নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর: রাজধানী ঢাকার ফার্মগেইট এলাকার ইসলামীয় চক্ষু হাসপতালে নার্স হিসেবে কাজ করেন গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার তুমলিয়া ইউনিয়নের উত্তরসোম গ্রামের কনা দাস। স্বামী নিয়ে থাকেন ফার্মগেইট এলাকার মনিপুরি পাড়া মহল্লায়। তাদের এক ছেলে এক মেয়ে থাকেন শ্বাশুরীর সাথে কালীগঞ্জে। কর্মস্থলে সপ্তাহে একদিন ছুটি মেলে কনা দাসের। তাই সন্তানের টানে ছুটে আসেন বাড়ী। কিন্তু নিজের সন্তানদের জন্য ছুটে আসলেও অন্যের সন্তানের জন্য নষ্ট করলেন সময়।
কনা দাসের ছুটি বুধবার তাই মঙ্গলবার রাতে তিনি তেজগাঁও রেলওয়ে স্টেশন থেকে নিজ বাড়ীর গন্তব্যের জন্য আড়িখোলা রেলওয়ে স্টেশনের উদ্দেশ্যে তিতাস কমিউটার ট্রেনে উঠেন। শেষ হয় যাত্রা। তিনি তার গন্তব্য আড়িখোলা রেলওয়ে স্টেশনে নেমে পড়েন। বাড়ি উদ্দেশ্যে যাওয়ার জন্য রিকসা ভাড়া নিয়ে তাতে চেপে বসেন। কিন্তু এ সময় হঠাৎ ট্রেন থেকে নামা ৭/৮ বছরের এক শিশু তার পিছু নেয় এবং সে কান্না জড়িত কন্ঠে বায়না ধরে তাকে বাড়ী পৌঁছে দিতে। শিশুটি একেক সময় একেক নাম ঠিকানা বলে। পরে কনা দাস তাকে থানায় নিয়ে যায়। কিন্তু শিশু সাগর থানা দেখে ভয় পেয়ে কান্নাকাটি আরো বাড়িয়ে দেয়। থানার দায়িত্বপ্রাপ্তরা তাকে জুস, চকলেট ও চিপস দিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করে। কিন্তু কিছুতেই তার কান্না থামছে না। এদিকে থানার অফিসার ইনচার্জ একেএম মিজানুল হকের হস্থক্ষেপে বিভিন্ন থানায় বার্তা পাঠানো হয়। ছেলেটির ছবি দিয়ে পোষ্ট দেওয়া হয় কালীগঞ্জ থানার অফিসিয়াল ফেজবুক আইডিতে। রাত যত বাড়ছে শিশু সাগরের কান্না তত ভারী হতে শুরু করে। শেষে ওসির হস্তক্ষেপে তাকে দিয়ে দেওয়া হলো ওই নার্স কনা দাসের জিম্মায়। তিনি তাকে বাড়ী নিয়ে চলে যান।
এরই মধ্যে পুলিশের সহায়তায় মিলে যায় শিশু সাগরের ঘরের ঠিকানা। বুধবার দুপুরে কালীগঞ্জ থানায় ছুটে আসে সাগরের মা মাসুমা ও বাবা সুমন মিয়া। মায়ের বাড়ী ময়মনসিংহ জেলার ঈশ্বরপুর উপজেলায় আর বাবার বাড়ী রংপুরের কতোয়ালী থানার জরিন্দা এলাকায়। তারা গাজীপুরের টঙ্গীতে কাজ করেন।
সাগরের মা জানান, তিনি টঙ্গীতে একটি বাড়ীতে ঝিয়ের কাজ করেন। আর তার বাবা অন্য একটি বাড়ীতে নৈশ প্রহরী হিসেবে কাজ করেন। থাকেন টঙ্গী স্টেশন এলাকায়। তাদের কাজে ব্যস্ত থাকার কোন ফাঁকে ছেলে নিখোঁজ হন তারা বুঝতে পারেননি। কিন্তু বিভিন্ন জায়গায় খুজাঁখুজি করে তাকে পাচ্ছিলেন না।
বাবা সুমন মিয়া বলেন, আসলে পেটের দায়ে স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই কাজে ব্যস্ত থাকি। তাই শিশু সন্তানদের দিকে খেয়াল রাখতে পারিনা। কিন্তু বাবা-মা হিসেবে এটা ঠিক না। শত ব্যস্ততার মাঝেও সন্তানদের খেয়াল রাখা উচিত। তবে ওই নার্স ও পুলিশের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন তিনি। কারণ তাদের জন্যই তাদের সন্তান সাগরকে খুঁজে পেয়েছেন।
কনা দাস বলেন, আসলে আমিও একজন মা। তার বয়সের একটি ছেলেও আছে আমার। তাই মা হিসেবে একজন সন্তানকে রাস্তায় ফেলে যেতে পারি না। সে কারণে আমার কাছে মনে হয়েছে থানায় নিয়ে গেলে শিশুটি তার ঘরের খুঁজ পাবে এবং তাই হয়েছে। তবে থানার ওসি সাহেবের আন্তরিকতার কমতি ছিলনা। ওনার কারণেই দ্রæত সময়ের মধ্যে শিশু সাগর তার মা-বাবার দেখা পেল।
কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ একেএম মিজানুল হক বলেন, আজকাল এসব জামেলা অনেকেই এগিয়ে যান। কিন্তু কনা তাদের চেয়ে একেবারেই আলাদা। নিজ দায়িত্বে থানায় নিয়ে এসছেন এবং তার কান্নাকাটির জন্য নিজ বাড়ীতে তার সন্তানদের সাথে আদর ভালবাসায় একটি রাত রেখেছেন। এমন দৃশ্য আজকাল খুব বেশি দেখা যায় না। আর আমরা যেটা করেছি সেটা আসলে আমাদের দায়িত্ব ছিল। বুধবার দুপুরে সাগরের বাবা-মার কাছে তাকে তুলে দেওয়া হয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।