‘দ্য এন্ড অব অ্যাবসেন্স: রিক্লেইমিং হোয়াট উই হ্যাভ লস্ট ইন আ ওয়ার্ল্ড অব কন্সট্যান্ট কানেকশন’ বইয়ের এ লেখকের মতে, আমাদের নিয়ম করে ভার্চ্যুয়াল জগতের হট্টগোল থেকে দূরে থাকা দরকার। তা না হলে কোনো বিষয়ে পরিপক্ব সিদ্ধান্ত নেওয়া অনেক সময় কঠিন হয়। কারণ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের আপাতত বহুস্বর বা বহুত্ববাদ একটি বিভ্রান্তিকর বিষয়।
এসব বহুত্ববাদ সময় সময় পরিণত দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে আপনাকে পরিচয় করিয়ে দেবে এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই। তাই আগামী দিনের প্রভাবশালী চিন্তাবিদদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের দৈনন্দিন বিষাক্ত সব কাদা ছোড়াছুড়ি থেকে দূরে থাকতে হবে। তাঁদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে থাকা ও না থাকা, ভিড়ে থাকা ও নির্জনে থাকার শিল্প রপ্ত করতে পারতে হবে।
একটি বিষয় খেয়াল রাখা দরকার, লোনলিনেস বা অবিরাম একাকিত্ব ও অ্যালোন বা সাময়িকভাবে একাকী থাকা এক জিনিস নয়। এটি শুধু শারীরিকভাবে সুস্থ থাকা বা অসুস্থ থাকারও বিষয় নয়। বরং তা সার্বিকভাবে দৃষ্টিভঙ্গিগত ও জীবনযাপনের বিষয়। জীবন-জগৎকে কে কীভাবে দেখে এটি সে বিষয়ের মামলা। ভীষণভাবে সমাজবিচ্ছিন্নতায় ভোগা একজন মানুষও নীরবে-নিভৃতে থেকে প্রচলিত চিন্তাকে নাড়া দেওয়ার মতো কোনো কাজ করতে পারেন। তাই চরমভাবে সমাজবিচ্ছিন্ন মানুষকে পাগল ভাবাও যেমন অন্যায়, ঠিক তেমনি সমাজবিচ্ছিন্নতাকে সৃষ্টিশীলতার পূর্ব শর্ত ভাবাও অপরিণত চিন্তা।
তাই বলে পরিণত চিন্তার মানুষের মধ্যে থাকা শিশুসুলভ আত্মাটিকে কবর দেওয়ার কথাও আমি বলছি না। বরং আমি জার্মান মহাকবি গ্যোটে প্রত্যাশিত সেই মানুষের কথা বলছি, যাকে সমাজ গড়ে-পিঠে মানুষ করবে, তবে সে অনুপ্রেরণা সংগ্রহ করবে নির্জনতা থেকে।
অথবা রবীন্দ্রনাথের সেই সংবেদনশীল মানুষের কথাই আমি বলছি, যে একটি ধানের শিষের ওপর একটি শিশিরবিন্দু দেখে বিস্মিত হবে। বাস্তব বা ভার্চ্যুয়াল জগতেই শুধু বহু ক্রোশ দূরে ঘুরে বেড়াবে না। শুধু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) হাতে নিজের পছন্দ-অপছন্দের ভার ছেড়ে দেবে না।
এমন মানুষের কথাই আমি বলতে চাইছি, যাঁরা বন্ধের দিনগুলোতে বা অবসরে চেষ্টা করবে ইন্টারনেট থেকে দূরে থাকতে। অনেক দিন ধরে পড়বে পড়বে বলেও পড়া হয়নি এমন বইটি নিয়ে কাটিয়ে দেবে সারাটি দিন। অথবা শহরের রাস্তায় একাকী হাঁটতে বের হবেন, যা হবে রোজ অফিসে যাওয়া-আসার চেয়ে ভিন্ন।
মনে রাখতে হবে, নিজের সঙ্গে একাকী হওয়ার, নিজের চারপাশ ও নিজের চিন্তাভাবনাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার ধরা-বাঁধা কোনো নিয়ম নেই। এসব কিছু সৃষ্টিশীলভাবে অল্প অল্প করে রপ্ত করতে হয়। কোনো একটি বিষয়ে গভীর জানো-শোনা থাকার পাশাপাশি আরও কিছু বিষয়ে মোটামুটি জানা থাকলে চিন্তার গভীরতা তৈরি হয়। এসব কিছু নির্জনে সময় কাটাতে, নিজের সঙ্গে একাকী হতে মানুষকে শক্তি জোগায় বলে আমার ধারণা।
এ রকম একটি জীবনধারা রপ্ত হয়ে গেলে, জীবনের অর্থ খুঁজে পাওয়া না গেলেও সমস্যা জর্জরিত নশ্বর জীবন পার করা তুলনামূলক সহজ হয়। তাই চারপাশ ও নিজেকে গভীরভাবে জানতে নির্জনতাকে আলিঙ্গন করুন। জনসমুদ্রের বিস্তীর্ণ আকাশে একাকী গাঙচিল হয়ে ডানা মেলতে শিখুন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।