গোপাল হালদার, পটুয়াখালী : বঙ্গোপসাগরে সকল ধরনের মাছ শিকারে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা চললেও পটুয়াখালী সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরের চিত্র একেবারের ভিন্ন। পুরো উপকূল জুড়ে চলছে প্রকাশে মাছ শিকার। আর এ জন্য জেলেদের দিতে হচ্ছে মোটা অঙ্কের অর্থ।
মৎস্য বিভাগসহ সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করেই সমুদ্র এলাকা সংলগ্ন বাজার গুলোতে প্রকাশে চলছে সামুদ্রিক মাছের বিকিকিনি। এতে করে সাগরে মাছের উৎপাদন ও মজুত বৃদ্ধিতে সরকার বঙ্গোপসাগরে মাছ শিকারে যে ৬৫ দিনের নিশেধাজ্ঞা জারি করে তা অনেকটা কাগজে কলমেই সীমাবদ্ধ রয়েছে।
পটুয়াখালী কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত সংলগ্ন কুয়াকাটা পৌর ভবনের বিপরিতে অবস্থিত কুয়াকাটার প্রধান মাছ বাজার, যা স্থানীয় ভাবে মেয়র বাজার নামে পরিচিতি। এই মাছের বাজারেই সাগরে ধরা পরা বিভিন্ন মাছ ডাকের মাধ্যমে পাইকারী বিক্রি হয়। গত ২৬ জুন এবং ২৭ জুন এই মার্কেট ও আশ পাশের এলাকা ঘুরে দেখা যায় বিচিত্র এক চিত্র। সকাল থেকেই ভ্যান, অটোরিকশায় করে কর্কসীট আর প্লাস্টিকের ড্রামে করে আসতে থাকে বিভিন্ন প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ। এর মধ্যে লইট্যা এবং তুলার ডাডি মাছই বেশি। এ ছাড়া রুপচাঁদা, বৈরাগী, কোড়াল,রামসোস সহ অনান্য মাছের উপস্থিতিও চোখে পরেছে।
তবে ইলিশ মাছ একেবারেই কম। মাছ বাজারে ঢুকতেই চোখে পরে বিভিন্ন আড়তে প্রকাশে মাছের ডাক হচ্ছে। আর বিভিন্ন পাইকারারা তা কিনে নিচ্ছেন। সকাল থেকে রাত ৯ কিংবা ১০ টা পর্যন্ত নিয়মিত মাছ বিক্রি চললেও দুপুরের পর থেকে এসব মাছ ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাঠানো হয়। এ জন্য কর্কসীটে বরফ দিয়ে প্রস্তুত করা হয়। ট্রাক এবং বাসেই এসব মাছ বিভিন্ন এলাকায় পাঠানো হয়।
খোঁজ নিয়ে জানাযায়, মাছ শিকারে নিশেধাজ্ঞার এই সময় মাছ ধরা, বিক্রি ও পরিবহন প্রক্রিয়া নিরাপদ করতে নির্দিষ্ট একটি সিন্ডিকেট কে কোটি টাকা দিতে হয় জেলে, মাছ ব্যবসায়ী এবং আড়ৎদারদের। কুয়াকাটা মেয়র বাজারে এই প্রক্রিয়ার সমন্বয় করেন মাছ ব্যবসায়ী মোঃ নূর জামাল গাজী। নূর জামালের মালিকানাধীন মেসার্স গাজী ফিস থেকে এসব নিয়ন্ত্রন করা হয়। এবার প্রতিটি ট্রলার থেকে প্রতি ট্রিপে ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা করে নিচ্ছেন তিনি। পাশাপাশি তিনি নিজেই প্রশাসন, মৎস্য বিভাগ, নৌ পুলিশ, কোষ্টাগার্ড সদস্যদের ম্যানেজ করার দায়িত্ব নিয়েছেন।
এ বিষয় জানতে চাইলে অভিযুক্ত মোঃ নূর জামাল গাজী বলেন, ‘কাউকে কোন টাকা দেই না, চুরি চুরি করে মাছ ধরি,চুরি করে মাছ বেচি।’ তার কাছে সাংবাদিক সহ সকলের তালিকা থাকার কথা স্বীকার করেন নূর জামাল।
কুয়াকাটার মত একটি পর্যটন এলাকায় যখন প্রকাশ্যে মাছ শিকার এবং বিক্রি করা হয় তখন পুরো বিষয়টি উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তার কাছে অজানা।
কলাপাড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা বলেন, ‘ সর্বাক্ষনিক তো আমাদের পক্ষে পাহাড়া দেয়া সম্ভব নয়। সাগরে কোষ্টগার্ড আছে, নৌ পুলিশ আছে, নৌ বাহিনীর সদস্যরা আছেন। সকলেই আমরা কাজ করছি। এর পরও গত কয়েকদিন আবহাওয়া কিছুটা খারাপ এ কারনে হয়তো এমটি হয়েছে। আমি আজ অবারও বিষয়টি দেখছি। তবে মৎস্য বিভাগের সাথে নূর জামালের যোগযোগ নেই এবং তাকে তিনি ব্যক্তিগত ভাবে চেনেনা বলেও জানান এই মৎস্য কর্মকর্তা।
এদিকে পুরো বিষয়টি সম্পর্কে নিজের দপ্তর জরিত থাকার কথা অস্বীকার করে অভিযান সফল করতে আরও সক্রিয় ভাবে কাজ করার কথা বলেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. কামরুল ইসলাম।
এ বিষয় জানতে চাইলে কুয়াকাটা নৌ পুলিশের অফিসার ইনচার্জ দেলোয়ার হোসেন বলেন, ৬৫ দিনের নিশেধাজ্ঞায় নৌ পুলিশের কোন কাজ নেই। সাগরে মাছ ধরা বন্ধে কোষ্টগার্ড কাজ করবে, আর মাছ বিক্রি কিংবা পরিবহনে মৎস্য বিভাগ অভিযান পরিচালনা করবে, এটা তাদের দায়িত্ব।
এ বিষয় জানতে চাইলে নিজামপুর কোষ্টগার্ড স্ট্রেশন থেকে জানানো হয়, ৬৫ দিনের অবরোধ কর্মসূচী সফল করতে তারা নিয়মিত সচেতন করার পাশপাশি সাগরে অভিযান পরিচালনা করছেন। আর নিয়মিত মাছ ধরা ও বিক্রির বিষয়ে তাদের জানা নেই।
ইলিশের প্রজনন মওসুম, জাটকা সংরক্ষণ, সাগরে ৬৫ দিন মাছ শিকার বন্ধ সহ সরকারের নিশেধাজ্ঞা থাকা কালীন সময় গুলোতে নির্বিঘ্নে মাছ শিকার,বিক্রি ও পরিবহন করতে কলাপাড়া উপজেলায় গড়ে উঠেছেন একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। প্রতি মওসুমে জেলে ও মৎস্য ব্যসায়ীদের কাছ থেকে সকল পক্ষকে ম্যানেজ করতে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা চাঁদা তোলা হয় বলে একাধিক সূত্র থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
দেশে আর জঙ্গিবাদ ও মৌলবাদের উত্থান হবে না : র্যাবের মহাপরিচালক
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।