নক্ষত্রের আলো বা তাপ নেই, তো তার চারপাশে ঘূর্ণনরত গ্রহগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় শক্তির জোগানও নেই। গ্রহগুলোতে স্বাভাবিকভাবেই প্রাণের সূচনা কখনো হতো না। আবার শক্তিশালী মহাকর্ষের মানে হলো, ছায়াপথগুলো অনেক আগেই গঠিত হতো এবং তাদের আকারও হতো বেশ ছোট। নক্ষত্রগুলো খুবই ঘন হয়ে উঠত। তাতে বিভিন্ন নক্ষত্র আর গ্রহগুলোর মধ্যে বিপর্যয়কর সংঘর্ষ বেধে যেত।
এপসাইলন (ε) বলতে নিউক্লিয়ার দক্ষতাকে বোঝানো হয়। এর মান ০.০০৭। এই সংখ্যা দিয়ে হাইড্রোজেনের আপেক্ষিক পরিমাণ বোঝানো হয়। মহাবিস্ফোরণের পর ফিউশন প্রক্রিয়ায় হাইড্রোজেন পরিণত হয় হিলিয়ামে। নক্ষত্রের কেন্দ্রে একই প্রক্রিয়ায় হাইড্রোজেনগুলো পরস্পর জোড়া লেগে তৈরি হয় হিলিয়াম পরমাণু। এভাবে নক্ষত্রের কেন্দ্রে কিছু ভারী মৌল তৈরি হয়। একটা হিলিয়াম নিউক্লিয়াসে থাকে দুটি প্রোটন ও দুটি নিউট্রন।
আলাদাভাবে দুটি প্রোটন ও দুটি নিউট্রনের যে ভর, হিলিয়াম নিউক্লিয়াসের ভর তার চেয়ে সামান্য একটু কম। সঠিকভাবে বললে, তা ০.০০৭ ভাগ কম। ভরের এই অংশটুকুই আসলে আইনস্টাইনের বিখ্যাত সমীকরণ E=mc2 অনুযায়ী শক্তিতে রূপান্তরিত হয়।
এপসাইলনের মান ০.০০৭ না হয়ে ০.০০৬ হলে ফল হতো ভয়াবহ। এতে নিউক্লিয়ার বল দুর্বল হয়ে যেত। প্রোটন ও নিউটন একত্রে আবদ্ধ হতে পারত না। ডিউটেরিয়াম (একটি প্রোটন, একটি নিউট্রনসহ) গঠিত হতে পারত না। ফলে নক্ষত্রের ভেতর কখনো গঠিত হতে পারত না ভারী মৌলগুলো। আমাদের দেহের জন্য প্রয়োজনীয় পরমাণুও গঠিত হতো না। গোটা মহাবিশ্ব দ্রবীভূত হয়ে থাকত হাইড্রোজেন মৌলে। এমনকি নিউক্লিয়ার বল সামান্য পরিমাণ কমে গেলেও মৌলের পর্যায় সারণিতে অস্থিতিশীলতা দেখা দিত। প্রাণ সৃষ্টির জন্য মহাবিশ্বে অতি অল্পসংখ্যক স্থিতিশীল মৌল দেখা যেত।
এপসাইলন যদি ০.০০৮ হতো, তাহলে? ফিউশন এত দ্রুতগতিতে ঘটত যে মহাবিস্ফোরণের পর আর কোনো হাইড্রোজেন টিকে থাকতে পারত না। সে ক্ষেত্রে গ্রহগুলোকে শক্তির জোগান দেওয়ার জন্য আজ আর কোনো নক্ষত্র থাকত না কিংবা দুটি প্রোটন একত্রে আবদ্ধ হয়েও নক্ষত্রে ফিউশন বিক্রিয়া অসম্ভব করে তুলত। স্থিতিশীল মহাবিশ্বের অন্যতম জনক ফ্রেড হয়েল একবার বলেছিলেন, নিউক্লিয়ার বলে মাত্র ৪ শতাংশ বিচ্যুতিও নক্ষত্রগুলোতে কার্বন গঠন অসম্ভব করে তুলত। তাতে উচ্চতর মৌলও তৈরি হতে পারত না এবং প্রাণের উদ্ভবও অসম্ভব হতো।
হয়েল দেখতে পেয়েছিলেন, নিউক্লিয়ার বল যদি সামান্য পরিমাণ বদলে দেওয়া যায়, তাহলে বেরিলিয়াম এতই অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে যে সেটি কার্বন পরমাণু তৈরির করার জন্য কখনো আর সেতু হিসেবে কাজ করতে পারবে না। একই কথার প্রতিধ্বনি করেছেন রিজও।
ওমেগা (Ω) দিয়ে মহাবিশ্বের আপেক্ষিক ঘনত্বকে বোঝানো হয়। ওমেগার মান খুবই ছোট হলে মহাবিশ্ব প্রসারিত ও শীতল হতো অতি দ্রুত হারে। কিন্তু ওমেগার মান যদি বেশি বড় হতো, তাহলে মহাবিশ্বে প্রাণের উদ্ভব হওয়ার অনেক আগেই তা চুপসে যেত।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।