রঞ্জু খন্দকার: শীতসকালের ঘড়িতে তখন সকাল ৯টা। দেশের অনেক জায়গায় হালকা হিমেল হাওয়া। অনেক স্থানে কুয়াশা ভেদ করে সূর্য উঁকি দিতে পারেনি তখনো। তবে এর মধ্যেই স্কুলে হাজির খুদে পড়ুয়ারা। আজ যে বই উৎসব! নতুন বছরের প্রথম দিনেই দেওয়া হবে নতুন বই! কী মিষ্টি তার ঘ্রাণ!
ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে আজ সোমবার সারা দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোয় বই উৎসব উদযাপন করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দিতে পেরে খুশি শিক্ষকেরা। নতুন বই হাতে পেয়ে যেন আনন্দের বাঁধ ভেঙেছে শিক্ষার্থীদেরও।
বই হাতে পেয়ে উচ্ছ্বসিত গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার কুমারগাড়ী ১নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী তাজিয়াত মণ্ডল। সে বলে, ‘নতুন বই পেয়ে আমাক ভাল্লাগতেছে। সবার সঙ্গে ছবি তুলেছি। মজা করেছি।’ এ সময় তার সহপাঠীরা উল্লাসে ফেটে পড়ে।
রাজধানী ঢাকায় মিরপুরের ন্যাশনাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দিয়ে ‘বই বিতরণ উৎসব ২০২৪’ এর উদ্বোধন করেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন।
অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বইয়ের পৃষ্ঠা শিশুর মনোজগতে বিস্ময় তৈরি করে। শিশুমনের এ আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ আগ্রহে বই বিতরণের সূচনা। সময়ের পরিক্রমায় এটি এখন বই উৎসবে পরিণত হয়েছে।’
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ওই স্কুলে ‘বই উৎসব’ অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত।
অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন বলেন, ‘বইয়ের পৃষ্ঠা শিশুর মনোজগতে বিস্ময় তৈরি করে। শিশুমনের এ আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ আগ্রহে বই বিতরণের সূচনা। সময়ের পরিক্রমায় এটি এখন বই উৎসবে পরিণত হয়েছে।’
দেশের অন্যান্য জেলার মতো গাইবান্ধার স্কুলগুলোয়ও আজ সকাল থেকেই শিক্ষার্থীদের ঢল নামে। সদর উপজেলাসহ পলাশবাড়ী, সাদুল্যাপুর, সুন্দরগঞ্জ, সাঘাটা, ফুলছড়ি, গোবিন্দগঞ্জের বিভিন্ন বিদ্যালয়ে বই দেওয়া হয়।
পলাশবাড়ীর কুমারগাড়ী ১নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিনামূল্যের বইয়ের সঙ্গে স্কুল ডায়েরিও বিতরণ করা হয়। এ সময় প্রধান শিক্ষক আলমগীর খন্দকার, সহকারী শিক্ষক শাবানা পারভীন ও আব্দুর রাজ্জাকসহ অভিভাবকেরা উপস্থিত ছিলেন।
এ বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির তাওরাত খন্দকার বলে, নতুন বই সুন্দর। সে বাড়িতে গিয়ে মলাট লাগাবে। বই পড়বে।
একই ক্যাম্পাসে অবস্থিত হালিমনগর উচ্চবিদ্যালয়েও বই বিতরণ করা হয়। সেখানে অন্যদের মধ্যে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি পয়গামুল কোরান ও প্রধান শিক্ষক মাহফুজার রহমান উপস্থিত ছিলেন।
পলাশবাড়ীরই সরবঙ্গভাদুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বইয়ের সঙ্গে একটি করে স্কুলব্যাগও বিনা মূল্যে দেওয়া হয়। নাম প্রকাশ না করে একদল উদ্যোক্তা এসব ব্যাগ বিতরণ করেন। তাঁদের এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান প্রধান শিক্ষক সৈয়দ শরিফুল ইসলাম সবুজ। তিনি উদ্যোক্তাদের মানবতার ফেরিওয়ালা আখ্যায়িত করে ফেসবুক পোস্টে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
সবুজ ফেসবুকে লিখেছেন, সরকারের যুগান্তকারী পদক্ষেপ ১লা জানুয়ারি দেশব্যাপী এক যোগে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ উৎসব পালন। সেই উৎসবের রঙ রাঙিয়ে দিতে এবার পাঠ্যবইয়ের সাথে উপহার হিসেবে সকল শিক্ষার্থীদের দেওয়া হলো সুদৃশ্য স্কুল ব্যাগ!
সরবঙ্গ ভাদুরিয়া বিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের সহকারী ইন্সট্রাক্টর সোহেল মিয়া, বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আহসানুল হক, সহসভাপতি জামাল সরকার ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আশরাফুল ইসলাম মন্ডল।
২০২৪ শিক্ষাবর্ষে সারা দেশের ২ কোটি ১২ লাখ ৫২ হাজার ৬ জন শিক্ষার্থীর হাতে ৯ কোটি ৩৮ লাখ ৩ হাজার ৬০৬টি বই তুলে দিচ্ছে সরকার। রোববার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বই উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
১৩ বছর আগে ২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বছরের প্রথম দিন থেকে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেওয়ার প্রচলন শুরু করেন, যা নাম পেয়েছে ‘বই উৎসব’।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।