মহিউদ্দিন প্রধান, ঢাকা কলেজ প্রতিনিধি: ভোরের শ্যামল বাংলা এখন কুয়াশার চাদরে মোড়া। সকাল কিংবা সন্ধ্যায় ঘাসের সবুজ গালিচায় জমে থাকা বিন্দু বিন্দু শিশির কণা জানান দিচ্ছে শীতের তীব্রতা। প্রতি বছর শীত মৌসুমকে ঘিরে উৎসব-আমেজে ভরপুর হয়ে ওঠে ঢাকা কলেজ ক্যাম্পাস। কিন্তু ক্যাম্পাসে শীত উদ্যাপনের সেই চিরচেনা রূপ এ বছর চোখে পড়ছে না।
ইট-পাথরের এই শহরে শীত মানেই এক অন্যরকম অনুভূতি। বেলা বাড়ার সাথে সাথে শীতের ক্যাম্পাসের আঙ্গিনায় ভোরের পাখি আর শিক্ষার্থীদের কল কাকলিতে মুখরিত থাকতো সবসময়।
সকালে পূর্ব আকাশে সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই দেখা যায় বিভিন্ন চত্বরে ও মাঠে চায়ের চুমুকে বন্ধুদের সঙ্গে রোদ পোহানো ও আড্ডা। মাঝে মাঝে হুট করে একটা থেকে আরেকটা গাছের ডালে লাফালাফি, মারামারি ও খুনসুটিতে মেতে উঠে মুক্ত বানর। এ যেন বানরের অবাধ বিচরণ ভূমি। পাউরুটি বা বিস্কুটসহ বিভিন্ন খাবার দিয়ে শিক্ষার্থীরা আনন্দ খুঁজে এবং বসে আনার ব্যর্থ চেষ্টা করে। গাছের ডালে ও মাঠে উত্তাপহীন দুপুরে পাতি-কাকের সমাবেশ অন্য মাত্রা যোগ করে। রোদেলা সংক্ষিপ্ত দুপুর গড়িয়ে মাঘের হাড়-কাঁপানো উত্তরের হাওয়ায় বিকেলে ভুট্টো ভাইয়ের গরম গরম ছোলা, চপসহ নানান রকমের ভোজপুরী আর গোধূলি লগ্নে রাজ্জাক মামার টঙ্গের ধোঁয়া উঠা চায়ে আবাসিক ছাত্ররা মেতে ওঠে খোশগল্পে। শীত উপলক্ষে চলে ব্যাডমিন্টন, ভলিবলসহ নানান প্রতিযোগিতাপূর্ণ খেলাধুলা।
তবে এখন প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। মহামারি করোনার ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের ফলে সব আমেজ আজ যেন নাই হয়ে গেছে। হাজারো শিক্ষার্থীর পদচারণায় মুখর থাকা আঙিনায় কবরের নিস্তব্ধতা। শিক্ষার্থীশূন্য ক্যাম্পাস পরিণত হয়েছে বিরানভূমিতে। ভোরবেলা ক্যাম্পাস ছেয়ে থাকে ঘন কুয়াশায়। তবে কুয়াশার ধূম্রজাল মাড়িয়ে নিষ্প্রাণ ক্যাম্পাসে এখন আর চাদর মুড়িয়ে হাঁটাহাঁটি করে না কেউ তেমন। রাতে দেখা মেলে না খড়কুটো দিয়ে মাঠের কোণায় কিংবা হলের ছাদে গানের সঙ্গে আগুন জ্বালিয়ে আড্ডার দৃশ্য। ব্যাডমিন্টন খেলার স্থানও আজ ফাঁকা পড়ে আছে। শরীরে উষ্ণতার ছোঁয়া পেতে রাতভর ব্যাডমিন্টন খেলার দৃশ্য এখন আর চোখে পড়ে না তেমন। রাজ্জাক মামা, সামাদ মামা ও যুবকের টংয়ে চায়ের কাপে চামচের বিরতিহীন আওয়াজ শোনা যায় না। ভুট্টো ভাইয়ের দোকানে ছোলা, পুরি ও চপের জন্য সিড়িয়াল দিতে হয় না। মাঠের পাশে বেঞ্চিতে বসে ধোয়া উঠা চায়ে একাডেমিক পড়া, ছাত্র-রাজনীতিহ নানান বিষয়ে অমীমাংসিত আড্ডা জমে না।
ক্লাসের শেষে বা ফাঁকে ছোট ছোট গ্রুপে ক্রিকেট খেলার আয়োজন হয় না এখন নিষ্প্রাণ ক্যাম্পাসে। শিক্ষকদের কন্ঠেও তেমন ভেসে আসে না ক্লাসের আওয়াজ। অনলাইনের বিভিন্ন মাধ্যমে বিভিন্ন ডিপার্টমেন্ট সামর্থ অনুযায়ী ক্লাস সেড়ে নিচ্ছে। ক্লাস ও পড়াশোনার অনেক ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে।
অমিক্রনের কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। কিন্তু হলগুলো চালু রাখা হয়েছে। যারা হলে আছেন তারা অনিশ্চয়তার মধ্যে সময় পার করছেন। অনেকে ছুটি কাটাতে গ্রামের বাড়িতে গিয়েছেন। ফলে নিষ্প্রাণ ক্যাম্পাসে হলের ডাইনিংগুলো প্রায় নিভু নিভু অবস্থা।
দক্ষিণ ছাত্রবাসের ছাত্র মেহেদী হাসান জুমবাংলাকে বলেন, ‘ক্যাম্পাস প্রায় নিষ্প্রাণ। হল খোলা থাকার পরও এতো শুনশান নীরবতা কখনো হয়নি । অমিক্রনের কারণে সশরীরে ক্লাস বন্ধ। আক্রান্তের হার বাড়লে ছুটিও বাড়তে পারে। তাই অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে শিক্ষার্থীরা।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।