জুমবাংলা ডেস্ক : হাইড্রোলিক ব্রেক-সংবলিত নিরাপদ বিকল্প অটোরিকশা তৈরি করেছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) যন্ত্রকৌশল বিভাগ।
তারা বলছেন, এর তিনটি চাকায় ‘হাইড্রোলিক ডিস্ক ব্রেক’ ও বিকল্প ‘পার্কিং ব্রেক’ সংযোজন করা হয়েছে। ফলে রিকশা নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে। এদিকে রাজধানীর মিরপুরে এক অনুষ্ঠানে অটো রিকশাটিকে লাইসেন্স প্রদানসহ চালকদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) প্রশাসক মো. এজাজ।
তিনি বলেন, ‘মূল সড়কে কোনো অটোরিকশা চলবে না। আমরা কিছু নির্ধারিত এলাকায় বুয়েটের তৈরি এই অটোরিকশার অনুমোদন দেব। এটি অন্য রিকশা থেকে নিরাপদ হবে।’
অটোরিকশার নকশা করেছে বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মো. এহসানের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের গবেষক দল। অধ্যাপক এহসান বলেন, বর্তমানে সড়কে যে রিকশা চলছে এটি নিয়ে আমরা অনেক আগে থেকে স্টাডি করেছি। দেখলাম এই রিকশার কাঠামো পরিবর্তন সম্ভব নয়। ২০২২ সাল থেকে বাড়তি নিরাপত্তাযুক্ত রিকশা নিয়ে কাজ করছি। পরে সেফটি ফিচার-সংবলিত এই অটোরিকশার মডেল তৈরি করেছি। এটি ছাড়াও আমাদের আরও দুইটি মডেল রয়েছে। মোট তিনটি মডেল আমরা দাঁড় করিয়েছি। রিকশার বিকল্প যেটি, সেটি সিটি করপোরেশন থেকে অনুমোদনের বিষয়ে কথা চলছে। এটি অনুমোদন পেলে সড়কে শৃঙ্খলা আসবে।
বুয়েটের এ দলে আরও ছিলেন বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক এ সালাম আকন্দ ও মো. আমান উদ্দীন, তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের (ইইই) বিভাগের অধ্যাপক মো. জিয়াউর রহমান খান এবং গবেষণা প্রকৌশলী হিসেবে ছিলেন মো. আসাদুজ্জামান ও আবদুল আজিজ ভুঁইয়া।
এ দলের অন্যতম সদস্য অধ্যাপক এ সালাম আকন্দ বলেন, কোনা কিছু চলার আগে অনেক টেস্ট করা হয়। সে অনুযায়ী এটিও টেস্ট চলছে। তারপর সড়কে চলবে। এই রিকশাটি আগে যে প্রচলিত রিকশা ছিল সেটি থেকে অনেক বেশি নিরাপদ। যার কারণে আমরা এটি সুপারিশ করেছি।
বুয়েটের দলটির নকশা করা রিকশা মূলত রাস্তায় চলাচলকারী ইজিবাইকের মতো। দলের সদস্যরা জানিয়েছেন, রিকশায় ১৬টি বৈশিষ্ট্য যোগ করেছেন। এ ক্ষেত্রে তারা দেশে প্রচলিত ১২ ধরনের ব্যাটারিচালিত রিকশার নিরাপত্তা ত্রুটিগুলো খুঁজে বের করেছেন। তারা জানান, রিকশার দৈর্ঘ্য হবে ৩ দশমিক ২ মিটার, প্রস্থ দেড় মিটার এবং উচ্চতা ২ দশমিক ১ মিটার। সব মিলিয়ে আকার হবে এখনকার রিকশার মতোই। রিকশাটি ৩২৫ থেকে ৪২৫ কেজি পর্যন্ত ওজন সহজেই বহন করতে পারবে। ফলে দুজন যাত্রী নিয়ে চালক সহজেই রিকশাটি চালাতে পারবেন।
সাধারণ রিকশায় ‘লুকিং গ্লাস’ থাকে না। ফলে রিকশাচালককে পেছনে তাকিয়ে দেখতে হয় কোনো যান আসছে কি না। আবার সাধারণ রিকশায় ‘ইন্ডিকেটর’ নেই। ফলে রিকশা ডানে অথবা বাঁয়ে মোড় নিলে পেছনের যানবাহনের চালকেরা তা বুঝতে পারেন না, যা দুর্ঘটনার ঝুঁকি তৈরি করে। নতুন রিকশায় ‘লুকিং গ্লাস’ ও ‘ইন্ডিকেটর’ থাকবে।
নতুন রিকশায় ছাউনি ও কাচের ‘উইন্ডশিল্ড’ থাকবে। ফলে বৃষ্টিতে চালক ও যাত্রীদের ভিজতে হবে না। নতুন রিকশায় কাঠামোর সঙ্গে স্থায়ীভাবে যুক্ত করা হয়েছে হেডলাইট (মূল বাতি), যাতে রাস্তার দৃষ্টিসীমা ঠিক থাকে। নতুন হেডলাইটে ‘হাই বিম’, ‘লো বিম’ ও ‘ডিআরএল’ (ডে টাইম রানিং ল্যাম্প) যুক্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ এই বাতি চালককে সড়কে চলাচলের সময় দেখতে এবং রিকশাটিকে অন্য যানবাহনের চালকের দৃষ্টিগোচর করতে সহায়তা করবে। সবমিলিয়ে এই রিকশার দাম হতে পারে আনুমানিক দেড় লাখ টাকা। ব্যাটারি একবার চার্জ দিলে প্রায় ১২০ কিলোমিটার দূরত্বে যেতে পারবে নতুন রিকশা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।