জুমবাংলা ডেস্ক : নড়াইল ও যশোর সীমান্তে অভিযান চালিয়ে আন্তর্জাতিক মানবপাচার চক্রের বাংলাদেশের সমন্বয়ক নদীসহ সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
সোমবার (২১ জন) তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
এ নিয়ে মানবপাচারের অভিযোগে দেশে ২০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় মানবপাচার আইনে মামলা করা হয়েছে। আর ভারতে ধরা পড়েছে ১১ বাংলাদেশিসহ ১২ জন।
এদিকে ভারতে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে পালিয়ে আসা আরও তিন তরুণীর খোঁজ পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে দুজন মানব পাচার ও বিদেশে যৌনকর্মে বাধ্য করার অভিযোগে টিকটক হৃদয়সহ ৩৬ জনের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা করেছেন। শনিবার (১৯ জুন) রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় তারা এ মামলা করেন।
হাতিরঝিল থানার পুলিশ জানায়, টিকটক হৃদয়ের সঙ্গে রাজধানীর মগবাজারের নয়াটোলার বাসিন্দা তরুণীর ফেসবুকে পরিচয় হয়েছিল। পরিবারে আর্থিক অসচ্ছলতা থাকায় টিকটক হৃদয় তাকে টিকটক তারকা বানানোর কথা বলে। এতে তিনি রাজি হননি। পরে, টিকটক হৃদয় ভারতে সুপার মার্কেট ও বিউটি পার্লারে ভালো বেতনে চাকরির কথা বলে।
এতে ওই তরুণী ভারতের মুম্বাইয়ে থাকা তার ফুফুর কথা জানান এবং বলেন, তাকে ফুফুর বাসায় পৌঁছে দিলে তিনি যাবেন। পরে টিকটক হৃদয় তাকে গত বছরের ১৮ মার্চ মুম্বাইয়ে নেওয়ার কথা বলে তাকেসহ তার বান্ধবীকে সাতক্ষীরা সীমান্তে নিয়ে যান। তাদের সীমান্তের ওপারে নিয়ে বৈধ কাগজপত্র বানিয়ে মুম্বাইয়ে নেওয়ার কথা বলেন। টিকটক হৃদয়ের কয়েক সহযোগীর সঙ্গে তিন ঘণ্টা হাঁটার পর কাঁটাতারের বেড়ার একটি বড় ছিদ্র দিয়ে ভারতে যাওয়ার সময় সীমান্তরক্ষীদের হাতে ধরা পড়েন তারা।
তখন সেখানকার ইউপি সদস্যের আত্মীয় পরিচয়ে তারা ছাড়া পান। দুই দিন সীমান্ত এলাকার একটি বাড়িতে থাকার পর মেহেদী হাসান নামের একজন ভারতের সীমান্তে আরেক দালালের হাতে তুলে দেন। দালাল বকুল ওরফে ছোট খোকন তাদের দুজনকে দুই দিন রেখে ভারতের পরিচয় আধার কার্ড (পরিচয়পত্র) বানিয়ে দেন। পরে সেখান থেকে দালাল মণ্ডল তাদের বিমানে বেঙ্গালুরুতে নিয়ে যান। সেখানে বেঙ্গালুরুর আনন্দপুর সার্কেলের একটি ভবনের তৃতীয় তলায় নিয়ে যান। সেখানে টিকটক বাবু ও তাদের কয়েকজন সহযোগীর সঙ্গে তাদের দেখা হয়।
ওই বাসায় পাচারের শিকার বাংলাদেশি আরও কয়েকজন তরুণী ছিল। তাদের বেঙ্গালুরু, চেন্নাই, হায়দরাবাদসহ বিভিন্ন এলাকার আবাসিক হোটেল, ম্যাসাজ পারলারে পাঠিয়ে যৌনকর্মীর কাজ করতে বাধ্য করা হতো। বিষয়টি তারা পুলিশকে জানাতে চাইলে তাদের মারধর করা হয়।
একপর্যায়ে টিকটক হৃদয় ও তার সহযোগীরা তাদের জোর করে নেশাজাতীয় কিছু খাইয়ে যৌন নির্যাতন করে তার ভিডিও করেন। তাদের ভয় দেখিয়ে টাকা চাওয়া হয়, অন্যথায় এসব ভিডিও তাদের পরিবারের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। এ সময় তারা ফোনে পরিবারের কাছে দুই লাখ টাকা চাইলে বাংলাদেশে অবস্থানরত তাদের পরিবার দিতে রাজি হয়। যৌন নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল হওয়া বাংলাদেশি তরুণীর সহায়তায় গত ৫ মে কলকাতার সীমান্ত হয়ে দেশে পালিয়ে আসেন তিনি।
অপর তরুণী যাত্রাবাড়ীর কাজলার বাসিন্দা। গত বছরের ২০ নভেম্বর নুরজাহান ওরফে নদী ওরফে জয়া আকতার জান্নাত ওরফে ইতির মাধ্যমে ভারতের বেঙ্গালুরুতে পাচার হন।
তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, কলকাতা থেকে তাকে ট্রেনে বেঙ্গালুরুতে নেওয়া হয়। সেখানে থেকে দালাল তাসলিমা ওরফে বিউটি বেঙ্গালুরুর আনন্দপুরের বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার আপন বড় বোনকে দেখতে পান ওই বাসায়। একদিন পর তাদের দুজনকে যৌনকর্মের জন্য পৃথক দুই বাসায় পাঠানো হয়। সেখানে দুই বোনই যৌন নির্যাতনের শিকার হন।
গত ২ মে একটি ম্যাসাজ সেন্টারের জানালার কাচ ভেঙে পালিয়ে সেখান থেকে ট্রেনে কলকাতায় আসেন। সাতক্ষীরার সীমান্ত পেরিয়ে তিনি ৬ মে দেশে ফিরে আসেন।
পুলিশের তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. হাফিজ আল ফারুক গণমাধ্যমকে বলেন, ভারতে নারী পাচার চক্রের সমন্বয়ক হলেন নুরজাহান। তাকে গ্রেপ্তার করা গেলে পুরো চক্র সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যাবে। যেসব পাচার হওয়া নারী ফিরে আসছেন তাদের সবাইকে আইনি সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।