বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : বিজ্ঞানীরা বহুকাল ধরেই স্বপ্ন দেখছিলেন এমন এক জ্বালানির উৎস আবিষ্কারের-যা কোনদিন ফুরিয়ে যাবে না, আর এর কোন পরিবেশগত বিরূপ প্রতিক্রিয়াও থাকবে না। অনেক দিন ধরেই তাদের মনে হচ্ছিল যে একটি মাত্র উপায়েই এরকম এক জ্বালানির উৎস তৈরি করা সম্ভব-আর তা হচ্ছে ‘নিউক্লিয়ার ফিউশন’-যাকে বাংলায় বলা যায় ‘পারমাণবিক সংযুক্তি’।
বিজ্ঞানীরা কয়েক দশক ধরেই চেষ্টা করছিলেন কীভাবে এরকম একটা যুৎসই প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা যায়।
সমস্যা হচ্ছে-এ প্রযুক্তি আবিষ্কারের পথে একটা বাধা ছিল।
অবশেষে গত মঙ্গলবার মার্কিন বিজ্ঞানীরা ঘোষণা করেছেন যে এরকম এক প্রযুক্তি আবিষ্কারের পথে যে বড় বাধাটি এতদিন তাদের আটকে রেখেছিল-সেটা অতিক্রম করতে পেরেছেন তারা।
বাধাটা কী? সমস্যাটা ছিল দুটি পরমাণুর সংযুক্তি বা ফিউশন ঘটাতে যে পরিমাণ শক্তি খরচ হচ্ছিল-ফিউশন থেকে পাওয়া যাচ্ছিল তার চেয়ে অনেক কম শক্তি। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এখন এই সমস্যার একটা সমাধান পাওয়া গেছে।
‘ফিশন’ আর ‘ফিউশন’-পরমাণু শক্তি পাবার দুই চাবিকাঠি
অনেকেই জানেন পরমাণু হচ্ছে পদার্থের ক্ষুদ্রতম কণা যা তিনটি আরো ক্ষুদ্র উপাদান দিয়ে গঠিত-ইলেকট্রন, প্রোটন আর নিউট্রন। প্রোটন আর নিউট্রন মিলে তৈরি হয় পরমাণুর কেন্দ্র আর তার চারদিকে ঘুরতে থাকে ইলেকট্রন।
এই পরমাণুর কেন্দ্রটাকে যদি ভাঙা যায়, তাহলে যে শক্তি দিয়ে নিউট্রন আর প্রোটন একসাথে লেগে আছে -তা মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আনে। আইনস্টাইনের সূত্র অনুযায়ী এই শক্তির পরিমাণ বিপুল-অর্থাৎ সামান্য পরিমাণ পদার্থের পরমাণু ভেঙে ফেললেও তা থেকে যে শক্তি বেরিয়ে আসবে তার পরিমাণ হবে প্রচণ্ড।
এই পরমাণু ভাঙার প্রক্রিয়াকে বলে ‘ফিশন’-এবং পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে শুরু করে পারমাণবিক বোমা-সবগুলোর মূল ব্যাপারটা একই। পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে এই ফিশন ঘটানো হয় নিয়ন্ত্রিতভাবে- যাতে সৃষ্ট তাপ দিয়ে পানি গরম করে বাষ্পীয় টারবাইন চালিয়ে বিদ্যুৎ তৈরি হয়। আর বোমার ক্ষেত্রে ফিশন হয় অনিয়ন্ত্রিত-তাই তা হয়ে ওঠে এক ভয়ংকর মারণাস্ত্র।
এবার ফিউশনের কথা। পারমাণবিক ফিউশন জিনিসটা হচ্ছে ফিশনের ঠিক উল্টো-যার অর্থ ‘জোড়া লাগা।’ এখানে পরমাণুকে ভাঙা হয় না, বরং হাইড্রোজেন গ্যাসের দুটি পরমাণুকে অতি উচ্চ তাপ ও চাপ প্রয়োগ করে জোড়া লাগানো হয়-যার ফলে নিউক্লিয়াসের ভেতরের বিপুল পরিমাণ শক্তি বাইরে বেরিয়ে আসে।
সূর্য এবং অন্যান্য তারা থেকে যে প্রচণ্ড শক্তি অবিরাম নির্গত হচ্ছে-তা ঘটছে এই ফিউশন প্রক্রিয়ার ফলেই।
এই শক্তি ব্যবহার করে যদি বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি করা যায়-তাহলে প্রায় কোন পরিবেশগত ক্ষতি না করেই অনিঃশেষ পরিমাণে বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। এ নিয়েই বহু দশক ধরে গবেষণা করে চলেছেন বিজ্ঞানীরা।
কিন্তু এতকাল তারা আটকে যাচ্ছিলেন একটা জায়গায় এসে। সমস্যাটা হলো-ফিউশন ঘটাতে যে পরিমাণ শক্তি খরচ হচ্ছিল-শক্তি উৎপাদন হচ্ছিল তার চেয়ে অনেক কম।
এখন ক্যালিফোর্নিয়ার লরেন্স লিভারমোর ন্যাশনাল ল্যাবরেটরি (এলএল এনএল) এর বিজ্ঞানীরা বলছেন, -তারা এমন এক পদ্ধতি বের করতে পেরেছেন যাতে ফিউশন ঘটাতে যে পরিমাণ শক্তি লাগছে-পাওয়া যাচ্ছে তার চেয়ে বেশি শক্তি।
‘ঐতিহাসিক অর্জন’
জ্বালানি বা বিদ্যুৎশক্তি উৎপাদনের ক্ষেত্রে এই নিউক্লিয়ার ফিউশনকে মনে করা হয় এমন এক বহুকাঙ্খিত লক্ষ্য বলে-যা অনেকেই সম্ভব করতে চেয়েছেন কিন্তু কেউ পারেননি। কারণ হলো–ফিশন প্রযুক্তিতে আজকালকার যেসব পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চলে, তাতে প্রচুর পরিমাণ তেজষ্ক্রিয় বর্জ্য উৎপন্ন হয়-যা নিরাপদভাবে মজুদ করে না রাখলে বিপদের কারণ হতে পারে।
অন্যদিকে নিউক্লিয়ার ফিউশনের ফলে অনেক বেশি শক্তি উৎপাদন সম্ভব এবং এর ফলে যে বর্জ্য তৈরি হয় তার পরিমাণ সামান্য, আর তা খুব বেশি দিন তেজষ্ক্রিয় থাকে না।
এর ফলে কোন গ্রিনহাউজ গ্যাসও নির্গত হয় না, ফলে জলবায়ু পরিবর্তনকেও তা ত্বরান্বিত করে না।
ক্যালিফোর্নিয়ার এলএলএনএল-এর ন্যাশনাল ইগনিশন ফ্যাসিলিটিতে এ পরীক্ষা চালানো হয়েছে।
এলএলএনএল-এর পরিচালক ড. কিম বাডিল বলছেন, “এটি এক ঐতিহাসিক অর্জন। গত ৬০ বছর ধরে হাজার হাজার লোক এই প্রয়াসে অবদান রেখেছেন এবং এ পর্যন্ত আসতে অনেক উদ্ভাবনীক্ষমতার প্রয়োজন হয়েছে।’ সূত্র : বিবিসি বাংলা
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।