
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে উপদেষ্টা পরিষদের দুই সদস্য এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম আগামী সপ্তাহেই পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন। নির্বাচনে অংশ নিতে তফসিল ঘোষণার আগেই তারা দায়িত্ব ছাড়বেন।
বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, পদত্যাগের সিদ্ধান্তের কথা তারা ইতোমধ্যে মৌখিকভাবে প্রধান উপদেষ্টাকে জানিয়েছেন। তাদের পদত্যাগের পর উপদেষ্টা পরিষদে নতুন মুখ যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।
গণ–অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া সমন্বয়কদের মধ্যে এই দুই উপদেষ্টা ছিলেন উল্লেখযোগ্য। সূত্রমতে, পদের দায়িত্ব ছাড়ার পর তারা নির্বাচনী মাঠে নামবেন এবং বিএনপির ছেড়ে দেওয়া আসনগুলোতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন।
এদিকে নির্বাচন প্রস্তুতির গুরুত্বপূর্ণ সময়সীমাও প্রায় নির্ধারিত। বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়—
১০ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে,
তফসিলের আগে ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে চূড়ান্ত হবে ভোটার তালিকা,
আর ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ ৮ ফেব্রুয়ারি।
উপদেষ্টা পরিষদের সম্ভাব্য পদত্যাগ ও নতুন প্রার্থীদের মাঠে নামা আসন্ন নির্বাচনে নতুন রাজনৈতিক সমীকরণ তৈরির ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে পর্যবেক্ষকদের মত।
অন্যদিকে নির্বাচনি নানামুখী জোটের হিসাব-নিকাশও এগিয়ে চলছে। জোটবদ্ধ নির্বাচনের জন্য জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পক্ষ থেকে বুধবার রাতে নাহিদ ইসলামের বাসায় বৈঠক বসে। দীর্ঘ এ বৈঠকে জোটের জন্য কয়েকটি বিকল্প অপশন নিয়ে আলোচনা হয়। সেখানে কয়েকটি দলের সঙ্গে জোট করা নিয়ে আলোচনা হয়। তবে ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতাদের সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশকে (আপ বাংলাদেশ) জোটভুক্ত করার জন্য প্রস্তাব দেওয়ায় মাঝপথে আলোচনা থেমে যায়।
বৈঠকে উপস্থিত ৪০ নেতার মধ্যে মাত্র ৩ জন আপ বাংলাদেশের সঙ্গে জোট করার পক্ষে মত দেন। বাকিদের কেউ কেউ বিএনপির সঙ্গে জোট করতে চান। কেউ আবার আলাদাভাবে নির্বাচনের পক্ষে মত দিয়েছেন। তবে এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এছাড়া জামায়াতের সঙ্গে জোট করতে একেবারেই রাজি নন এনসিপি নেতারা। এ অবস্থায় অনেকে আশঙ্কা করছেন, জোট ইস্যুতে শেষ মুহূর্তে এনসিপি ভাঙনের মুখোমুখি হলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
এদিকে বৃহস্পতিবার এক অনুষ্ঠান শেষে পদত্যাগের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, ‘নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। পদত্যাগ করেই নির্বাচন করব। তিনি বলেন, এমন কোনো আইন নেই যে-উপদেষ্টা হলে নির্বাচন করা যাবে না। তবে নীতিগত কারণে উপদেষ্টা হিসাবে নির্বাচন করা ঠিক হবে না। কোন দল থেকে নির্বাচন করব-তা এখনো ঠিক করিনি।’
তিনি জানান, ‘ঘোষণা দিয়েছি নির্বাচন করব, তবে কোথা থেকে করব ঘোষণা দেইনি।’ তিনি জানান, শুধু দুজন ছাত্র উপদেষ্টা নন, আরও কয়েকজন উপদেষ্টা নির্বাচন করতে পারেন।
আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া আগে কুমিল্লার ভোটার ছিলেন। সম্প্রতি তিনি ঢাকা-১০ আসনের ভোটার হয়েছেন। এরপর থেকেই গুঞ্জন রয়েছে, তিনি হয়তো এই আসন থেকেই নির্বাচন করবেন। বিএনপি এই আসনে কোনো প্রার্থী এখনো ঘোষণা করেননি।
এর আগে ৯ নভেম্বর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘ঢাকা থেকেই নিশ্চিতভাবে নির্বাচন করব। এখন পর্যন্ত স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে অংশ নেওয়ার ইচ্ছে আছে। ১৪ আগস্ট সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আসিফ মাহমুদ বলেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই তিনি পদত্যাগ করবেন।
অপরদিকে ২৮ সেপ্টেম্বর এক অনুষ্ঠানে তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম জানান, ‘২ মাস ধরে আমি অনিশ্চয়তার মধ্যে আছি-আমি কবে পদ ছাড়ব, তা এখনো জানি না।’ ২৬ অক্টোবর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির এক অনুষ্ঠানে মাহফুজ আলম বলেন, ‘নভেম্বরেই শেষ হয়ে যাবে উপদেষ্টা পরিষদের সভা। এরপর নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব নেবে। নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর আর সম্ভবত কেবিনেট মিটিং বসে না।’ ওই বক্তব্যের পরপরই বিবৃতি দিয়েছে সরকার।
বিবৃতিতে বলা হয়, নভেম্বরে কেবিনেট ক্লোজ হয়ে যাওয়ার বিষয়টি সঠিক নয়। নির্বাচিত সরকারের হাতে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার আগ পর্যন্ত এই উপদেষ্টা পরিষদ দায়িত্ব পালন করে যাবে। অর্থাৎ নভেম্বরের পরও উপদেষ্টা পরিষদের সভা চলবে, সংস্কার কাজও থেমে থাকবে না।
এর আগে ৪ আগস্ট ফেসবুক পোস্টে মাহফুজ আলম বলেন, ‘এক-এগারোর পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে। পরে পোস্টটি সরিয়ে নেন তিনি। সম্প্রতি ফেসবুকে মাহফুজ আলম বলেন, ‘মজলুম জালিম হচ্ছে। ফ্যাসিবাদবিরোধীরা ফ্যাসিবাদী হচ্ছে। পুরো পরিস্থিতি হতাশার-ক্ষুব্ধতার।’
দায়িত্বশীলদের অনেকে বলছেন, সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে থেকে এ ধরনের পোস্ট দেওয়া যায় না। এছাড়া সূত্র বলছে, মাহফুজ আলমের এসব বক্তব্যের কারণে সরকারের নীতিনির্ধারক মহল কিছুটা বিব্রত।
এদিকে নেপথ্যে থেকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা কিছু ব্যক্তির সমন্বয়ে চলতি বছরের ৯ মে যাত্রা শুরু করে নতুন রাজনৈতিক দল ‘ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ (আপ বাংলাদেশ)’। দলটির নেপথ্যে রয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক বেশ কয়েকজন নেতা। ৮২ সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটিতে যার আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ এবং সদস্য সচিব হলেন আরেফিন মুহাম্মদ হিজবুল্লাহ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



