য বুঝে কাজ করতে পারবে। প্রসেসিংয়ের বেশিটাই টেনসর জি৩-এর নিউরাল কোরে হলেও, ক্লাউডের সঙ্গে সংযোগ থাকতেই হবে।
সবচেয়ে বড় যে অ্যানড্রয়েড বিষয়ক ঘোষণা গুগল দিয়েছে, সেটা হচ্ছে সাত বছর পর্যন্ত অ্যানড্রয়েড আপডেট পাবে পিক্সেল ৮ সিরিজ। গুগলের দাবি, কোয়ালকম ও অন্যান্য চিপ নির্মাতারা সাত বছর পর্যন্ত নতুন হার্ডওয়্যার ড্রাইভার আপডেট না দেওয়ায় এত দিন সেটা সম্ভব ছিল না। গুগল এখন নিজস্ব প্রসেসর তৈরি করায় সেটা আজ সম্ভব। অর্থাৎ পিক্সেল ৮ আগামী ২০৩০ সাল পর্যন্ত আপডেট পেতে থাকবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।