জুমবাংলা ডেস্ক : বছর চারেক আগে চিকিৎসার জন্য ভুয়া কাগজপত্রে ভারতে গিয়ে অর্থের বিনিময়ে নিজের একটি কিডনি বেঁচে দেন আনিছুর রহমান। সেখানে কিডনি প্রতিস্থাপনের চাহিদা দেখে লোভে পড়ে দেশে ফিরে নিজেই শুরু করেন কিডনি বেচাকেনার অবৈধ ব্যবসা। ভারতের একটি চক্রের সহায়তায় গড়ে তোলেন নিজের দল।
চক্রটি প্রথমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়ে কিডনি প্রতিস্থাপন করতে চাওয়া ধনী রোগীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এরপর তাদের সাথে চুক্তি অনুযায়ী শুরু হয় দ্বিতীয় ধাপের কাজ।
দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে অসহায় দরিদ্রদের টার্গেট করে টাকার লোভ দেখিয়ে করা হয় চুক্তি। পরে কিডনি প্রতিস্থাপন করতে ভুয়া কাগজ বানিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় ভারত,থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে।
দেশে সক্রিয় অবৈধভাবে কিডনি কেনাবেচার চক্রের অন্যতম মূলহোতা মো. আনিছুর রহমানসহ (২৯) জড়িত পাঁচজনকে গ্রেপ্তারের পর এসব কথা জানিয়েছে র্যাব-১।
গ্রেপ্তার বাকিরা হলেন, মো. আরিফুল ইসলাম ওরফে রাজিব (৩৩), সালাউদ্দিন তুহিন (২৭), এনামুল হোসেন পারভেজ (ডোনার) এবং সাইফুল ইসলাম।
সোমবার ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে (এসএসএইচ) পিরোজপুরের এক ব্যক্তির কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়। তার ছোট ভাই সুসেন রায় এই কিডনি দিয়েছিলেন বলে জানিয়েছিল বিএসএমএমইউ।
তবে বুধবার সংবাদ মাধ্যমে খবর আসে, কিডনি দানকারী ব্যক্তি সুসেন রায় নন, সুমিত হাওলাদার নামে অন্য ব্যক্তি।
কিডনি প্রতিস্থাপনে অনিয়মের অভিযোগ ওঠার পর তা তদন্তে একটি কমিটি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আলোচনার মধ্যেই র্যাব কিডনি ব্যবসার এই চক্রকে গ্রেপ্তারের খবর দিলো।
সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ও গোয়েন্দা তৎপরতার ধারাবাহিকতায় রাজধানীর ভাটারা, বাড্ডা, বনানী ও মহাখালী এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে অঙ্গীকারনামা এবং ভুক্তভোগীর সঙ্গে করা চুক্তির কপি উদ্ধার করা হয়েছে।
র্যাব বলছে, গরীব মানুষের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে চার থেকে পাঁচ লাখ টাকায় কেনা হয় একটি কিডনি। কয়েক হাত ঘুরে ৪০ থেকে ৫০ লাখ টাকায় বিদেশে পাচার হয়। র্যাব বলছে, টাকার লোভে কিডনি হারিয়ে ভুক্তভোগীরা ধীরে ধীরে মৃত্যুর মুখে পড়ছে। দেশে প্রায় ২ কোটিরও বেশী মানুষ কিডনি রোগে ভুগছে। জীবন বাঁচাতে অনেক সময় রোগীদের কিডনি প্রতিস্থাপনই হয়ে ওঠে বাঁচার একমাত্র পথ। এই সুযোগে দেশের বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে কিডনি ক্রয়-বিক্রয়ের অবৈধ চক্র।
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সাংবাদিক সম্মেলনে তথ্য জানান র্যাব-১ অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল মোসতাক আহমেদ।
মোসতাক আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘দেশে-বিদেশে যারা কিডনি প্রতস্থাপন প্রত্যাশী তাদের সাথে ৫০-৬০ লাখ থেকে কোটি টাকা পর্যন্ত চুক্তি করে। আনিছুর রহমান ২০১৯ সালে নিজের কিডনি বিক্রি করে প্রতারিত হয়েছিলো। পরে প্রতিবেশি দেশে গিয়ে সে দেখে, সেখানে কিডনি প্রতিস্থাপন প্রত্যাশী অনেক বেশি। জিজ্ঞাসাবাদে সে স্বীকার করেছে, গত ৪-৫ বছরে সে ৫০টিরও বেশি মত কিডনি ক্রয়-বিক্রয় করেছে।’
নিকটাত্মীয় ছাড়া কিডনি বেচাকেনা এখনও দেশের আইনে অবৈধ। তাই কিডনি প্রতিস্থাপনে দাললদের খপ্পর থেকে দূরে থাকার আহবান র্যাবের।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।