আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ‘ওকাভাঙ্গো ব্লু ডায়মন্ড’ এক বিখ্যাত হীরার নাম। ২০১৮ সালে আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলের দেশ বতসোয়ানার ওরাপা খনিতে পাওয়া যায় এটি। গত নভেম্বর মাসে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে প্রথমবারের মতো সর্বসাধারণের দেখার জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছিল হীরাটি। বতসোয়ানার ওকাভাঙ্গো বদ্বীপের নামে নাম রাখা হয়েছিল এর। ২০.৪৬ ক্যারেট ওজন, উজ্জ্বল নীল রং আর প্রায় নিখুঁত স্বচ্ছতার জন্য এটি খুবই বিরল হিসেবে বিবেচিত। হীরাটি আকারে পুরুষ্টু কাঠবাদামের সমান।
ওকাভাঙ্গো ব্লুর আকার ও রঙের হীরার দাম লাখ লাখ ডলার পর্যন্ত হয়। তবে শুধু মূল্যবান রত্ন হিসেবেই নয়, ভূতাত্ত্বিক গবেষণায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে নীল হীরার। এই হীরা থেকে পৃথিবী গ্রহটির গভীর অন্তঃপুর সম্পর্কেও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মেলে।
বতসোয়ানার সবচেয়ে বড় হীরা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ওকাভাঙ্গো ডায়মন্ড কম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমমেল্টা মাসিরে বললেন, ‘নীল হীরা স্বাভাবিকভাবেই বিরল। আর ২০ ক্যারেটের ওপর হলে তো অতি বিরল। এটি প্রায় শতভাগ খাঁটি, নিখুঁত হীরা।’
নৈতিক ও টেকসই হওয়ার দিক থেকেও বতসোয়ানার হীরা উৎপাদন শিল্প বিশ্বের অন্যদের জন্য দৃষ্টান্ত। সামগ্রিকভাবে জাতীয় অর্থনীতির পাশাপাশি দেশের যেসব এলাকার খনি থেকে হীরা তোলা হয়, সেখানকার অধিবাসীরাও উপকৃত হয় রপ্তানির অর্থ থেকে।
বতসোয়ানা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম হীরা উৎপাদক। ১৯৬৬ সালে স্বাধীনতা লাভের অল্প সময় পরই প্রত্যন্ত এক শহরে বড় এক হীরার মজুদ পাওয়া যায়। তখন থেকে হীরা দেশটির অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রেখে আসছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ করতে পারছে দেশটি।
নীল হীরা দিচ্ছে পৃথিবীর পেটের খবরও! ভূপৃষ্ঠের বহু গভীরে কী ঘটে চলেছে, কী কী উপাদানে সেখানকার একেকটি স্তর তৈরি তার ধারণা মেলে এ থেকে।
আমেরিকান মিউজিয়াম অব ন্যাচারাল হিস্ট্রির কিউরেটর ইমেরিটাস জর্জ হারলো বলেন, ‘ভূপৃষ্ঠের অত বেশি গভীরে যাওয়ার কোনো উপায় আমাদের নেই। হীরা সেখানেই গঠিত হয়। আর পৃথিবীর অন্তস্তলে যা-ই গঠিত হয়, তা সাধারণত সেখানকার স্বকীয় বৈশিষ্ট্য তুলে ধরে। এগুলো মহাকাশে পাঠানো অনুসন্ধানযানের মতোই। কোনো এক সময় এসব উপাদানের কিছু ভূপৃষ্ঠের ওপরের স্তরে উঠে আসে। তখনই আমরা এ নিয়ে গবেষণার সুযোগ পাই।’
জর্জ হারলো জানালেন, নীল হীরা পরীক্ষা করলে পৃথিবীর বহু গভীরে থাকা ম্যান্টেলের খনিজ ও অন্যান্য উপাদান সম্পর্কে জানা যায়। এর একটি হচ্ছে বোরন। এই উপাদানটি থেকেই আসে হীরার নীল আভা। মাটির অত গভীরে বোরন প্রবেশ করার একমাত্র উপায় হচ্ছে, ভূপৃষ্ঠ থেকে চুইয়ে চুইয়ে সেখানে যাওয়া। কাজেই হারলোর মতে, হীরা নিয়ে গবেষণা করা খুবই রোমাঞ্চকর বিষয়। ‘ভাবুন তো, ভূপৃষ্ঠ থেকে হাজার কিলোমিটার গভীরে, শতকোটি বা লাখ লাখ বছর আগে গঠিত হচ্ছে এই হীরাগুলো। সাধারণ মানুষের কাছে এটি মাথা ঘুরিয়ে দেওয়ার মতো। সুতরাং এটি শুধু সুন্দর আর বিরল নয়, দারুণ কৌতূহলোদ্দীপকও,’ বলেন এই মার্কিন বিশেষজ্ঞ।
সূত্র : বিবিসি
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।